ভাগ্য আপনাকে কী উপহার দেবে তা বলা মুশকিল। এই দেখুন না, টোকিও অলিম্পিকসের আগেও কেউই যাকে হিসাবের খাতায় রাখেনি, এমনকি ফাইনালেও ছিলেন আলোচনার বাইরে, সেই ছেলেটিই কিনা পরলেন পৃথিবীর দ্রুততম মানবের মুকুট।
বলা হচ্ছে ইতালির স্প্রিন্টার লেমন্ট মার্সেল জ্যাকবসের কথা।
আমেরিকান বাবা ও ইতালিয়ান মায়ের ছেলে জ্যাকবসের হাত ধরে অলিম্পিকস ইতিহাসের ১০০ মিটারে প্রথম স্বর্ণ পদকের দেখা পেল ইতালি।
মজার বিষয় হলো, ক্যারিয়ার হিসেবে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যাকে বেছে নিতে চেয়েছিলেন জ্যাকবস। এর থেকে অবাক করার মতো বিষয়, মাত্র তিন বছর আগেও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়াতেন না এই ইতালির স্প্রিন্টার।
জ্যাকবসের প্রিয় ইভেন্ট ছিল লং জাম্প। কিশোর জীবনে কখনও ১০০ মিটারে দৌড়াননি। ২০১৭ সালে ইতালির জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে লং জাম্পে স্বর্ণ জেতেন তিনি।
লং জাম্পেও বেশ গতি নিয়ে দৌড়াতে হয়। সেই বিশ্বাস থেকে ২০১৮ সালে প্রথমবার ঘরোয়া ট্র্যাকে ১০০ মিটারে দৌড়ান জ্যাকবস।
প্রথমবারই ইতালির জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হন। পরে টানা চারবার স্বর্ণ জেতেন।
বাকি গল্পটা কেবলই এগিয়ে যাওয়ার। ২০২১ সালের আগে কখনই এই ইভেন্টে ১০ সেকেন্ডের নিচে নামতে পারেননি জ্যাকবস। চলতি বছরই বিশ্বের অন্যতম স্প্রিন্ট প্রতিযোগিতা মোনাকোর হারকিউলিসে প্রথমবার ৯.৯৫ সেকেন্ড টাইমিংয়ে রেস শেষ করেন তিনি।
টোকিওর ট্র্যাকে দেখা যাচ্ছে শুরুতে তিন নম্বর লেনে ফ্রেডের থেকে পিছিয়ে ছিলেন জ্যাকবস। ছবি: এএফপি
এটা ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং হলেও সন্তুষ্ট থাকেননি জ্যাকবস। আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তার ফল হাতে-নাতে পেলেন টোকিও অলিম্পিকসে।
১০০ মিটার স্প্রিন্টের বাছাইপর্বের হিটে নিজের ক্যারিয়ার সেরা স্কোর ছাড়িয়ে গড়েন নতুন রেকর্ড। ৯.৯৪ সেকেন্ড টাইমিংয়ে নিশ্চিত করেন সেমি-ফাইনাল। সেমিতে ছাড়িয়ে গেলেন আরও একধাপ। ৯.৮৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন।
ফাইনালে নিজেকে ছাড়িয়ে তো গেলেনই, সঙ্গে ইউরোপিয়ান রেকর্ড গড়ে ফ্রেডদের ছাপিয়ে বনে গেলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব।
এমন অর্জনের আভাস ২০১৯ সালেই দিয়েছিলেন জ্যাকবস। স্কাই স্পোর্টসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যদি জোর দাও এবং লেগে থাকো, তাহলে তুমি পৌঁছাবেই এবং জিতবেই।’
৯.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ইতালিকে ১০০ মিটারে প্রথম স্বর্ণ উপহার দেন জ্যাকবস। ছবি: এএফপি
হলোও তাই। নামের পাশে যুক্ত হলো পৃথিবীর দ্রুততম মানবের স্বীকৃতি।
দারুণ স্টাইলেই স্প্রিন্ট শেষ করেন জ্যাকবস। শুরুটা সাতজনের মধ্যে দ্বিতীয় সবচেয়ে বাজে হয় জ্যাকবসের। প্রথম ৫০ মিটার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড কার্লির থেকে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এরপরে বিদ্যুৎ বেগে সবাইকে ছাড়িয়ে যান জ্যাকবস।