সূচক ছয় হাজার পয়েন্টে ওঠার পর পুঁজিবাজারে অস্থিরতার অবসানের ইঙ্গিত পাওয়ার পর বাজার নিয়ে যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি নতুন বার্তা দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বাজার আরও ভালো হবে- এই আশ্বাস দিয়ে তিনি লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, নানা সময় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করার কারণেই বাজারে পতন দেখা দেয়।
২০১০ সালের মহাধসের এক দশক পর গত বছর করোনা পরিস্থিতির কঠিন সময়ে শিবলী রুবাইয়াতকে প্রধান করে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়।
২০২০ সালের ১৭ মে গঠন করা নতুন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক শিল্পসচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
তারা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ পুঁজিবাজারও ছিল বন্ধ। ছুটি শেষে ৫ জুলাই থেকে চালু হয় পুঁজিবাজার। এরপর এক বছরে পুঁজিবাজারে ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড।
এই এক বছরে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২ হাজার ১৬৯ পয়েন্ট। আর লেনদেন বেড়েছে বহুগুণ।
সাধারণ ছুটি শেষে ২০২০ সালের ৫ জুন প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ দিন গত ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
তবে কেবল দুই দিনের লেনদেনের পার্থক্যই পুরো কথাটা বলে না। মাঝে লেনদেন এক দিন ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি টাকার আশপাশে লেনদেন হয়েছে একাধিক দিন। টানা দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে নিয়মিতই। শাটডাউনকে ঘিরে গত সপ্তাহে সেটি দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
তবে এই এক বছরেও অস্থিরতা যে হয়নি, তা নয়। গত জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে টানা কয়েক মাস পুঁজিবাজার ছিল টালমাটাল। এর মধ্যে আবার গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় আতঙ্ক। ধস নামে পুঁজিবাজারে।
তবে আগের কমিশনের মতো বর্তমান কমিশন করোনায় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার পক্ষে না। আর লকডাউনে ব্যাংক খোলা রাখার পর পুঁজিবাজারেও লেনদেন চালু রাখার ঘোষণা দেয় তারা। ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। বিধিনিষেধের দুই মাসে পুঁজিবাজার ওঠে নতুন উচ্চতায়। সূচক বাড়ে এক হাজার পয়েন্টের বেশি, যেটি এখন ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে।
পুঁজিবাজারের অবস্থান এখন ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন বাজারের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্ট।
গবে গত ৩০ মে পুঁজিবাজারের সূচক ৩৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্ট উঠার পর গোটা একটি মাস সূচক সেখানে টিকে থাকা নিয়ে লড়াই করেছে। এর মধ্যে আবার শাটডাউনে পুঁজিবাজার চালু থাকা নিয়ে শঙ্কার কারণে তৈরি হয় নতুন অস্থিরতা। তবে সেটিও কেটে গেছে।
এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো খবর আসছে দেশের অর্থনীতির জন্য। চীন ও ভারত থেকে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল হয়ে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশি বিখ্যাত একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি।
পুঁজিবাজারে অবণ্টিত মুনাফার ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যবহারের সিদ্ধান্তও হয়েছে। এ জন্য একটি তহবিল গঠনের জন্য তৈরি হয়েছে নীতিমালা। এরই মধ্যে হয়ে গেছে প্রজ্ঞাপন। এই অর্থের ৪০ শতাংশ দিয়ে সরাসরি শেয়ার কেনা হবে আর ৫০ শতাংশ দেয়া হবে মার্জিন ঋণ হিসেবে।
এই অর্থের বিনিময়ে কোনো সুদ দিতে হবে না। ফলে কম সুদে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের সরবরাহ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএসইসি আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে আইপিও শেয়ার সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন। এতে কেবল আইপিও আবেদনের জন্য বিও হিসাবগুলো অকার্যকর হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এই টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ হতে পারে।
এ ছাড়া নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর বোনাস শেয়ার দেয়ার নিষেধাজ্ঞা, বন্ড মার্কেন্টকে শক্তিশালী করা, ব্যাংকের পারপিচুয়াল বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, এসএমই বোড বা ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেয়াও অন্যতম।
এর মধ্যে ব্যাংক খাত নিয়েও তৈরি হয়েছে নতুন আশা। গত বছর করোনা সংক্রমণের পর চাপে পড়া ব্যাংকগুলো নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। মহামারির মধ্যেও তাদের আয় বাড়ছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসের মুনাফার যে হিসাব বের হয়েছে, তাতে একটি ব্যাংকের আয়ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেনি, বরং কোনো কোনোটির বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, কোনোটির দ্বিগুণের কাছাকাছি।
উৎপাদন খাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিক্রি ও শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে বহু কোম্পানির। এর মধ্যে বিএসইসি নিয়েছে আরেক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেগুলোকে উৎপাদনে আনার চেষ্টা চলছে।
এরই মধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও রিংশাইন টেক্সটাইলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। আরও একটি কোম্পানি উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে যে কয়টি কোম্পানিকে উৎপাদনে আনা সম্ভব নয়, সেগুলোর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্ততিও নেয়া হয়েছে।
কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নানা কারণে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়া চারটি কোম্পানিকে একদিনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি কোম্পানিকেও ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। যেগুলো সুশাসনে উন্নতি করতে পারবে না বা মুনাফায় ফিরতে পারবে না, সেগুলো অবসায়ন করে মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজার আপাতত চার দিনের ছুটিতে আছে। জুন ক্লোজিংয়ের পর দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়নি পুঁজিবাজারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাটডাউনে শুক্র ও শনিবারের পাশাপাশি পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে রোববারও।
টানা চার দিনের ছুটির তৃতীয় দিন শনিবার বিএসইসি চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ধৈর্য ধারণের বার্তা দিয়েছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যানের বার্তা
তিনি বিনিয়োগকারীদেরকে অস্থিরতায় না ভোগে ধৈর্য ধারণের পরামর্শই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আজই শেয়ার বিক্রি করতে হবে এমন ধারণার কারণে সূচক পড়ে যাওয়ার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যদি একটু ধৈর্য ধরেন তাহলে কিন্তু সমস্যা হয় না।’
আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করা শেয়ার যে মুনাফার আশাতেই কেউ না কেউ কেনেন, সেটির স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘সম্মানিত বিনিয়োগকারীদের এখানে বুঝতে হবে যে আমি যখন পেনিকড হয়ে শেয়ার বিক্রি করি তার ক্রেতাটা কে?
