বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অসচ্ছল ক্রীড়াবিদদের অনুদানের তালিকায় চেয়ারম্যানসহ বিত্তশালিরা

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১৭:০৪

অনাহারে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটানো অনেক ক্রীড়াবিদ এবং তাদের পরিবারকে বাদ দেয়া হয়েছে তালিকা থেকে। এমনকি বাদ পরেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অসহায় ক্রীড়াবিদও।

‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের বিনিময়ে বিত্তশালীদের নাম সরকারের অনুদানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অথচ অনাহারে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটানো অনেক ক্রীড়াবিদ ও তাদের পরিবারকে বাদ দেয়া হয়েছে তালিকা থেকে। এমনকি বাদ পরেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অসহায় ক্রীড়াবিদরাও।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে পাঠানো একটি তালিকায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে চেক তৈরির আগে তদন্তপূর্বক ওই তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন জেলার প্রকৃত ক্রীড়াবিদরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা অফিস থেকে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাত্র নয়দিন আগে ১৯৭৫ সালের ৬ আগস্ট ক্রীড়াসেবীদের কল্যাণার্থে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০১২ সাল থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে অসচ্ছল, আহত, অসমর্থ ও দুস্থ ক্রীড়াসেবী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অনুদান প্রদান করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল অনলাইনে আবেদনের শেষ তারিখ। তখন পটুয়াখালী জেলা থেকে মোট ৩৪টি আবেদন জমা পড়ে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচাই বাছাই করে সেখান থেকে মোট ২৪জনের নামের তালিকা ঢাকায় পাঠান ওই ফাউন্ডেশনের জেলা কমিটির সভাপতি তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে ১৭ জনের একটি চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হয় পটুয়াখালীতে। তাদের নামে চেক প্রস্তুতির কার্যক্রমও চলমান। যেখানে পটুয়াখালী থেকে যাচাই বাছাই করা ২৪ জন থেকে রাখা হয়েছে মাত্র ১১জনকে, বাকি ৬ জনকে অবৈধভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ আছে, ঘুষের বিনিময়ে ওই ৬ জনসহ একাধিক বিত্তশালীদের তালিকায় রাখা হয়েছে। আবার খেলোয়াড় নয় এমনও আছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সাথে আলাপ করে দেখব প্রকৃত অস্বচ্ছল ক্রীড়াসেবীরা যাতে অনুদান পায়।’

পটুয়াখালীর এক সময়ের অনেক নামি-দামি ক্রীড়াসেবীর মধ্যে অনেকেই অসচ্ছল ও দুস্থ। এমনকি অর্থের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায় জীবনযাপন করলেও তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তারা।

এমনই একজন সাবেক মহিলা খেলোয়াড় মোসাম্মদ মমতাজ বেগম। জানালেন, ছাত্র অবস্থা থেকে দাবা টেবিল টেনিস, ভলিবলসহ একাধিক খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি, কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর পারছেন না। তার ওপর শারীরিকভাবে অক্ষম তিনি।

মমতাজ বেগম জানান, নিয়ম অনুযায়ী তিনিও আবেদন করেছিলেন। পটুয়াখালীর যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক তালিকায়ও তার নাম ছিল, কিন্তু ওই ফাউন্ডেশনের একাউন্ট্যান্ট আবু তাহের তার নাম বাদ দিয়ে সেখানে অন্য নাম দিয়েছে। এখন তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

সাবেক এই ক্রীড়াবিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

পটুয়াখালীর পরিচিত মুখ সাবেক খেলোয়াড় বর্তমানে আম্পায়ার বাদল হালদার জানান, তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। গত বছর তিনি সরকারের এই অনুদান পেলেও এবছর ঘুষের টাকা না দিতে পারায় তালিকায় তার নাম নেই।

বাদল হালদার অভিযোগ করেন, আবু তাহের নামের ওই স্টাফ পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছে। সেটা দিতে না পারায় তালিকা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।

বাদল জানান, যাচাই-বাছাই কমিটিতে তিনি নিজেও ছিলেন; তালিকায়ও তার নাম ছিল কিন্তু ঘুষের টাকা না দিতে পারায় তাকে বাদ দিয়ে শহরের বিত্তশালীদের ওই তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।

একই অভিযোগ করেন ফাতেমা ওহাব ও আবদুর রব মিয়া নামের সাবেক খোলোয়াড়রা।

যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. সাইদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তালিকা পাঠানোর পরও কেন কীভাবে বাদ দেয়া হলো তা তিনি জানেন না।

তিনি বলেন, ‘৩৪টি তালিকা থেকে আমরা যাচাই-বাছাই করে ২৪জনের তালিকা ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম, সেখান থেকে প্রকৃত অসচ্ছল ক্রীড়াসেবীরা বাদ পরল কীভাবে এটা আমার বোধগম্য নয়।

পটুয়াখালীর সাবেক খেলোয়াড় মো. শহিদুল ইসলাম খান সাহান জানান, অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে গেছে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন। যারা প্রকৃত অসচ্ছল ক্রীড়াসেবী, যারা এক বেলা খাবার খেতে পারেনা, বিনা চিকিৎসায় জীবন যাপন করছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে ওই আবু তাহের সাহেব বিত্তশালীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও বিল্ডিংয়ের মালিক তাদের নাম রয়েছে তালিকায়।

শহিদুল ইসলাম জানান, এখনও যেহেতু সময় আছে সেহেতু পটুয়াখালীর ছয় থেকে সাতজন প্রকৃত অসচ্ছল ক্রীড়াসেবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের এই অনুদান তাদেরকে দেয়া হোক।

সাবেক খেলোয়াড় কাওসার হোসেন জানান, তালিকায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার ১০নং কালিকাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জলিলের নামও রয়েছে। অথচ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ চলমান।

এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টেট আবু তাহের মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি শুধু চেক হলে বিতরণ করি আর ডাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এ ছাড়া, তালিকা প্রনয়নের জন্য মন্ত্রী, সচিবসহ মোট ১১জন সদস্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার পক্ষে তালিকায় নাম বদল করা এটা হাস্যকর ব্যপার।’

এ বিভাগের আরো খবর