এক বছরের উত্থানে পুঁজিবাজারে সূচক প্রায় তিন হাজার পয়েন্ট বাড়লেও শেয়ার দর এখনও অতিমূল্যায়িত হয়নি বলে মনে করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি মনে করেন, বাজার আরও অনেক দূর যাবে।
রোববার জাতীয় শোক দিবসে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
গত বছর করোনার সংকট মুহূর্তে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পুঁজিবাজারে চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। ২০১০ সালের মহাধসের পর বাজারে যে আস্থার সংকট ছিল তা কাটতে শুরু করায় লেনদেনেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বগতি। গত সপ্তাহেই ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে গত ৯ আগস্ট।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৫ মার্চ থেকে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিকে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে।
এরপর মে মাসে বিএসইসির নেতৃত্বে আসে পরিবর্তন। আর ২ জুলাই থেকে লেনদেন আবার চালু হওয়ার পর আস্থার সংকট কাটিয়ে আগাতে থাকে পুঁজিবাজার।
সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল তিন হাজার ৯৮৬ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার তা ছিল ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্ট। এই কয়েকদিনে সূচক বেড়েছে ২ হাজার ৭১৩ পয়েন্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর পুঁজিবাজার নিয়ে একটি মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, বাজার এখন অতিমূল্যায়িত আর একে আর বাড়তে দেয়া উচিত হবে না।
তবে এরপর মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সূচক এক বছরে অনেক বাড়লেও এখনও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় নিচে আছে।
সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের ব্যাংকের শেয়ার এখনও অবমূল্যায়িত, এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষকদের কোনো সংশয় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে উত্থানের মধ্যেও ওষুধ ও রসায়ন, প্রকৌশল, খাদ্য, বস্ত্রসহ প্রধান খাতগুলোর অনেক কোম্পানির শেয়ার এখনও তাদের সম্পদ মূল্যের চেয়ে কমে লেনদেন হচ্ছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজার মুলধন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে ৫ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অনেকে এ বাজারকে ওভার-ভ্যালুড বলে মনে করছেন, যা ঠিক নয়। পুঁজিবাজার অনেক দূর যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পুঁজিবাজার গড়তে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করছেন।’
এই এক বছরে বিএসইসি এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানিগুলোকে উৎপাদনে ফেরাতে বেশ কিছু কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে তারা। এরই মধ্যে দুটি কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে। আরও একটি কোম্পানি উৎপাদন শুরুর তারিখ জানিয়েছে।
আবার ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশে সীমা বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে আদেশ জারি করেছিল, তা নিয়ে দুই পক্ষে বৈঠক হয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশের সীমা বাড়ায়।
বিএসইসি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে যেসব বাধা ছিল তা দূর করতে আইনি সংস্কারের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
আবার বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো করে এসেছে বিএসইসি। বন্ড মার্কেটকে সচল করতে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। ইসলামি সুকক বন্ডের পাশাপাশি লেনদেনযোগ্য পারপেচুয়াল বন্ড ছাড়া হচ্ছে। এসব বন্ডে ৫ হাজার টাকাও যেন বিনিয়োগ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকে। বলেন, ‘দেশ স্বাধীন না হলে আজ এত সুন্দর পুঁজিবাজার উপহার দিতে পারতাম না. স্বাধীনভাবে বাজারকে এগিয়ে নিতে পারতাম না।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শ হলো দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সোনার বাংলা গড়া। আসুন আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি ও সোনার বাংলা গড়ে ভালো পুঁজিবাজার উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি।’
বিএসইসি কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান ও আব্দুল হালিম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান, বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনস্টিটিউশনের (বিআইসিএম) প্রেসিডেন্ট মাহমুদা আক্তারও এ সময় বক্তব্য রাখেন।