২০২০ সালে চাপে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংক চলতি বছরের ছয় মাসে কেবল ঘুরে দাঁড়িয়েছে এমন নয়, প্রায় দেড় গুণ আয় করেছে। শতকরা হিসেবে আয়ে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি গত কয়েক বছর ধরেই ক্রমাগত ভালো করতে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংক।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় বছর চলাকালে চাপের মধ্যেও ব্যাংকগুলো এই দুটি ব্যাংকের মতোই ভালো করছে।
বছরের প্রথম ছয় মাসে এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে বেশিরভাগ ব্যাংক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো আয় করেছে।
এই চমক অবশ্য গত বছর করোনাকালেও দেখা গেছে। ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটিতে ৬৬ দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকগুলোর আয়ে ধস নামে কি না, তা নিয়ে কথা উঠে।
তবে শেষ পর্যন্ত মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে চমক দেখায় ব্যাংকিং খাত। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এবার বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ দিয়েছে অনেকটাই আশাতীত।
চলতি বছর পুঁজিবাজারে প্রথম প্রান্তিকের যে ঘোষণা এসেছে, সেখানেও দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এর হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি ব্যাংকগুলো। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তগুলো এই হিসাব প্রকাশ করার জন্য ৩০ কার্যদিবস সময় নেবে।
তবে ব্যাংকগুলো জুন ক্লোজিং শেষে অনিরীক্ষিত যে হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করেছে, তা থেকে কিছু তথ্য সব সময়ই পাওয়া যায়।
নিউজবাংলা ১৯টি ব্যাংকের অর্ধবার্ষিকী মুনাফার হিসাব পেয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, আর একটি তালিকাভুক্ত হয়নি এখনও। আর একটি বিদেশি ব্যাংক।
এই ১৬টি ব্যাংকের সবগুলোই এবার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি আয় করেছে।
শতকরা হিসেবে আয়ের প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে অতালিকাভুক্ত মেঘনা ব্যাংক। এই ব্যাংকটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ মুনাফা করেছে।
আর মুনাফায় প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ কোটি টাকা বেশি আয় করেছে তারা। আর টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে তারাই। এক হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিচালন মুনাফা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়।
প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। বছর শেষে ব্যাংকারদের দেয়া ইনসেনটিভ বোনাসও কিছু ব্যাংক পরিচালন মুনাফার মধ্যে হিসাব করে থাকে।
কোন ব্যাংকের কত মুনাফা
মেঘনা ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৭০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল মাত্র ১২ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮৩ শতাংশ।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৯১ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৬৪.৮৩ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংক জুন শেষে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৮৬ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৬১.২৯ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৪৩ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৪৭.৩২ শতাংশ।
সাউথইস্ট ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৮২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩৪২ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৪০.৯৩ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়া গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩৫১ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৩৭.৮৯ শতাংশ।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ২২৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৭৫ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ২৮.৫৭ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৫০৫ কোটি টাকা। গত বছর একই সময় যা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.২৫ টাকা।
ডাচ বাংলা ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৫০৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৪১৭ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ২০.৮৬ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংক বছরের ছয় মাসে মুনাফা করেছে ৩০৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৬৩ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১৫.২০ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩০১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৬২ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১৪.৮৮ শতাংশ।
সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৮০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৭০ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১৪.২৮ শতাংশ।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ২৮০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৪৭ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১৩.৩৬ শতাংশ।
এনসিসি ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩১৫ কোটি টাকা যা গত বছর একই সময় ছিল ২৯০ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৮.৬২ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৪০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩১৭ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৭.২৫ শতাংশ।
মধুমতি ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ১২৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১২৪ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ২.৪১ শতাংশ।
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩১০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩০৫ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১.৬৩ শতাংশ।
বরাবরের মতো ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফার শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে ইসলামী ব্যাংক। গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ১০২০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১০০৭ কোটি টাকা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১.২৯ শতাংশ।
বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো পাকিস্তানি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তানও দেখিয়েছে চমক। তারা অর্ধবার্ষিক হিসাবে মুনাফা করেছে ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। গত বছর এই সময় লোকসান ছিল ২২ কোটি টাকা
