সূচক ছয় হাজার পয়েন্টে ওঠার পর পুঁজিবাজারে অস্থিরতার অবসানের ইঙ্গিত পাওয়ার পর বাজার নিয়ে যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি নতুন বার্তা দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বাজার আরও ভালো হবে- এই আশ্বাস দিয়ে তিনি লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, নানা সময় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করার কারণেই বাজারে পতন দেখা দেয়।
২০১০ সালের মহাধসের এক দশক পর গত বছর করোনা পরিস্থিতির কঠিন সময়ে শিবলী রুবাইয়াতকে প্রধান করে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়।
২০২০ সালের ১৭ মে গঠন করা নতুন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক শিল্পসচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
তারা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ পুঁজিবাজারও ছিল বন্ধ। ছুটি শেষে ৫ জুলাই থেকে চালু হয় পুঁজিবাজার। এরপর এক বছরে পুঁজিবাজারে ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড।
এই এক বছরে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২ হাজার ১৬৯ পয়েন্ট। আর লেনদেন বেড়েছে বহুগুণ।
সাধারণ ছুটি শেষে ২০২০ সালের ৫ জুন প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ দিন গত ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
তবে কেবল দুই দিনের লেনদেনের পার্থক্যই পুরো কথাটা বলে না। মাঝে লেনদেন এক দিন ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি টাকার আশপাশে লেনদেন হয়েছে একাধিক দিন। টানা দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে নিয়মিতই। শাটডাউনকে ঘিরে গত সপ্তাহে সেটি দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
তবে এই এক বছরেও অস্থিরতা যে হয়নি, তা নয়। গত জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে টানা কয়েক মাস পুঁজিবাজার ছিল টালমাটাল। এর মধ্যে আবার গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় আতঙ্ক। ধস নামে পুঁজিবাজারে।
তবে আগের কমিশনের মতো বর্তমান কমিশন করোনায় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার পক্ষে না। আর লকডাউনে ব্যাংক খোলা রাখার পর পুঁজিবাজারেও লেনদেন চালু রাখার ঘোষণা দেয় তারা। ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। বিধিনিষেধের দুই মাসে পুঁজিবাজার ওঠে নতুন উচ্চতায়। সূচক বাড়ে এক হাজার পয়েন্টের বেশি, যেটি এখন ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে।
পুঁজিবাজারের অবস্থান এখন ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন বাজারের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্ট।
গবে গত ৩০ মে পুঁজিবাজারের সূচক ৩৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্ট উঠার পর গোটা একটি মাস সূচক সেখানে টিকে থাকা নিয়ে লড়াই করেছে। এর মধ্যে আবার শাটডাউনে পুঁজিবাজার চালু থাকা নিয়ে শঙ্কার কারণে তৈরি হয় নতুন অস্থিরতা। তবে সেটিও কেটে গেছে।
এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো খবর আসছে দেশের অর্থনীতির জন্য। চীন ও ভারত থেকে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল হয়ে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশি বিখ্যাত একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি।
পুঁজিবাজারে অবণ্টিত মুনাফার ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যবহারের সিদ্ধান্তও হয়েছে। এ জন্য একটি তহবিল গঠনের জন্য তৈরি হয়েছে নীতিমালা। এরই মধ্যে হয়ে গেছে প্রজ্ঞাপন। এই অর্থের ৪০ শতাংশ দিয়ে সরাসরি শেয়ার কেনা হবে আর ৫০ শতাংশ দেয়া হবে মার্জিন ঋণ হিসেবে।
এই অর্থের বিনিময়ে কোনো সুদ দিতে হবে না। ফলে কম সুদে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের সরবরাহ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএসইসি আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে আইপিও শেয়ার সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন। এতে কেবল আইপিও আবেদনের জন্য বিও হিসাবগুলো অকার্যকর হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এই টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ হতে পারে।
এ ছাড়া নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর বোনাস শেয়ার দেয়ার নিষেধাজ্ঞা, বন্ড মার্কেন্টকে শক্তিশালী করা, ব্যাংকের পারপিচুয়াল বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, এসএমই বোড বা ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেয়াও অন্যতম।
এর মধ্যে ব্যাংক খাত নিয়েও তৈরি হয়েছে নতুন আশা। গত বছর করোনা সংক্রমণের পর চাপে পড়া ব্যাংকগুলো নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। মহামারির মধ্যেও তাদের আয় বাড়ছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসের মুনাফার যে হিসাব বের হয়েছে, তাতে একটি ব্যাংকের আয়ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেনি, বরং কোনো কোনোটির বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, কোনোটির দ্বিগুণের কাছাকাছি।
উৎপাদন খাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিক্রি ও শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে বহু কোম্পানির। এর মধ্যে বিএসইসি নিয়েছে আরেক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেগুলোকে উৎপাদনে আনার চেষ্টা চলছে।
এরই মধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও রিংশাইন টেক্সটাইলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। আরও একটি কোম্পানি উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে যে কয়টি কোম্পানিকে উৎপাদনে আনা সম্ভব নয়, সেগুলোর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্ততিও নেয়া হয়েছে।
কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নানা কারণে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়া চারটি কোম্পানিকে একদিনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি কোম্পানিকেও ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। যেগুলো সুশাসনে উন্নতি করতে পারবে না বা মুনাফায় ফিরতে পারবে না, সেগুলো অবসায়ন করে মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজার আপাতত চার দিনের ছুটিতে আছে। জুন ক্লোজিংয়ের পর দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়নি পুঁজিবাজারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাটডাউনে শুক্র ও শনিবারের পাশাপাশি পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে রোববারও।
টানা চার দিনের ছুটির তৃতীয় দিন শনিবার বিএসইসি চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ধৈর্য ধারণের বার্তা দিয়েছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যানের বার্তা
তিনি বিনিয়োগকারীদেরকে অস্থিরতায় না ভোগে ধৈর্য ধারণের পরামর্শই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আজই শেয়ার বিক্রি করতে হবে এমন ধারণার কারণে সূচক পড়ে যাওয়ার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যদি একটু ধৈর্য ধরেন তাহলে কিন্তু সমস্যা হয় না।’
আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করা শেয়ার যে মুনাফার আশাতেই কেউ না কেউ কেনেন, সেটির স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘সম্মানিত বিনিয়োগকারীদের এখানে বুঝতে হবে যে আমি যখন পেনিকড হয়ে শেয়ার বিক্রি করি তার ক্রেতাটা কে?
‘ক্রেতা যেহেতু আছে তাহলে আমি কেন বিক্রি করছি লস করে? আমাকে তো লস করে এক্ষণি বিক্রি করার দরকার নাই।’
দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে লোকসানের কারণ নেই বলেও মনে করেন শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘অমি তো একটু অপেক্ষা করতে পারি। অপেক্ষা করে আমি সময়মতো বিক্রি করব লাভে। এইটুক ধৈর্য ধরতে হবে। এবং এই মার্কেটটা লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট এর জায়গা এবং এখানে কিনে লসে বিক্রি করার কথা না।’
‘কিনে একটু অপেক্ষা করবেন, যেইদিন প্রাইস বাড়বে সেইদিন বিক্রি করবেন। আপনি কেন অন্যের কথায় বা একটা সিচুয়েশনে আজকেই বিক্রি করতে হবে?’
বিনিয়োগকারীরের লোকসানে কষ্ট
বিনিয়োগকারী ভয় পেয়ে লোকসান করলে কষ্ট লাগে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, ‘এখানে কিন্তু ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ইনশাল্লাহ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট অনেক সুস্থ হবে ও অনেক ভালো হবে।’
পুঁজিবাজারে ঋণ নিয়ে যারা শেয়ার কেনেন, শেয়ারের দাম কমলে তাদেরকে যেন বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতে না হয়, সে জন্য ঋণের মার্জিনটা বাড়িয়ে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
গত এপ্রিলের শুরুতে লকডাউনকে কেন্দ্র করে বাজারে ধস নামার পর ১০০ টাকায় ৮০ টাকা মার্জিন ঋণ নেয়া যাবে বলে জানায় বিএসইসি। এর আগে তা ছিল ১০০ টাকায় ৫০ টাকা।
তিনি আবারও ভীত না হওয়ার কথা বলেন, ‘সুতরাং ফোর্স সেল এর কোনো ভয় নেই। তাই পেনিক সেল না হলেই হলো এখন।’
‘মার্কেট ভালো হবেই ইনশাল্লাহ’-এ কথা বলেই তার বার্তা শেষ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
আরও পড়ুন:উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একটি আক্রমণাত্মক ড্রোন পরীক্ষা তদারকি করেছেন এবং দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)-এর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চালকবিহীন ড্রোনটি উড্ডয়নের পর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়া ‘কুমসং-সিরিজের কৌশলগত আক্রমণ ড্রোনের অসাধারণ যুদ্ধক্ষমতা’ প্রমাণ করেছে এবং কিম ‘ব্যাপক সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন।
কিম বলেছেন, ড্রোনগুলো প্রধান সামরিক সম্পদ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিপিআরকে সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে এটি শীর্ষ অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি নতুনভাবে চালু হওয়া এআই প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি ড্রোন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্লেষক হং মিন বলেছেন, কিম ড্রোন প্রযুক্তিকে দেশের ‘মহাশক্তি হিসেবে মর্যাদা’ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
ড্রোন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কারণ এগুলো কম খরচে বেশি কার্যকর হুমকি তৈরি করে; স্বয়ংক্রিয় মিশন সম্পাদন, নির্ভুলতা ও প্রাণঘাতী ক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাপক উৎপাদনের উপযোগিতা এবং কৌশলগত নমনীয়তা বাড়ায়।
রাশিয়া থেকে শিক্ষা:
পিয়ংইয়ং গত বছর প্রথমবার আক্রমণাত্মক ড্রোন উন্মোচন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সক্ষমতা রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাড়তে থাকা মৈত্রী সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা উত্তর কোরীয় সেনারা আধুনিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিম বলেছেন, এআই প্রযুক্তি ড্রোনগুলোকে এমনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করে, যাতে জিপিএস বা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলেও পূর্বপ্রশিক্ষিত অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের ওপর জিপিএস জ্যামিং পরীক্ষা চালায়, যার ফলে বেশ কিছু জাহাজ ও বেসামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লিম আরও বলেন, রাশিয়ার প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০২৪ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ায় এআই চালিত প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছে এবং গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম সরবরাহ করেছে।
