ব্যাংকে থাকা অলস টাকা তুলে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ব্যাংকগুলো লাভবান হলেও বিষয়টি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যায় পুঁজিবাজারে এই খাত নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাতে কমেছে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর।
তবে ব্যাংক, বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে পতনের দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ।
দিন শেষে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর ২ হাজার ৯৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আর তিনটি কর্মদিবসে।
২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর লেনদেন ছিল ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। পরের কর্মদিবসে ৫ ডিসেম্বর মহাধস শুরুর দিন লেনদেন ছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন।
২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ৩ হাজার ২০৮ কোটি ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা লেনদেন বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার লেনদেনের শুরুতে পতন ছিল বেশি আর এ কারণে সূচকও এক পর্যায়ে পগে যায় ৭৩ পয়েন্ট। তবে পরে দাম কমার হার কমে আসা আর প্রধান প্রধান অন্য খাতগুলোর বেশিরভাগে দর বৃদ্ধির কারণে সূচক বেড়ে যায়।
দিন শেষে আগের দিনের চেয়ে সূচকে যোগ হয়েছে ৩২ পয়েন্ট। সূচকের অবস্থান এখন ২০১১ সালের ২৬ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।
সেদিন ডিএসই সূচক ছিল ৬ হাজার ৬৪২ পয়েন্ট। এখন অবশ্য ডিএসইর প্রধান সূচকের না, ডিএসইএক্স সূচক আর মান অনুযায়ী আগের সূচক এখনকার চেয়ে কিছুটা বেশি থাকার কথা।
তবে ব্যাংক খাতের চেয়ে বেশি পতন হয়েছে দর সংশোধনে থাকা বিমা খাতে। পক্ষান্তরে দারুণ একটি দিন গেছে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে। বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে বস্ত্র খাতেও।
দুর্দান্ত লভ্যাংশ দিয়ে আসা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দর পতনও অনেকটা বিস্ময়করই বলা যায়। অথচ এই দিন তিনটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণার সংবাদ আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে। এই তিনটি ফান্ডই গত বছর ব্যাপক লোকসান দেয়ার কারণে লভ্যাংশ দিতে পারেনি, কিন্তু এবার বেশ ভালো মুনাফা করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়েছে।
বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা অবশ্য এই উদ্বেগটিকে কাজে লাগিয়েছেন, যার প্রমাণ লেনদেনে। আগের কর্মদিবস বৃগস্পতিবার দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন দেখেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সেটিও ছাড়িয়ে লেনদেন আজ ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ অবস্থান দেখা গেছে।
আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৫১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেখান থেকে বেড়েছে আরও ৪২৩ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে ১৮১টি কোম্পানির, কমেছে ১৭৩টির, দাম বেড়েছে ২০টির।
ভিত্তিহীন উদ্বেগ
এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত তারল্য আছে, যার মধ্যে ৬২ হাজার কোটি টাকা একেবারেই অলস। এই টাকা বসিয়ে রেখে এক পয়সাও আয় হচ্ছে না ব্যাংকগুলোর।
এই অতিরিক্ত তারল্যের কারণে ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতের সুদহার কমিয়ে দেড় থেকে দুই শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আর এ কারণে ব্যাংকে টাকা রাখলে মূল্য আসলে কমে যায়। কারণ, মূল্যস্ফীতির হার এখন মসাড়ে ৫ শতাংশের বেশি।
অর্থাৎ এক বছর আগে ১০০ টাকার যে মূল্য, চলতি বছর সেটা ৯৪ টাকা ৫০ পয়সার আশেপাশে। কিন্তু সুদ হিসেবে পাওয়া গেছে দেড় থেকে দুই টাকা। ফলে টাকার প্রকৃত মান কমে গেছে।
এই অবস্থায় বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো ব্যাংকগুলো যেন আবার আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি ব্যবস্থা করেছে।
অলস টাকা ফেলে না রেখে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগের সুবিধা রেখে তারা মোট ৯টি নিলামের আয়োজন করেছে। ব্যাংকগুলো সেখানে বিনিয়োগ করবে এবং এর বিপরীতে সুদ পাবে।
কিন্তু গণমাধ্যমে বিষয়টি যেভাবে এসেছে, সেটি বিনিয়োগকারীদের অনেকের মধ্যেই অস্থিরতা ছড়িয়েছে। ব্যাংক থেকে অলস টাকা তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন খবরের ব্যাখ্যায় বহুজন ভাবছে, টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমনিতে নিয়ে নেবে। ফলে ব্যাংকের আয় ও সম্পদ কমবে।
