মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে নামার পর মালিকপক্ষ থেকে মজুরির বাইরে নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবি করে, তবে সেগুলো ঠিকমতো শ্রমিকরা পান না বলেই জানা যাচ্ছে। এবার জানা গেল, মালিকদের মতো শ্রমিকদের ঠকাচ্ছেন তাদেরই নেতারা।
শ্রমিকরা প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে চাঁদা দেন তাদের বিপদে-আপদে কাজে লাগার জন্য। এই টাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে তা শ্রমিকদের কল্যাণে কাজে লাগানোর কথা। কিন্তু টাকা কী হয়, তা জানা নেই কারও।
বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে গত বছর মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সিলেটের কালাগুল চা বাগানের শ্রমিক নীলমনি মোদি। বিয়ের সময় শ্রমিক ইউনিয়নের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েও পাননি তিনি।
নিউজবাংলাকে নীলমনি বলেন, ‘শ্রমিক ইউনিয়নে আমরা প্রতি মাসে ১৫ টাকা চাঁদা দিই। কিন্তু বিপদের সময় আমরা কোনো সহায়তা পাই না। আমাদের বিপদেই যদি কোনো কাজে না আসে, তাহলে কেন টাকা দেব? কেবল নেতাদের পকেট ভারী করার জন্য আমার কষ্টের টাকা দিতে হবে কেন?’
বিপদের সময় দরিদ্র শ্রমিকরা ইউনিয়ন থেকে কোনো সহায়তা পান না বলে জানান দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সুবল দাসও। তিনি বলেন, ‘এখানে গরিব কেউ মারা গেলে তার শেষকৃত্যের জন্য আমাদের চাঁদা দিতে হয়। আমাদের মজুরি থেকে পঞ্চায়েত কমিটি টাকা কেটে রাখে। ইউনিয়ন থেকে কোনো সহায়তা করা হয় না।’
সুবিধাবঞ্চিত চা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে ও তাদের দাবি আদায়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষেই চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে থাকে মালিকপক্ষ।
তবে মালিকপক্ষের সঙ্গে ইউনিয়ন নেতাদের আঁতাতের অভিযোগ বিভিন্ন সময় করে এসেছেন শ্রমিকরা। নেতারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে শ্রমিকদের নায্য দাবি এড়িয়ে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাগানের প্রত্যেক স্থায়ী শ্রমিক প্রতি মাসে শ্রমিক ইউনিয়নের তহবিলে ১৫ টাকা করে চাঁদা জমা দেন। এই টাকা কোথায় যায়- এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অর্থসম্পদের উৎস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের মধ্যে। বছরের পর বছর ধরে এই টাকার কোনো অডিট হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, যেটি লেবার হাউস নামে পরিচিত। শ্রীমঙ্গলেরই একটি অ্যাকাউন্টে জমা হয় শ্রমিকদের মাসিক চাঁদার টাকা। তবে প্রতি মাসে কী পরিমাণ টাকা জমা হয় এবং বর্তমানে অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা আছে, তার কোনো হিসাব দিতে রাজি হননি ইউনিয়ন নেতারা।
সিলেট ভ্যালির নেতা যা বললেন
তবে সিলেট ভ্যালি থেকে আদায় করা চাঁদার একটি হিসাব পাওয়া গেছে। এই ভ্যালিতে স্থায়ী শ্রমিক আছেন ৬ হাজার ৫০০ জন। সে হিসাবে এই ভ্যালি থেকে প্রতি মাসে আদায় হয় ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা।
দেশের চা বাগানগুলো আটটি ভ্যালিতে বিভক্ত। প্রতিটি ভ্যালি থেকে আলাদাভাবে চাঁদা উত্তোলন করে কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়।
ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি ভ্যালি থেকে মাসে আদায় করা টাকার অর্ধেক যায় ইউনিয়নের ভ্যালি সভাপতির কাছে, বাকি অর্থেক থাকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে।
সিলেট ভ্যালি থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা আদায় হলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ফেরত আসার কথা ভ্যালি সভাপতি রাজু গোয়ালার কাছে।
এই টাকা কীভাবে ব্যয় করেন- জানতে চাইলে রাজু গোয়ালা বলেন, ‘ভ্যাালিতে ৬ হাজার ৫০০ শ্রমিক আছেন বটে। কিন্তু অনেকেই মাসিক চাঁদা দেন না। যারা নিয়মিত কাজ করতে পারেন না, তারা চাঁদা দেন না, আবার কারও সমস্যা থাকলে তিনিও দেন না। ফলে মাসে গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার শ্রমিক চাঁদা দেন।
‘এই টাকার অর্ধেক আমাদের কাছে পাঠানো হয়। তার ১৫ শতাংশ যায় বাগান পঞ্চায়েত কমিটির কাছে। তারা বাগান পঞ্চায়েত পরিচালনায় এই টাকা ব্যয় করেন। ৪ শতাংশ রাখা হয় নির্বাচনি তহবিলে। বাকি টাকা বিভিন্ন দিবস উদযাপন, যাতায়াত, ভ্যালি অফিস খরচ ও কর্মচারীর বেতনেই চলে যায়।’
রাজু বলেন, ‘ভ্যালির দায়িত্বে আমরা তিনজন আছি। আমাদের সম্মানী ধরা আছে ৪ হাজার টাকা করে। প্রায় মাসেই সম্মানী নেয়ার মতো টাকা থাকে না। অনেক মাসে পকেট থেকে ভর্তুকি দিতে হয়।’
কেন্দ্রীয় কমিটির ফান্ডে জমা থেকে চাঁদার বাকি টাকা কোন খাতে খরচ হয় জানতে চাইলে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের বিপদে-আপদে সহায়তা করা হয়। গত বন্যার সময় জাফলং চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে।