সিউল জানিয়েছে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ উত্তর কোরীয় সৈন্য নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।
নওগাঁর পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে ১৬ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় নওগাঁর পত্নীতলা ১৪ বিজিবির ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এরআগে ভোরে উপজেলার শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হলে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নাটোর জেলার মোতালেব শেখ (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৫), মজনু বিশ্বাস (৪৮), নয়ন খাঁ (২৫), মুকুল শেখ (২৫), মৃধুল শেখ (২০), সামির (১১), বিনা খাতুন (২৯), মিম (৮), মরিয়ম খাতুন (১০), রোজিনা খাতুন (১৮), মিরা খাতুন (৮ মাস), এলিনা খাতুন (২৮), জান্নাতুল সরকার (১০), জোছনা বেগম (৫০) এবং পাবনা জেলার মিরাজ শেখ (১৮)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ভোরে পত্নীতলা ১৪ বিজিবির শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করে। পরে বিজিবির টহল দল ঘুরকী গ্রামের পাকা রাস্তা সংলগ্ন চা দোকানের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, পাঁচ শিশু ও চার জন নারী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়- আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। আটকের পর তাদেরকে পত্নীতলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের (ইউপিইউ) প্রশাসনিক কাউন্সিল (সিএ)-এ বাংলাদেশ পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানায়।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ইউপিইউ কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশ ১৫৭ ভোটের মধ্যে ৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। ১০ সদস্যের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে দেশটি। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের মত চার বছরের জন্য কাউন্সিলের সদস্যপদ পেল বাংলাদেশ।
এর আগের মেয়াদে বাংলাদেশ সীমিত ভূমিকা রেখেছিল। ২০২১ সালের নভেম্বরে মাত্র একটি সরাসরি বৈঠকে অংশ নেয়, বাকি কার্যক্রমে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। তাই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ কম ছিল।
এ কারণে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, সীমিত অংশগ্রহণ পুনর্নির্বাচনের পথে বাধা হতে পারে। তবে সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এ ফলাফলকে ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
তিনি আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে, চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের উপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কেও ভিত্তিতে সর্বদা "ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।"
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, এই ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশী জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ সহ ৬০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদেরও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পক্ষে নয় বিএনপি। এটার কোনো ভিত্তি নেই। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে এবং সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে। যেকোনো বিষয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হবে মনে করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার মধ্যে কর্মসূচি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। রাজপথে নামলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি কোনো ইস্যুতেই আন্দোলনে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সময় বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেব। কিন্তু এজেন্ডা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অনুমোদিত ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে সরবরাহ সীমিত থাকায় গত দুই দিনে মোট ৫৬.২৫ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৭.৪৬ মেট্রিক টন এবং বৃহস্পতিবার ১৮.৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন অফিসার সজীব সাহা, মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে রপ্তানির জন্য নির্বাচিত প্রতিটি ইলিশ স্বাস্থ্যসম্মত, রোগমুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য। এই পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে প্রতিটি চালান নিরাপদ ও উচ্চমানের। এছাড়া সরবরাহ সীমিত থাকায় দুই দিনের রপ্তানি অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় কম হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন ইলিশ রপ্তানি বজায় রাখা।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩,৯৫০ টনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাই রপ্তানি হয়েছে ৫৩২.৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয় ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিশের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, দুর্গাপূজা ও আসন্ন উৎসবের কারণে ইলিশের চাহিদা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ বজায় রাখতে। তবে মাছের সীমিত পরিমাণ রপ্তানিতে কিছুটা বাধা থাকলেও আমাদের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
মন্তব্য