তবে বিষয়টি উল্টো বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন মিউচ্যুয়ালা ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো আয় করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামও বলেছেন, এটি ব্যাংকের জন্য একটি সুবিধা নিয়ে এসেছে। যে অর্থ থেকে তাদের আয় ছিল শূন্য, সেখান থেকে তারা কিছুটা হলেও আয় করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বরং ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ সুদহার কম রাখার ওপর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সুদহার বেশি হলে ব্যাংকগুলো অন্য জায়গায় বিনিয়োগ না করে এই খাতে বেশি টাকা ঢালবে।
দ্বিতীয় যে পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে, সেটি হলো আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির বেশি রাখা। রোববার এক সার্কুলারে তারা জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাংকগুলো ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীদেরকে যে সুদ দিয়ে থাকে, তা কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না।
এতে ব্যাংকগুলোর আমানতের খরচ কিছুটা বাড়বে। কিন্তু ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ থাকলেও এখন তা ৬ থেকে ৭ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। ফলে আমানতের জন্য যে বাড়তি খরচ করতে হবে, বিতরণ করা ঋণ থেকে বাড়তি আয় করে তা পুষিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।
ব্যাংক খাতে ৪টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৯টির দর। অপরিবর্তিত ছিল বাকি আটটি।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা আইএফআইসি ব্যাংক। আগের দিনের চেয়ে ৪.১৪ শতাংশ বেড়ে দর হারিয়েছে ১৫ টাকা ১০ পয়সা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাড়া আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের দর বেড়েছে ৩ শতাংশ।
অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইবিএলের ২০ পয়সা আর ইউসিবির বেড়েছে ১০ পয়সা।
লেনদেন হয়েছে ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ব্যাংকের মতো পতন হয়েছে আর্থিক খাতেও। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে বেড়েছে ২টির, কমেছে ১৭টির। লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
আগের দিন লেনদেন ছিল ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
প্রকৌশল, ওষুধ, জ্বালানি, বস্ত্র, বিবিধের ‘দখলে’ বাজার
৩০ জুন অর্থবছর শেষ হওয়ায় লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা এই পাঁচটি খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
মোট লেনদেনের ৬৮.৪৬ শতাংশই হয়েছে এই পাঁচ খাতে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। এই খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ৯টির দর হারানোর বিপরীতে বেড়েছে ৩২টির দর। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
এই খাতের শেয়ারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ন্যাশনাল পলিমারের দর। আগের দিনের চেয়ে বেশি বেড়েছে ৯.৭০ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেড়েছে বিডিঅটোকারের ৯.৪৬ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ অ্যাপোলো ইস্পাতের বেড়েছে ৯.২৪ শতাংশ।
এ ছাড়া বেঙ্গল উইন্ডসরের দাম ৮.০১ শতাংশ, এস এস স্টিলের ৭.২৬ শতাংশ, ন্যাশনাল টিউবের ৬.৪৭ শতাংশ, সুঋদের ৫.৩৮ শতাংশ, বিএসআরএম স্টিলের ৪.৬৯ শতাংশ, বিডি ল্যাপসের ৪.১৮ শতাংশ বেড়েছে।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ৪৭৭ কোটি ১০ টাকা। আগের কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার এই খাতে লেনদেন ছিল ৩৭৭.২০ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে ৪৫৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এই খাতেও লেনদেন বেড়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ৩৯৮.২০ কোটি টাকা।
এই খাতে ১৯টি কোম্পানি দর হারানোর বিপরীতে বেড়েছে ৩৬টি। ৩টির দর ছিল অপরিবর্তিত।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি ছিল এই খাতের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ বেড়েছে ভিএসএফ থ্রেডের দর। এই কোম্পানির দরই আজ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
আগের কর্মদিবসে দর ছিল ২৭ টাকা আর আজ লেনদেন হয়েছে ২৯ টাকা ৭০ পয়সায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়া আলহাজ্ব টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৯.৯১ শতাংশ। নূরানী ডায়িং এর দর ৯.৮০ শতাংশ, তাল্লু স্পিনিং এর ৯.৭৫ শতাংশ, রিজেন্ট টেক্সটাইলের ৯.৭৫ শতাংশ, তসরিফার ৯.৬২ শতাংশ, মিথুন নিটিং ৯.৫২ শতাংশ দর বেড়েছে।
এই ছয়টি কোম্পানির শেয়ারদর এর চেয়ে বেশি বাড়া সম্ভব ছিল না।
একদিনে পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দাম বাড়ার সুযোগ থাকলেও ১০ পয়সা ড্রিপের কারণে কখনও কখনও শতকরা হিসেবে দাম বাড়তে পারে কিছুটা কম।
আগ্রহের নতুন মোড় থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২২টির, কমেছে আটটির।