ব্যাংকাররা যা বলছেন
কঠিন পরিস্থিতিতেও ব্যাংকিং খাত কীভাবে ভালো করছে তার কারণ জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ নেই, ঋণ বিতরণ কমে গেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে জুন পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রভিশনিংয়ে ব্যাংকগুলো কিছুটা ছাড় পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আয়ে।’
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আরফান আলী বলেন, ‘ব্যাংকের ব্যবসা যে ভালো হচ্ছে, এ রকম না। ডিপোজিট এখন পর্যাপ্ত রয়েছে। কম রেটেও পাওয়া যাচ্ছে। ফিক্সড ডিপোজিটে ইন্টারেস্ট রেট লো। করোনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সুবিধার কারণে ব্যাংকগুলো বাড়তি প্রভিশনিং (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) করে নাই। এ কারণে মুনাফা বাড়তি দেখাতে পেরেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল কারণ হলো আমানতে সুদহার অনেক কম। ঋণ বিতরণ একদম হচ্ছে না, সেটা নয়। যাতায়াত ভাতা, আনুষঙ্গিক খরচ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এগুলো কমিয়েছে। তবে ব্যাংকের ব্যয় যে খুব কমেছে, সেটা নয়।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে। কারণ, এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
তারেক রহমান বলেন, বিদেশি স্বার্থ নয়, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত, পাকিস্তান কিংবা মিয়ানমার নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী। এসব শ্রমজীবীরাই এ দেশের প্রাণ। উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ তারাই। মেহনতি মানুষকে বঞ্চিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও আজ পর্যন্ত জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না।
‘বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো নেতাকর্মীকে বিদেশে পালিয়ে যেতে হয়নি। কারণ, আমরা জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য’- বললেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সর্বত্র শ্রমিকরা এখনো নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না।
সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগণের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার, তেমনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য।’
অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের একটা অংশ সংস্কার ও নির্বাচন মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এটা সঠিক পথ নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’
এর আগে বেলা ২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশ ঘিরে বেলা ১২টা থেকে রাজধানী এবং এর আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শ্রমিক নেতারা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এতে নয়াপল্টন এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নেতাকর্মী-সমর্থকদের জমায়েত ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতি সমাবেশটি রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে।
সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। রঙিন টুপি, টি-শার্ট, ব্যানার ও ঢোল নিয়ে উপস্থিত হন শ্রমিক নেতারা। তাদের কন্ঠে স্লোগান ওঠে-‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’। শ্রমিকদের এ সার্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে, দিতে হবে’ এ স্লোগানও উচ্চারিত হয়।
সমাবেশস্থলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মজিবুর রহমান সারওয়ার, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
গত এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১০১টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৪ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে আটটি, শিক্ষা বিষয়ে সাতটি, প্রতারণা বিষয়ে ১০টি, খেলাধুলা বিষয়ে ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। মার্চ মাসে ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছিল।
গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এসব ঘটনায় তথ্য কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি ১৩৮টি। এছাড়া ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০৫টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৩টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৮০টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৬টি এবং বিকৃত হিসেবে ৪৮টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে দুইটি।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুক পেইজে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সংখ্যার হিসেবে যা ২৭৬টি। এছাড়া ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি, থ্রেডসে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৪টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে। সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখতে পেয়েছে যে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, এপ্রিলে ২৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও, যা চলতি বছরের মাসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে তিনটি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুইটি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুইটি, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি, শেখ বশিরউদ্দীনকে জড়িয়ে একটি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার আরও জানায়, এপ্রিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপিকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ১৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে একটি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দুইটি এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নয়টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি এবং যুবদলকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে জড়িয়ে গত মাসে তিনটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে দুইটি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে তিনটি, সারজিস আলমকে জড়িয়ে দুইটি, নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ছয়টিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে যে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ১৯টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে তিনটি।
