সন্তানের শিক্ষার কথা তুলতেই হবিগঞ্জে সুরমা চা বাগানের শ্রমিক স্বপ্না সাঁওতাল কাঁদতে শুরু করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকালে মেয়েটা কলমের টাকা চাইছে। ২০ দিন ধইরা কাজে যাই না। টাকা কই পাইতাম? দুইটা থাপ্পড় দিয়া কাজে চইলা আইছি। এখন কষ্টে বুকটা ফাইটা যাইতেছে। মা হয়ে একটা কলম না দিয়ে থাপ্পড় মারছি।’
চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনার চিত্রই যেন ফুটে উঠল স্বপ্নার বক্তব্যে। এই জীবন তাকে কোনো স্বপ্ন দেখায় না, কেবলই কাঁদায়।
চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরির বাইরে বাড়তি সুবিধার নামে মালিকপক্ষ যা বলে থাকে, তার মধ্যে পোষ্যদের শিক্ষার পেছনে যে ব্যয় দেখানো হয়, তা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষার পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক।
দিনে একেকজন শিশুর পেছনে শিক্ষা ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় টাকা, এই হিসাবে মাসে ৪৫ টাকা, যা মূলত দুটি খাতা কিনতেই খরচ হয়ে যাওয়ার কথা।
চা শ্রমিকরা দিনে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা ১৯ দিন আন্দোলন করে ১৭০ টাকা মজুরি অর্জন করেছে।
যখন তারা ১২০ টাকা মজুরি পেত, তখন মালিকপক্ষ দাবি করে আসছিল, রেশন, আবাসন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা খাতে খরচ মিলিয়ে ৪০১ টাকা ব্যয় করা হয় একেকজন শ্রমিকের পেছনে।
এখন দাবি করা হচ্ছে মজুরি ৫০ টাকা বাড়ায় শ্রমিকের পেছনে ব্যয় বেড়ে হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
আইন অনুযায়ী এসব সুবিধা কখনও মজুরির অংশ হতে পারে না। আবার নিউজবাংলা খোঁজ নিয়ে দেখেছে, আবাসন বলতে যে ঘর দেয়া হয়, তাতে মাসে ২৩০০ টাকা মজুরি দেখানো হলেও তাতে নেই আবাসনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। এসব ঘরের ভাড়া সাত থেকে আট শ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।
রেশন বলতে যে সুবিধার কথা বলা হয়, তাও পর্যাপ্ত নয়। কেবল চাল বা আটা দেয়া হয়। কোনো কোনো বাগানে টানা ৫ বছর আটা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আবার যাদেরকে ধানের জমি ইজারা দেয়া হয়, তাদের রেশন দেয়া হয় না। অনিয়মিত শ্রমিকরাও এই রেশন পায় না।
এবার শিক্ষার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল দৈনিক দেড় টাকা বরাদ্দের কথা। সেটিও আবার সরাসরি দেয়া হয় না।
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী চা বাগানে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেই বাগান কর্তৃপক্ষকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে বাগানগুলোতে সরকারি স্কুল নেই, সেই বাগানের কর্তৃপক্ষ একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করে দিলেও সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
সরকারি বইগুলো শিক্ষার্থীরা বিনা পয়সায় পেলেও দেয়া হয় না উপবৃত্তি, পোশাক বা খাতা। ব্যবস্থা নেই দুপুরের টিফিনেরও।
অধিকাংশ স্কুলেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করেন একজনমাত্র শিক্ষক।
শ্রমিকদের দাবি, লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক সংকট আর প্রতিবন্ধকতার কারণে লেখাপড়া করাতে পারছেন না। বেশির ভাগই প্রাথমিকেই ঝরে পড়ে। অর্ধেক মাধ্যমিক পর্যন্ত যায়। সেখানেও ঝরে পড়ে অর্ধেকের বেশি।
আরও পড়ুন: এই ঘর দিয়ে মাসে দেখানো হয় ২৩০০ টাকা মজুরি!