আগের কর্মদিবসে এই খাতে লেনদেন ছিল ৩২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৯৮ শতাংশ দাম বেড়েছে একমি ল্যাবরেটরিজের দর। সেন্ট্রাল ফার্মার বেড়েছে ৯.৭০ শতাংশ। কোম্পানি দুটির শেয়ার দর এর চেয়ে বেশি বাড়া সম্ভব ছিল না।
এ ছাড়া এমবি ফার্মার ৮.৭৩ শতাংশ, গত কয়েক দিনে তুমুল আগ্রহ তৈরি করা ওরিয়ন ফার্মার দাম বেড়েছে ৮.৩৫ শতাংশ। অন্যগুলোর মধ্যে ইমাম বাটনের ৭.৯৭ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৭.০৬ শতাংশ, কেয়া কসমেটিকসের ৬.৬৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
লেনদেনের চতুর্থ স্থানে উঠে আসা বিবিধ খাতে লেনদেন বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এই খাতের ১৪টি কোম্পানির ২৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। যাদের একটির দর কমেছে, বেড়েছে বাকিগুলোর।
এই লেনদেনের সিংহভাহেরই হয়েছে বেক্সিমকো লিমিডেটের। একক কোম্পানি হিসেবে ১৫২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে এই কোম্পানির।
সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই খাতের মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ আছে, যার দর বেড়েছে ৯.৮৬ শতাংশ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির, কমেছে বাকিগুলোর। লেনদেন হয়েছে ২২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
আগের কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ১৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এই খাদে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে থাকা খুলনা পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার দরে হঠাৎ বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। শতকরা হিসেবে খুব বেশি না বাড়লেও শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা দর বৃদ্ধি পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে।
এই খাতের শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শাহজিবাজার পাওয়ারের ৮.৪২ শতাংশ।
লভ্যাংশে চমকের পরও দর হারাল মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এদিন তিনটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। লোকসানের কারণে গত বছর লভ্যাংশ দিতে না পারা ডিবিএইচ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা করে লভ্যাংশ দেবে। ফান্ড দুটির দর ১০ টাকার নিচে। এই পরিমাণ বিনিয়োগ করে ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।
ডিবিএইচের দাম বেড়েছে ১০ পয়সা, আর গ্রিনডেল্টার ২০ পয়সা।
তাও এই দুটির দর বেড়েছে। কমেছে বাকি সবগুলোর। এমনকি অন্যদিকে ইউনিটপ্রতি এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড ইউনিটপ্রতি দর হারিয়েছে ৬০ পয়সা। ১২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে দাম কমে হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই ছিল এই খাতের। একের পর এক আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণার মধ্যেও এভাবে দর হারানো কিছুটা বিস্ময়ও তৈরি করেছে।
এর মধ্যে এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড ৫.২৬ শতাংশ, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৫.১৪ শতাংশ, এসএমইএল আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪.৭২ শতাংশ এবং এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড দর হারিয়েছে ৪.৬৮ শতাংশ।
এই খাতে লেনদেনও কমেছে। আজ হাতবদল হয়েছে ১৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৪২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বিমার পতন থামার নাম নেই
গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি, এরপর এপ্রিলের শুরু থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটা বিমা খাতে যে পতন শুরু হয়েছে, তা আর থামার নাম নেই।
এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ৪টির দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৪৭টির। লেনদেন হয়েছে ১৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার এই খাতে লেনদেন ছিল ১৭১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সেদিন বেড়েছিল ৩৩টির দর কমেছিল ১০টির।