‘এ ছাড়া নানা কারণে বিভিন্ন সময় বাগানের কাজ বন্ধ থাকে। শ্রমিকরা বিপাকে পড়েন। এ রকম সময়ে সেসব বাগানের শ্রমিকদের সহায়তা করা হয়। অসুস্থ শ্রমিকদেরও সহায়তা করা হয়।
‘এ ছাড়া নেতাদের প্রায়ই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট যাওয়া-আসা করতে হয়। এসব যাতায়াতের খরচও এই ফান্ড থেকে খরচ করা হয়।’
রাজু গোয়ালার এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সাবেক সভাপতি শ্রীবাস মাহালি বলেন, ইউনিয়নের তহবিলে জমা হওয়া টাকার কোরো হিসাব দেয় না কমিটি। বছরের পর বছর ধরে কোনো অডিট হয় না। শ্রমিকদেরও কখনও সহায়তা করা হয় না। এমনকি কেউ ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত হলেও ইউনিয়ন থেকে সহায়তা পায় না।’
শ্রীবাস বলেন, ‘গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই টাকা শ্রমিকদের উন্নয়ন, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, পঞ্চায়েত কমিটিকে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন দিবসে শ্রমিকদের যাতায়াতে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু সিলেট ভ্যালিতে এমন কোনো কার্যক্রমই চালানো হয় না।’
কত টাকা ওঠার কথা
চাঁদার হিসাব তো দূরের কথা, বাংলাদেশে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী কত তার সঠিক হিসাবই প্রকাশ হয়নি। ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬টি। এখানে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন। আর চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লাখ।
তবে দুটি সংগঠনের শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ১৮৪ জন। এর মধ্যে স্থায়ী ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন এবং অস্থায়ী ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন।
স্থায়ী শ্রমিকরা চাঁদা দিলে প্রতি মাসে ইউনিয়ন পায় ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৫ টাকা। অর্থাৎ বছরে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা।
শ্রমিকরা জানান, প্রতি সপ্তাহে তাদের মজুরি দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। মজুরি দেয়ার সময় মাসের প্রথম সপ্তাহে অথবা শেষ সপ্তাহে যেকোনো এক দিন তাদের মজুরি থেকে ১৫ টাকা করে চাঁদা কেটে রাখে বাগান কর্তৃপক্ষ। পরে সেই টাকা বাগানের কাছ থেকে শ্রমিক ইউনিয়ন সংগ্রহ করে।
চাঁদার টাকা কী হয় জানি না
হবিগঞ্জের চাঁন্দপুর বাগানের শ্রমিক অর্চনা বাউরি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে পাতা তোলার কাজ করি। এই পাঁচ বছর ধরেই চাঁদা দিয়ে আসছি। কিন্তু এই টাকা কোথায় যায়, কী হয় আমি জানি না। মজুরি দেয়ার সময় আমাদের বলা হয় শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা ১৫ টাকা কাটা হয়।’
চা শ্রমিক নেত্রী সন্ধ্যা রাণী ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে মাসে ১৫ টাকা চাঁদা নিয়ে নেতারা কী করে তারাই জানে। কথা ছিল শ্রমিকদের কন্যাণে এ টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু একটা টাকাও শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় হয় না। একজন শ্রমিক না খেয়ে মরে গেলেও একবার খাবার দেয় না। অসুস্থ হয়ে মরে গেলেও একটা ওষুধের ব্যবস্থা করে না।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, ‘অনেক পরিবার আছে টাকার অভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে পারে না। মারা যাওয়ার পর শ্রদ্ধানুষ্ঠান করতে পারে না। তখন তো শ্রমিক ইউনিয়ন আর্থিক সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু তারা সেটা করে না।
‘এমনকি যে শ্রমিক বছরের পর বছর তাদের টাকা দিয়েছে, মৃত্যুর পর তাদের পরিবারকে টাকা দেয়া কথা। কিন্তু তারা এক টাকা দেয় না। সবগুলো নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে নেয়।’
বলতে পারে না বাগান পঞ্চায়েত কমিটিও
চাঁদার টাকার হিসাব জানেন না বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিরাও। চাঁন্দপুর বাগানে এই কমিটির প্রধান সাধন সাঁওতাল বলেন, ‘একজন শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায় না ইউনিয়ন। শ্রমিকদের ক্যলাণে একটা টাকা তারা ব্যয় করে না।’
তিনি বলেন, ‘এই যে আন্দোলনের কারণে ১৯ দিন শ্রমিকরা কাজে যায়নি। তারা তো এই দিনের মজুরি পাবে না। অনেক পরিবার খেয়ে-না খেয়ে অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছে। ইউনিয়ন চাইলে তাদের সহায়তা দিতে পারত। কিন্তু তারা কিছু দেয়নি।’
তবে শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের টাকা নিয়ে কোনো শ্রমিকের কোনো অভিযোগ নেই। একটি কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