‘ক্রেতা যেহেতু আছে তাহলে আমি কেন বিক্রি করছি লস করে? আমাকে তো লস করে এক্ষণি বিক্রি করার দরকার নাই।’
দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে লোকসানের কারণ নেই বলেও মনে করেন শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘অমি তো একটু অপেক্ষা করতে পারি। অপেক্ষা করে আমি সময়মতো বিক্রি করব লাভে। এইটুক ধৈর্য ধরতে হবে। এবং এই মার্কেটটা লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট এর জায়গা এবং এখানে কিনে লসে বিক্রি করার কথা না।’
‘কিনে একটু অপেক্ষা করবেন, যেইদিন প্রাইস বাড়বে সেইদিন বিক্রি করবেন। আপনি কেন অন্যের কথায় বা একটা সিচুয়েশনে আজকেই বিক্রি করতে হবে?’
বিনিয়োগকারীরের লোকসানে কষ্ট
বিনিয়োগকারী ভয় পেয়ে লোকসান করলে কষ্ট লাগে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, ‘এখানে কিন্তু ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ইনশাল্লাহ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট অনেক সুস্থ হবে ও অনেক ভালো হবে।’
পুঁজিবাজারে ঋণ নিয়ে যারা শেয়ার কেনেন, শেয়ারের দাম কমলে তাদেরকে যেন বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতে না হয়, সে জন্য ঋণের মার্জিনটা বাড়িয়ে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
গত এপ্রিলের শুরুতে লকডাউনকে কেন্দ্র করে বাজারে ধস নামার পর ১০০ টাকায় ৮০ টাকা মার্জিন ঋণ নেয়া যাবে বলে জানায় বিএসইসি। এর আগে তা ছিল ১০০ টাকায় ৫০ টাকা।
তিনি আবারও ভীত না হওয়ার কথা বলেন, ‘সুতরাং ফোর্স সেল এর কোনো ভয় নেই। তাই পেনিক সেল না হলেই হলো এখন।’
‘মার্কেট ভালো হবেই ইনশাল্লাহ’-এ কথা বলেই তার বার্তা শেষ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
আরও পড়ুন:দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৪ আগস্ট মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে সিআইডি। বিষয়টি সিআইডি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, মামলা রুজুর পর সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি। পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। এভাবে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে একটি মিটিং করে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই। সিআইডি জনাতে পারে, ওই মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মার্চে সিআইডিকে অনুমতি দেয়।
এসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানে শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। অন্যান্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সিআইডি বিজ্ঞ আদালতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯১ জনের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির শুনানি ধার্য ছিল। অধিকাংশ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার আদেশ দেন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টস ভবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কেমিক্যাল ভবনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে। পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারলেও এখনো রাসায়নিকের গুদামে প্রবেশ করা যায়নি। এই অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সকল লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা এবং তার পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যে কারখানা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি অভিযান এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে এসব কার্যক্রম করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি। যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও গার্মেন্টস দুই দিকেই আগুন দেখেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার নিচ তলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন চার তলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রাসায়নিকের গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকে রাসায়নিকের গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, এই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই। যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিন তলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচ তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচ তলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক
অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শোক
মিরপুরে আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শোকবার্তা দেন। শোকবার্তায় তারেক রহমান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার দোয়া করেন।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। যাতে অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান দায়ীদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনদের হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিজিবি জানায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ণ বিওপির আওতাধীন এলাকায় অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। পরে গত সোমবার দুপুরে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করেন পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ।
রাঙামাটির বিলাইছড়িতে নদীতে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ হওয়ার দুঘণ্টা পর স্থানয়ীরা মাছের জাল দিয়ে নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত নারী হলেন লতা মার্মা (৩৩)। তিনি কেংড়াছড়ি গ্রামের মিলন কান্তি চাকমার স্ত্রী। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিলাইছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত মানস বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে কেংড়াছড়ি থেকে নৌকাযোগে বিলাইছড়ি বাজার আসার পথে কেরণছড়ি এলাকায় এসে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মাছের জাল দিয়ে তল্লাশির পর বেলা সারে এগারটায় তার মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতের স্বামী মিলন কান্তি চাকমা জানিয়েছেন তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
মন্তব্য