বেগমপাড়া বাগানের শ্রমিক মণি সাধু বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো খাবারই দিতে পারি না, লেখাপড়া কীভাবে করাব? বাগান থেকে একটা বই, খাতা কলম দেয়া হয় না। এত কম মজুরিতে কীভাবে লেখাপড়া করাব? ছেলেরা এখানে সেখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালায়। কিন্তু মেয়েরা কীভাবে রুজি করবে? তাই তারা হাইস্কুলে যায় না।’
সুরমা বাগানের অর্চনা বাউড়ি বলেন, ‘হাইস্কুলে গেলে অনেক টাকা লাগে। স্কুলের ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, বই-খাতা কিনতে অনেক সময় আমাদের সন্তানদের টাকা দিতে পারি না। তাহলে তারা কীভাবে লেখাপড়া করবে। আমাদেরও তো ইচ্ছে করে সন্তানদের লেখাপাড়া করাইতে। কিন্তু টাকার অভাবে পারি না। যাদের টাকা আছে, তারা শুধু লেখাপাড়া করাইতে পারে।’
‘মালিকদের উদ্যোগ লোক দেখানো’
চা বাগানের শিশুদের শিক্ষা সহায়তা প্রদানে কাজ করে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- একডো।
বাগানের শিক্ষার চিত্র প্রসঙ্গে সংস্থাটি নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চা বাগানের শিক্ষা কার্যক্রম মূলত লোক দেখানো। মালিকপক্ষ চুক্তি আর শ্রম আইনের শর্ত পূরণের জন্য নামমাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু রাখে। সেখানকার স্কুলগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
‘বেশির ভাগ স্কুলই এক কক্ষের। একটি কক্ষেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নেয়া হয়। তাও একজনমাত্র শিক্ষক দিয়ে। শিক্ষকের জন্যও আলাদা কোনো কক্ষ নেই এসব বিদ্যালয়ে।’
তিনি বলেন, ‘এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনও থাকে সামান্য। তাই ভালো মানের কোনো শিক্ষক বাগানের স্কুলে কাজ করেন না। ফলে সেখানকার শিক্ষার মানও খুব খারাপ। বাগানের স্কুল থেকে পাস করে আসা শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাইরের উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়ই টিকতে পারে না।’
চা শ্রমিকদের নিয়ে পিএইচডি করা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে মালিকদের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। স্কুলের নামে একটি ছাপড়া ঘর আর একজন শিক্ষক ছাড়া আর কিছুই নেই বেশির ভাগ বাগানে। শহর আর মহাসড়কের পাশের বাগানগুলো ছাড়া বাকিগুলোতে সরকারি বিদ্যালয়ও নেই।’
তিনি বলেন, ‘চা বাগান মালিকরাই তাদের হিসাবে দেখিয়েছেন, শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য দিনে ১.৫০ টাকা ব্যয় করেন তারা। এই যুগে দেড় টাকা দিয়ে কী শিক্ষা মিলবে?’
দায় সরকারেরও
লক্ষ্মীকান্ত এই অবস্থার জন্য সরকারকেও দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও ১৬৭ চা বাগানের মধ্যে মাত্র ১৫ থেকে ১৭ টিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাকি বাগানগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’
সরকার পরিচালিত সিলেটের লাক্কাতুরা বাগানে একটি এনজিও পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতা করেন জেনি পাল। তিনি জানান, পড়ালেখার ব্যাপারে শিশুদের আগ্রহ রয়েছে। তবে বাবা-মায়েরা শিক্ষার খরচ বহন করতে পারে না। ফলে পঞ্চম শ্রেণির পরেই ঝরে পরে বেশির ভাগ শিশু।
তিনি বলেন, ‘বাগানের প্রাথমিকের পর আর পড়ার সুযোগ নেই। বাইরের বিদ্যালয়গুলোতে পড়ার মতো টাকা তাদের নেই। তাই পঞ্চম শ্রেণির পর বেশির ভাগ শিশুই আর স্কুলে যায় না।’
পাঁচ বছর ধরে চা বাগানের শিশুদের নিয়ে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঊষা। এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নিগার সাদিয়া জানান, ‘অপুষ্টির কারণে চা বাগানের শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি অনেক কম। তারা কিছু মনে রাখতেও পারে না। এখানকার কোনো শিশুই তিন বেলা ভালো খেতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বাবা-মা কাজে থাকায় দুপুরে চা শ্রমিকদের ঘরে রান্নাবান্না হয় না। ফলে চা বাগানের প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য মিড ডে মিল চালু করা প্রয়োজন। অথচ মিড ডে মিল দূরে থাকা শিক্ষা উপকরণগুলোই পায় না তারা।’
বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের চম্পা নাইডু বলেন, ‘বাগানে শিক্ষা বলতে একটি ভাঙা স্কুলঘর। এক বা দুইজন শিক্ষক। যারা আবার যোগত্যসম্পন্ন নন। এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর শিক্ষার আর কোনো সুযোগ নেই। অনেক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নেই।’
কালাগুল চা বাগানের শ্রমিক রতন কৈরির ছেলে ওই বাগানের বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। রতন বলেন, ‘ছেলেটার পড়ালেখায় আগ্রহ আছে। আমিও তারে পড়াতে চাই। কিন্তু স্কুল থেকে তো বইখাতা কিছু দেয় না। এগুলো আমি কিনে দিতে পারি না। আর পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর তো নতুন স্কুলে ভর্তি ফি ও বেতন দিতে হবে। এগুলো কোথায় পাব?’
বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকা প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব জমি থাকা আবশ্যিক। কিন্তু বাগানের জমি তো ইজারা নেয়া। তাই বাগানগুলোতে সরকারি বিদ্যালয় করা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চা বাগানের জন্য এই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ফলে বাগানের অনেক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। আরও কিছু করার প্রক্রিয়ায় আছে।’
তিনি দাবি করেন, বাগানের ভেতরে সরকারি বিদ্যালয় না থাকলেও বাগানের আশপাশ এলাকায় দুই শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
তবু বদলাচ্ছে দিন
তবে ইদানীং কষ্ট করে হলেও সন্তানদের পড়ানোর দিকে ঝোঁক কিছুটা বেড়েছে। যে কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধার-দেনা করেও পাঠানো হচ্ছে সন্তানদের। তবে সেখানেও নানা বাধা।
হবিগঞ্জের বেগমখান বাগানের পরেশ বাগতি বলেন, ‘আমাদের বাগানের অনেক ছেলে কলেজে পড়ে। প্রতি বছর বাগান থেকে ১৮ থেকে ২০ জন ছেলে এসএসসি পাস করছে। কিন্তু কলেজ পর্যায়ে পড়তে গিয়ে অনেকেই ঝরে পড়ে। মেয়েরা কলেজ পর্যায়ে নেই বললেই চলে।’
কেউ কেউ অবশ্য কলেজ পেরিয়ে আরও দূরে যাচ্ছে, যাদের হাত ধরেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখছে শ্রমিকরা।
একই জেলার চাঁন্দপুর বাগান, বেগমখান, চন্ডিছড়া ও লস্করপুর চা বাগানের শিক্ষার্থীরা ৬ কিলোমিটার দূরে চুনারুঘাট কলেজ, দেওয়ন্দি বাগানের শিক্ষার্থীরা ৮ কিলোমিটার দূরের শায়েস্তাগঞ্জ কলেজ, আমু ও নালুয়া বাগানের শিক্ষার্থীরা ৭ কিলোমিটার দূরের আমরোড কলেজ এবং সুরমা, জগদীলপুর, নোয়াপড়া, তেলিয়াপাড়া বাগানের শিক্ষার্থীদের অন্তত ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের মাধবপুর কলেজে গিয়ে পড়তে হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ। তবে এর সিংহভাগই ছেলে। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করছে ২০ শতাংশ।
‘শ্রমিকরা এখন আগের চেয়ে সচেতন। তারা না খেয়ে হলেও সন্তানদের লেখাপড়া করাতে চান। যে কারণে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। এমনকি বিভিন্ন ভার্সিটিতে অন্তত ২০০ চা শ্রমিক সন্তান লেখাপড়া করছেন। আমি তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ছাত্র-যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বীরেন ভৌমিক বলেন, ‘বাগান থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া কিছু দেয়া হয় না। তাও সেই বিদ্যালয়গুলোতে একজনের বেশি শিক্ষক নেই। আধুনিক যুগে এসেও কি আমাদের সন্তানরা কেবল নাম-দস্তখতই শিখবে?
‘আমরা শিক্ষিত যুবকরা চা বাগানে শিক্ষার হার বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি মেয়েদেরকেও যেন কাজে না দিয়ে লেখাপড়া করানো হয় সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।
এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।
আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।
রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।
বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।
সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।
উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য