আরও পড়ুন:একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১২ সালের ২ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সাবেক জামায়াত নেতা ও তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। এরপর কারাগার থেকে বের হয়েই সবার চোখের সামনে গড়ে তোলেন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সাম্রাজ্য। সেই এনজিও দেশ-বিদেশ থেকে আনছে বিপুল অর্থ।
বাচ্চু রাজাকারকে সহায়তাকারী কীভাবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ঘটনার সময় ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। ওই দিন একটি মাইক্রোবাস করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে প্রথমে আগারগাঁওয়ের নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখার পর ওই বছরের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আবু ইউসুফ। এরপর কী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে দেশে শুরু হয় হইচই।
আবু ইউসুফ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটি জানায়, গ্রেপ্তার আবু ইউসুফ পিসল্যান্ড কোম্পানির একটি মাইক্রোবাসে করেই বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
ওই গাড়িতে ছিলেন বাচ্চু রাজাকারের ছেলে মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ, আবু ইউসুফ ও বাচ্চু রাজাকার। এরপর আদালতে নিজের জবানবন্দিতেও তার অপরাধ স্বীকার করেন আবু ইউসুফ। পরে এই অপরাধের দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। এখন কী করছেন সেই আবু ইউসুফ, কোথায় আছেন তিনি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি এখন গড়ে তুলেছেন এনজিও সাম্রাজ্য। রাজধানীর শ্যামলী এক নম্বর রোডের ওয়ান বাই বি ঠিকানায় অ্যাসোসিয়শেন ফর ম্যাস এডভাসমেন্ট নেটওয়ার্ক (আমান) নামের একটি এনজিও পরিচালনা করেন তিনি। কাজ করছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমান ছাড়াও চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, আল ইমদাদ ফাউন্ডেশনের নামে কয়েকটি সহযোগী সংস্থাও চালাচ্ছেন এই আবু ইউসুফ।
এসব বিষয়ে কথা হয় আবু ইউসুফের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার এই প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটা লোকাল ফান্ডে চলে। এরপর এটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১২ সালে আমি গ্রেপ্তার হয়ে ২ মাস ২২ দিন কারাকারে ছিলাম।
‘পরে ২০১৫ সালে এটা (এনজিও) আবার শুরু করি। এটা এখন দেশি-বিদেশি ফান্ডে চলে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকা থেকে টাকা আসে।’
বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতার মামলার এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলা হাইকোর্ট স্টে দিয়েছে। সময়টা সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২০১৫-২০১৬ সালে হাইকোর্ট এটা স্টে করে।’
‘গ্রেপ্তারের সময় আপনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন বাচ্চু রাজাকারকে আপনি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।’
উল্লিখিত তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলাম।’
‘সে সেময় জামায়াতে ইসলামী আপনার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল?’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এনজিও ব্যুরোর সকল নিয়ম কানুন মেনেই ফান্ড রিসিভ করি এবং ব্যয় করি। আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বনায়ন, খাদ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করি। আমার কাজে কোনো সমস্যা নেই, থাকলে তো সরকার এটা বন্ধ করে দিত।’
এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময়
আবু ইউসুফের এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রকম একজন অপরাধী কীভাবে হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও পরিচালনা করছে, সেটা অবশ্যই সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত হলে জানা যাবে কীভাবে সে এত বড় একটা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এনজিও ব্যবসা করছে। আমাদের আইনেই আছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেই আছে ক্রাইমকে যে সহযোগিতা করে, ক্রিমিনালকে যে সহযোগিতা করে, সেও সমানভাবে অপরাধী। আবু ইউসুফ বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সাহায্য করেছে। তাই সেও অপরাধী।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যেহেতু এটা যুদ্ধাপরাধের মামলা, তাই এখন ট্রাইব্যুনালকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে হাইকোর্টে এই স্টে কনটেস্ট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে এটা উঠে যাবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা থাকবে না।’
র্যাবের ভাষ্য
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবু ইউসুফকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সম্ভবত এনজিও ব্যুরোর অনুমতিতেই আবার এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