ফিলিস্তিনের গাজায় 'চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে' বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়া হয়। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রিউমার স্ক্যানার এপ্রিলে এ সংক্রান্ত অন্তত ৩৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। গেল মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ঢাকায় ২৬ এপ্রিল সুন্নি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৫৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৬২টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শ্রমিকদের আগের অবস্থায় রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। এজন্য তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আশু করণীয় নিয়ে যাত্রা শুরু করা। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে গড়বো এ দেশ নতুন করে’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মে দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ৫ জন শ্রমিকের পরিবারের হাতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাংবোর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সে আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকল গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
এবারের মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য-‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।
মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়।
সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য।
তবে শ্রেণি-বৈষম্য এখনও পুরোপুরি দূর না হলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।
এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রম অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ণে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন ২১ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তারা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে :
গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি) এর ২০তম সভার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। সিদ্ধান্তসমূহ হচ্ছে- ‘যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ এর ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা না হলে-মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্মারকে বলা হয়, মহান মে দিবসে সকল কারখানা/প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শ্রম শাখার উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ স্মারক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমিয়েছে সরকার। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা কমিয়ে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন এ দাম বুধবার দিনগত মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ডিজেলের বিক্রয়মূল্য প্রতি লিটার ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা, কেরোসিন ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা এবং অকটেন ১২৬ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২৫ টাকা, পেট্রোল ১২২ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২১ টাকায় পুনঃনির্ধারণ/সমন্বয় করা হয়েছে। যা ১ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এ জন্য ‘জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা’র আলোকে মে মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়িয়ে বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ মূল্য মার্চ ও এপ্রিল মাসেও বহাল ছিল।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে একটি সিম্পোজিয়াম আয়োজন করছে বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম)। এতে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও গবেষকরা। আগামী শনিবার (৩ মে) বিকাল ৩টায় ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার অডিটরিয়ামে এই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী মাজেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আফটার দ্য মনসুন আপরাইজিং : দ্য মিডিয়া ল্যান্ডস্ক্যাপ’ শীর্ষক এই সিম্পোজিয়ামটি তিনটি সেশনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম সেশনে বিজেআইএম প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর অর্জনের একটি সারসংক্ষেপ ও পরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।
দ্বিতীয় সেশনে বিজেআইএমের একজন সদস্যের পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে একটি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনীতি, কূটনীতি, ভবিষ্যৎ, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে যে কোনো প্রশ্ন করা যাবে।
তৃতীয় সেশনে দেশের নেতৃত্বস্থানীয় সাংবাদিক, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা হবে। এতে অংশ নেবেন- প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর প্রতিনিধি সেলিম সামাদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন, ইরাবতী ইংরেজির প্রতিবেদক মুক্তাদির রশিদ, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম, বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান গবেষক এম আবুল কালাম আজাদ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওমর ফারুক।
সিম্পোজিয়ামে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সর্বসাধারণ মানুষের যে কেউ অংশ নিতে পারবে। তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় আগ্রহীদের দ্রুত নাম, বয়স, পেশা ও যোগাযোগ নম্বরসহ [email protected]এ প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে।
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কক্সবাজার হয়ে জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডর’-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত মানবিক করিডর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।”
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।’
তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকট চলছে।
দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা।
প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, ‘এছাড়াও, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ।
শফিকুল আলম বলেন, এই রুট ব্যবহার করে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদানে সম্মত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে, রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।’
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বের বড় কোনো শক্তি এই করিডরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা বলে তিনি দাবি করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে আমরা দেখেছি, যা এখনো চলছে। এ ধরণের প্রচারণাও তার ব্যতিক্রম নয়।’
মন্তব্য