বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাত ফুটবলার থেকে দেশসেরা স্প্রিন্টার জহির

  •    
  • ২৬ মে, ২০২১ ২২:৫১

প্রথমে বাবা মা বকাবকি করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ফুটবল অনুশীলন করার জন্য ভর্তি করায় ‘ফর ফুটবল শেরপুর’ এর কোচ সাধান বসাকের কাছে। সেখানে সে ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়। এখান থেকেই জন্ম হয় দেশসেরা স্প্রিন্টার জহিরের।

জহিরের জীবন সিনেমা থেকে কোনো অংশে কম নয়। ছিলেন প্রচণ্ড ডানপিটে। ভীষণ খেলা পাগল ছেলে। পড়াশুনায় একেবারে অমনোযোগী। স্কুলে অনিয়মিত এই ছেলেটা একসময় হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার।

তেমনটা হয়নি। ফুটবলার হতে না পারলেও ক্রীড়ার আরেক ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন জহির। শেরপুরের ফুটবল জগত ছেড়ে হয়ে গেছেন দেশসেরা স্প্রিন্টার। আঞ্চলিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে শুধু স্বর্ণই জেতেননি ভেঙে গড়েছেন নতুন রেকর্ডও।

গল্পের শুরুটা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে।

নিজ পুত্র সন্তানদের ভালোভাবে লেখাপড়া করানোর জন্য স্কুল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের দীঘলদি গ্রামের বাড়ী ছেড়ে বসবাস শুরু করেন শেরপুর জেলা শহরের বাইরে পাড়া মহল্লায়।

শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করান বড় ছেলে রাসেল ও দ্বিতীয় পুত্র জহির রায়হানকে। বড় ছেলে রাসেল নিয়মিত স্কুল করলেও ৩য় শ্রেণীতে ওঠার পর খেলা-ধুলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে জহির রায়হান। স্কুলেও উপস্থিত থাকত অনিয়মিত।

প্রথমে বাবা মা বকাবকি করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ফুটবল অনুশীলন করার জন্য ভর্তি করায় ‘ফর ফুটবল শেরপুর’ এর কোচ সাধান বসাকের কাছে। সেখানে সে ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে বিকেএসপি প্রতিভা অন্বেষণ টিম আসে শেরপুরে খেলোয়াড় বাছাই করার জন্য। প্রথম বার বিকেএসপিতে জায়গা না করতে পারলেও পরেরবার ২০১২ সালে অ্যাথলেটিকসে বিকেএসপিতে সুযোগ করে নেন জহির।

প্রথমে একমাস প্রশিক্ষণ করে বাছাইয়ে টিকে যান। পরে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিকেএসপিতে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পান জহির। এর পর থেকেই তার সামনে চলা।

জহির রায়হান দেশের বড়বড় আসরে অনেক পুরস্কার জিতেছেন। ৪০০ মিটারে ৪৬.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেশীয় আসরে ৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

এছাড়া ওয়ার্ল্ড ২০১৭ সালের কেনিয়ার ইয়ুথ অ্যাথলেটিকস ও থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইয়ুথ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০মিটার ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে হিটে উত্তীর্ণ হয়ে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন।

শেরপুর জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছেন জহির। ছবি: নিউজবাংলা

এছাড়া ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় সাউথ এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৯ সালে কাতারে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস, ২৩তম এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং নেপালে ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেছেন জহির। তার এ সাফল্য দেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে তাকে পেটি অফিসার হিসেবে চাকুরী দেয়া হয়। এতে খুশি জহির ও তার পরিবার।

গত সপ্তাহে স্বপ্নপূরণ হয় এই স্প্রিন্টারের। ওয়াইল্ড কার্ডে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পান। ফুটবলার থেকে স্প্রিন্টার হওয়ার গল্পটা নিজের মুখেই নিউজবাংলাকে জানালেন শেরপুরের এই কৃতি অ্যাথলেট।

বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই খেলা পাগল ছিলাম। প্রথমে আমার বাবা মা আমাকে লেখা পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও পরবর্তীতে সহযোগিতা করেছেন। প্রথমে ফুটবল দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে বাবার ইচ্ছেতে অ্যাথলেটিকসে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে সক্ষম হই।’

অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে বাবা-মার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে বলে জানান জহির, ‘আমার বাবা-মার আশা পুরণ করতে পেরেছি। এ জন্য আমার কোচ স্যারসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আর সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেন টোকিও অলিম্পিকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারি।’

ছেলের সাফল্যে খুশি তারা বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও মা শিখা বেগম। বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালেও তার খেলার প্রতি টান ছিলো বেশী। তাই আমার বড় ছেলের পরামর্শে আমি তাকে খেলাধুলার চর্চা করাতে আগ্রহী হয়ে ওঠি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে উপহার নিচ্ছেন অ্যাথলেট জহির। ছবি: নিউজবাংলা

পরিবারের দ্বিতীয় পুত্র জহির। ছেলের জন্য দোয়া চাইলেন তার মা শিখা বেগম, ‘আমার ছেলে যাতে আরো সাফল্য অর্জন করতে পারে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

জহির রায়হানের প্রথম কোচ সাধন বসাক জানান, 'জহির প্রথমে আমার কাছে অনুশীলন করে। তাকে অনুশীলন দেখে প্রথম থেকেই আমি ভেবেছি সে একদিন বড় কিছু করতে পারবে। আজ সেটাই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি।’

শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সম্পাদক মানিক দত্ত জানান, ‘শেরপুরের ক্রীড়াপ্রেমিসহ সর্বস্তরের মানুষ খুশি জহিরের এ কৃতিত্বের জন্যে। এ জন্য তাকে শেরপুর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে সংবর্ধনাও দেয়া হচ্ছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থাও টোকিও অলিম্পিকে জহির ভালো করবে এ প্রত্যাশা করছে।’

টোকিও অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাওয়ায় জাতীয় ৪০০ মিটার চ্যাম্পিয়ন স্প্রিন্টার জহিরকে সংবর্ধনা দিয়েছে শেরপুর জেলা প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। ওই সময় ক্রীড়া সরঞ্জামাদি কেনার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা নগদ অনুদান দেয়া হয়।

জেলার প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘জহির আমাদের অহঙ্কার। সে শুধু শেরপুর নয় সারাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করছে। আমরা আশা করবো, টোকিও অলিম্পিকে সে দেশের জন্য আরও বড় গৌরব বয়ে আনবে।’

এ বিভাগের আরো খবর