‘এই এনজিও পরিচালনার মাধ্যমে তার কোন অপরাধের তথ্য যদি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা এনজিও ব্যুরো পায়, ওই সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার সাতটি পয়েন্ট ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।
এ ছাড়া রাণীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত দুই দিন ধরে সড়কপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার ওই চার উপজেলার বেড়িবাঁধের ছয়টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। এখন চারিদিকে থইথই করছে পানি। বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় আসবাবপত্রসহ সবকিছুই পানির নিচে।
বাড়িঘরে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: নিউজবাংলা
বর্তমানে গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউবা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। রান্নার চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাবার তৈরির মতো কোনো ব্যবস্থা নেই তাদের।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের জন্য ঘরে ঘরে হাহাকার শুরু হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা সেখানে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জরুরি প্রয়োজনে বাইরে কোথাও যেতে হলে এক বুক পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্ক রয়েছেন তারা।
বর্তমানে নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন নদীর পাড়ের মানুষজন।
আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, ‘চার দিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাঁটু পানি। চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। গরু-ছাগল, মুরগিসহ এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদি পশুর খাবারের সংকট।
‘খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছি আমরাও। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।’
একই গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ‘বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাতে করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কী যে বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পরপর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আবার এমন অবস্থা। রান্না করতে পারছি না, খাদ্য সংকটে পড়েছি।’
নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘আত্রাই নদীতে পানির প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়ক ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বেলা ১১টার দিকে ভেঙেই যায় বাঁধটি। রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ধসে যায়।
‘এতে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর ভেসে যাওয়ায় আমারই চার লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনের স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আরও সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে, তবে কী পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে, তা এখনও নিরুপণ করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।
আরও পড়ুন:সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে হওয়া প্রবল বৃষ্টিতে সড়কের মাঝখান থেকে ধসে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে আশপাশের মানুষসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়তকারী পথচারীরা সমস্যায় পড়লেও সড়কটির সংস্কার নিয়ে একে অন্যকে দুষছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
নীলফামারীর ডোমার ইউনিয়ন সদরের চেয়ারম্যানপাড়ার বাইপাস রাস্তা ধরে মহাসড়কে উঠতে গেলেই দেখা মেলে সড়কের ওই ভাঙা অংশের।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়ক হওয়ার পর থেকেই এটি একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তার পুরোটা জুড়েই পিচ ও পাথর উঠে এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অনেকেরই যাতায়াতে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার পাথর উঠে গেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
ভ্যানচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে রয়েছে ইট ভাটা। সবসময় এই রাস্তা দিয়ে শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যানে করে যাওয়া আসা করে। ভাটার মাটিও এই রাস্তা দিয়ে আমরা নিয়ে থাকি। এমন একটি ব্যস্ত রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদেরও যাত্রী কমে গেছে। এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কিন্তু এখনও কেউ রাস্তা ঠিক করতে এলো না।’