তবে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতও এদিন বেশ চমক দেখিয়েছে। ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। কমেছে বাকি চারটির। লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি ৭ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’। ১৬৭ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা শহর দুটি ভারতের।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম অস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ২৬০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, বায়ুর মানের স্কোর ২২৪, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৬৮। ১৬৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাতারের রাজধানী দোহা। দূষিত বাতাসে শীর্ষ দশে থাকা অপর শহরগুলোর বাতাসের মানের স্কোর ১৫৭ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয় বায়ুর মান। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠী’র (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ অবস্থায় গোডাউনের পাশের রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের অনেকে এই কেমিক্যালের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শিয়ালবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ওই কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিভে গেছে।
এদিকে, কেমিক্যাল গোডাউনের পাশে অবস্থিত রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টসের কর্মীরা সকালে কর্মক্ষেত্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় কেমিক্যাল গ্যাসে পুরো গার্মেন্টস ভরে যায়। সকালে গার্মেন্টসে প্রবেশের পর একে একে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
রাইজিং ফ্যাশনের কর্মী মো. আল আমিন বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের বিষাক্ত গ্যাসে গার্মেন্টস ভরে ছিল। আমরা সকালে যখন কাজ করতে আসলাম, তখন কেমিক্যাল রিয়েকশনে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এসময় রাইজিং ফ্যাশন নামের ওই গার্মেন্টসের সামনে কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিরা বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১২টির বেশি ইউনিট। ভবনটিতে রাসায়নিক থাকায় এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৪ আগস্ট মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে সিআইডি। বিষয়টি সিআইডি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, মামলা রুজুর পর সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি। পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। এভাবে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে একটি মিটিং করে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই। সিআইডি জনাতে পারে, ওই মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মার্চে সিআইডিকে অনুমতি দেয়।
এসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানে শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। অন্যান্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সিআইডি বিজ্ঞ আদালতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯১ জনের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির শুনানি ধার্য ছিল। অধিকাংশ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার আদেশ দেন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টস ভবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কেমিক্যাল ভবনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে। পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারলেও এখনো রাসায়নিকের গুদামে প্রবেশ করা যায়নি। এই অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সকল লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা এবং তার পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যে কারখানা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি অভিযান এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে এসব কার্যক্রম করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি। যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও গার্মেন্টস দুই দিকেই আগুন দেখেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার নিচ তলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন চার তলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রাসায়নিকের গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকে রাসায়নিকের গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, এই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই। যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিন তলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচ তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচ তলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক
অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শোক
মিরপুরে আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শোকবার্তা দেন। শোকবার্তায় তারেক রহমান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার দোয়া করেন।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। যাতে অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান দায়ীদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনদের হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
মন্তব্য