শ্রমিক রাজ্জাক হোসেন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা থাকায় সারাদিনই অনেকেই এসে গাড়ি নিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। দ্রুত এই রাস্তা সংস্কার করা না হলে রাতের আঁধারে দুর্ঘটনায় পড়তে পারে মানুষ।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলার কথা হয় ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদের সঙ্গে। তবে রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি এলজিইডির কাঁধে চাপালেন তিনি। বলেন, ‘তাদেরকে আমি ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কারের কথা জানিয়েছি, কিন্তু তারা এখনও কোনো গুরুত্ব দেখাচ্ছে না। আমি আরও দুয়েকদিন দেখব। তারপরও যদি তারা না আসে, তবে আমি নিজেই ঠিক করে দেব।’
তবে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেলেন ভিন্ন কথা। তাকে রাস্তার ব্যাপারে কেউ জানাননি বলে জানালেন। প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এখন জানলাম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।’
দুই পক্ষের মন্তব্য জানার পর এখন স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন- রাস্তাটি আসলে ঠিক হবে কবে?
আরও পড়ুন:সম্প্রতি ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল মাঠকর্মী স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদনও করেছিলেন ভুক্তভোগী দাবি করা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
তবে ঘটনার প্রায় এক মাস পর অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে উল্টো কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়েছেন অভিযোগকারীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিযোগকারীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বদলির ব্যবস্থা করিয়েছেন। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম ওই দুজনের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
২৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে বদলির আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক খান। আদেশে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহারকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঠকর্মীদের গরু-ছাগল মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিসহ ৭৪ জন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী। এদের সবার পক্ষে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন নাজমুন নাহার।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ অফিসে আসার পর জানতে পারলাম আমাকে বদলি করা হয়েছে। কারণ আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করেছিলাম। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উনিই এই বদলির অর্ডার করিয়েছেন।’
সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন বাক্য ব্যবহার ও করোনাকালে টিকা কার্যক্রমের সময় আমাদের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটা লিখিত আবেদন করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা স্যারের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছিলাম, সেটার কারণেই বদলি করা হয়েছে। এছাড়া তো আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরাকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘এটা তো বলতে পারব না, কে বদলি করেছে। অভিযোগটা তো ডিজি স্যার বরাবর দিয়েছিল। এখন সেখানে কী হয়েছে, আমি বলতে পারব না এই মুহুর্তে। অনেক সময় ওখান থেকে কপি দেয়, আবার দেয় না।’
তবে অভিযোগের পর ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না- সে বিষয়েও তিনি জানেন না বলে জানান।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক বদলি। বহুদিন একটা জায়গায় থাকলে যেটা হয়।’
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পর কোনো তদন্ত হয়েছে কি না- প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুরের নদ-নদীগুলোর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ওইসব এলাকার ফসলের ক্ষেত।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী এই জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পানি নেমে গেলে দ্রুত এসব জমির ধান কেটে, মাড়াই করে, শুকিয়ে নিলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার নদ-নদীর পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৩টায় পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপরে, আত্রাই নদীর বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচে ও ইছামতি নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা, হীরাহার, গোসাইপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির প্রায় সবই পানিতে নিমজ্জিত। জমির ধান সবে পাকতে শুরু করেছে, এরই মধ্যে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। আদতেও জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তাদের মনে জমেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ।
শুধু ধান নয়, মরিচ, বেগুন, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতও ডুবেছে পানিতে। ফলে লাভ তো দুরাশা, সবজি চাষে যে খরচ ইতোমধ্যে হয়েছে, তাই তুলতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার মকবুল হোসেন। পানি বাড়ায় পুকুরের মাছ চলে গেছে। এদিকে যেটুকু জমিতে ফসল চাষ করেছিলেন, তাও তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক মকবুল হোসেন।
জানতে চাইলে একরাশ হতাশা ঝরল তার কণ্ঠে, ‘সব শেষ! আমি একেবারে পঙ্গু হয়ে গেছি। গরীব মানুষ; কিস্তি তুলে পুকুরে মাছ ছেড়েছিলাম, সব মাছ পালিয়ে গেছে; ফসলও পানির নিচে। কষ্টে গলা দিয়ে খাবার নামে না আমার। এখন কিস্তি দেব, নাকি খাব! পানি তো এখনও বাড়তেই আছে।’
কৃষক গোলজার হোসেন বলেন, ‘বিঘা পাঁচেক ধান লাগিয়েছিলাম। সব ধান ডুবে গেছে। সবজি ক্ষেতও পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবারই একই অবস্থা। এখন তো অনেক ক্ষতি। পাকা ধান, এসব ধান তো গাজে (অঙ্কুরোদগম হয়ে) নষ্ট হয়ে যাবে।’
শাহীন সুর আলম বলেন, ‘গত মৌসুমে ইরি (বোরো) ধানের আবাদ করে দাম পাইনি। সেই কারণে এবার আগাম জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। আর ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই কাটব, কিন্তু এর মাঝেই বন্যায় ডুবে গেল। এখনও তো পানি বাড়তেই আছে। ধান তো সব শেষ!’
সদর উপজেলার হীরাহার এলাকার সোহেল মিয়া বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছিলাম, ডুবে গেছে। ৩ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছিলাম, তাও ডুবে গেছে। কাঁচা মরিচের এক বিঘার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এক বিঘা জমির বেগুনের ক্ষেতও নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে এখন শুধু অন্ধকার দেখছি। সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করব, বুঝতেছি না।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে, তবে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব ধান পাকা অবস্থায় আছে, পানি নেমে গেলে সেগুলো দ্রুত কেটে, মাড়াই করে যদি শুকিয়ে নেয়া যায়, তাহলে তেমন ক্ষতি হবে না।’
আরও পড়ুন:‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। এর তিন বছর পর প্রায় ৫ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চুক্তির কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র এক বছর হলেও তা পেরিয়ে গেছে দুই বছর। প্রকল্পের মেয়াদের দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নানা জটিলতায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে অন্যান্য প্রকল্পের কাজও। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন ক্যাম্পাস পেতে অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে মুজাহিদনগরের প্রবেশ মুখে জমি অধিগ্রহণ এবং সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশেও।
পদ্মা সেতু রেললাইনের পাশের এই জায়গায় অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও বড় বড় পুকুর থাকায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজও শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর পাশে মুজাহিদ নগরে প্রবেশের শুরুতেও এখনও শেষ হয়নি প্রাথমিক কাজ। পশ্চিম পাশে অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হলেও রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হলেও এখনও ইট গাঁথুনির কাজ শেষ হয়নি।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি হওয়ায় এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্প দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই সময়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অন্যান্য কাজও।
সীমানাপ্রাচীরের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মাটি ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বার বার চিঠি দিলেও কাজে কোনো গতি আসছে না। এতে নতুন ক্যাম্পাস পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের দীর্ঘ দুই বছরে মাত্র ৬৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি এর পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি। কাজে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ জটিলতার অজুহাত দিলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিগ্রহণ জটিলতায় ছিল মাত্র ১১ একর জমি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই বছরে বাকি জায়গার কাজও শেষ করতে পারেনি।
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার না পাওয়ায় ক্ষোভে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার পেতে চুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করলেও টেন্ডার না পাওয়ায় পরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ঠিকাদার। এতে এক বছরের প্রকল্পে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অগ্রগতি নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করার কথা ভাবছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে চুক্তির নিয়মানুযায়ী এক বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, ‘সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। মুজাহিদ নগরের পাশে কিছু এবং রেললাইনের পাশে এক হাজার ফিটসহ আর মাত্র সাড়ে চার হাজার ফিট বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণের কিছু সমস্যা থাকায় আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে।
‘অধিগ্রহণ শেষ হলেই মোটামুটি তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কাজে দেরি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছি।’ তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি কি না-এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১১ একর জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা ছিল সে কারণে সেসব জায়গায় এখনও কাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকায় অন্যান্য জায়গায়ও তারা কাজ করেনি। এজন্য আরও বেশি দেরি হয়েছে। অধিগ্রহণের ঝামেলা শেষের পথে, আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারব।’
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ব্যয় বাড়াবে না।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে আসছি। আমরা ঠিকাদারকে ডেকে পাঠাব। তারা যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের খালের (নালা) ওপর পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না তাদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।
আর এখন কেউই সেতুটি নির্মাণের দায় নিচ্ছে না। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) বলছে, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। আর এলজিইডি বলছে সেতুটি পিআইও অফিসের হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরাকান্দি বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সেতুটির অবস্থান, যার পশ্চিম দিকে শহীদের বাড়ি ও পূর্বে সুরমান আলীর বাড়ি।
শহীদের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে সুরমান আলীর বাড়ি পর্যন্ত ক্যানেলটি প্রায় ১০০ মিটার। এই ১০০ মিটার প্রস্থের নালার মাঝামাঝিতে আনুমানিক ১২০ ফুট মেইন ক্যানেলের (মূল নালা) মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি, যার উভয় পার্শ্বেই নেই অন্তত ৩৫ ফুট করে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড)। এর পরের বাকি অংশে রয়েছে হেঁটে চলার সরু রাস্তা।
এ ছাড়া সেতুটিতে নেই অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল ও উইং ওয়াল। কেবল দুই প্রান্তের স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি।
সংযোগ সড়কস্থলের দুই পাশেই তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মই (সাঁকো)। এর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন রোজ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্থানে পুরাতন একটি সেতু ছিল। সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে অনুপযোগী থাকার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে একই স্থানে নতুন করে সেতুটি করা হয়। এ সেতু তাদের কোনো কাজেই আসছে না; বরং বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ভোগান্তি ও ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
তারা জানান, সেতু নির্মাণের পর একদিনও এই পথে যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। হেঁটে চলাচলের জন্য যে নামমাত্র সংযোগ সড়ক করা হয়েছিল, প্রথম বছরেই বন্যায় তার উভয় পাশ ধসে যায়। এর পরে সেখানে আর সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়নি। শুধু মানুষ পারাপারের জন্য এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় সেতুর সংযোগ সড়কে বাঁশ-কাঠের সাঁকো বানানো হয়েছে। এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ।
অথচ সেতুটি বিভিন্ন দিক থেকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর পশ্চিমে রয়েছে এম এ সবুর দাখিল মাদ্রাসা, টেংরাকান্দি শিশু নিকেতন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেংরাকান্দি বাজার। পূর্বে রয়েছে টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব টেংরাকান্দি হাফিজিয়া মাদ্রাসা।
শত শত শিক্ষার্থী এই সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি, পারুল, খোলাবাড়ি, খঞ্চাপাড়া এবং ফজলুপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের সহজে চলাচলের একমাত্র পথ এটি। খালের ওপর ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
জেলার প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের সেতুগুলো সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এতে ৪০ লাখ থেকে অর্ধকোটি পর্যন্ত টাকার বরাদ্দ ধরা হয়। কোনো কোনো সময় এর ব্যয় বরাদ্দ আরও বেশিও ধরা হয়ে থাকে। এসব সেতুর কাজ বেশির ভাগই করে থাকে এলজিইডি। আর কিছু ত্রাণের ব্রিজ পিআইওয়ের দপ্তর করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুটি তো হাওয়ায় হয়নি, কেউ না কেউ তো করেছে। আজ হয়তো দায় নিচ্ছে না, তবে যে ডিপার্টমেন্টই করে থাকুক, তারা কাজটি অপরিকল্পিতভাবে করেছে। কেননা সেতুটি মেইন ক্যানেলের পুরোটা অর্থাৎ, ১২০ ফুটেই করা উচিত ছিল। এতে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ হতো এবং ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেত।’
তিনি জানান, সেতুতে অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল করা হয়নি। সংযোগ সড়কের মাটি আটকানোর জন্য উইং ওয়ালও করা হয়নি, যার ফলে যতভাবেই সংযোগ সড়ক করতে মাটি দেয়া হোক না কেন, কোনোভাবেই সেখানে মাটি আটকানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটির উচ্চতাও সঠিকভাবে করা হয়নি, যার কারণে বন্যার সময় সেতুর নিচের অংশে পানি স্পর্শ করার উপক্রম হয় বা স্পর্শ করে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে কোনো নৌযানও চলাচল করতে পারে না।’
মধ্যপারুল গ্রামের বিজয় সরকার বলেন, ‘আমরা স্থানীয়রা চাঁদা তুলে এই বাঁশের মই (সাঁকো) তৈরি করেছি। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে পারাপার হয়। তারা কোনো মোটরসাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি বা কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারেনা।
‘মালামাল বহনে দুই মিনিটের রাস্তা ঘুরে যেতে হয় পাঁচ কিলোমিটার। তাতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি খরচ হয়।’
টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘সেতুর উভয় পার্শ্বেই এই এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বৃদ্ধ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে, বাধ্য হয়ে এই পথে চলাচল করে। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকারও হয়।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সইরুদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে চার থেকে পাঁচ বছর আগে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করে পিআইও অফিস। নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়কের অভাবে কোনো যানবাহন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। বন্যার সময় এখানে প্রচুর পানি হয়, অনেক স্রোত হয়, রাস্তাও ধসে যায়।’
জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে সুরমানের বাড়ি থেকে শহীদের বাড়ির সামনে পর্যন্ত (ওই খালে) ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শহীদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওইসব ফুটওভার ব্রিজ আমরা করি না, ব্রিজটা আমাদের নয়। ব্রিজটি এলজিইডির হতে পারে। তারপরও আমার সহকারী প্রকৌশলী মিজান এখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
মোবাইল ফোনে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মিজানের (বর্তমান পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেতুটি তারা করেননি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চেয়ে এলজিইডির ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটিতে আছি।’
একই দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস্তামুল হক বলেন, ‘ওই সেতুটা আমরা করিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার বলার পর আমি ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিলাম। দেখে মনে হয়েছে আমাদের কোনো প্রকল্পে করা নয় সেটা।
‘হয়তো অন্য কোনো ফান্ড থেকে কেউ করতে পারে। সেটা পিআইও অফিসও করতে পারে, আবার এলজিইডিও করতে পারে।’
তথ্য সংরক্ষণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা কত সালে হয়েছে, সেটি জানি না। ওই সময় আমি ছিলাম না। অডিট হয়ে গেলে বেশি দিনের পুরনো ফাইল আর সংরক্ষণ করা হয় না।’
সেতুটির জরুরি মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওখানে নাকি পানির স্রোতের বেগ অনেক। ওখানে অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) দিলে সেটা থাকবে না। অযথা ইনভেস্ট করে লাভ হবে না। ব্রিজটি দেখে মনে হয়নি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
‘এলজিইডি থেকে করা হলে ওই রকম হতো না। ওখানে নতুন করে ব্রিজ করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সম্পর্কিত একটি প্রপ্রোজাল (প্রস্তাব) পাঠাইছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য