২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকস একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মাইকেল ফেলপস ঘোষণা দিয়ে গুণে গুণে আটটি স্বর্ণ জয় করেন ওই আসরে। দেশের সাঁতারের রানী সোনিয়া আক্তার টুম্পা যেন সেই মাইকেল ফেলপসেরই প্রতিচ্ছ্ববি।
সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ গেমসের আসরে সাঁতার ডিসিপ্লিনে টুম্পাও ফেলপসের মতো গুণে গুণে লুফিয়ে নিয়েছেন আটটি স্বর্ণ।
শুধু এই আসরেই নয় গত ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসের আসরে ছয়টি স্বর্ণসহ মোট ১০টা পদক জিতেছিলেন এই সাঁতারকন্যা। এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন আরেক ধাপ।
ব্যক্তিগত পাঁচ আর রিলেতে তিন স্বর্ণসহ ১১ ইভেন্টে অংশ নিয়ে সবগুলোতেই পদক উপহার দিয়েছেন টুম্পা। সবমিলে বাংলাদেশ গেমস ক্যারিয়ারে ২১টি পদক জমা হলো তার ঝুঁলিতে।
যার ফলে দেশের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
১০ দিন ধরে চলা দেশের সর্ববৃহৎ আসরের ৩১ ডিসিপ্লিনে অংশ নেয়া প্রায় আট হাজার ক্রীড়াবিদের মধ্যে সর্বাধিক স্বর্ণজয়ী অ্যাথলেটের নাম এখন সোনিয়া আক্তার টুম্পা।
এমন অর্জন হবে মোটেও ভাবেননি টুম্পা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের আগেও সত্যি ভাবিনি এতোগুলো পদক পাব। আমরা সেই অর্থে বেশি অনুশীলনই করতে পারেনি। ফিটনেসেরে দরকার ছিল অনেক। ধন্যবাদ দিতে হয় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে। আমাদের জন্য শীতের মধ্যে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’
সবমিলে বাংলাদেশ গেমস আসরের ক্যারিয়ারে ২১ পদক জিতেছেন টুম্পা। ছবি: সংগৃহীত
এবার ১১টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন টুম্পা। এতোগুলো ইভেন্টে অংশ নিতে হলে বিশ্ব সেরা ফিটনেসও থাকতে হয় একজন সাঁতারুর। সেটা মোটেও সহজ ছিল না তার জন্য।
বলেন, ‘আসিফ রেজা (সাঁতারু ও টুম্পার স্বামী) ও আমি দুজন একই সংস্থায় খেলছি। আমাদের অনুশীলনের ধরনও এক। অনুশীলনে একে অপরকে সহায়তা করছি। আসিফ এগিয়ে এসে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে। আমিও তার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা পরস্পরকে উৎসাহিত করছি, অনুপ্রাণিত করছি।’
এমন সাফল্যের পেছনে তিন কোচ মাহবুবুর রহমান, রুবেল রানা, জুয়েল আহমেদ কৃতজ্ঞা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সবসময় আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পুলের মধ্যে রেখেছেন। সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। যার ফলে আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’
টুম্পা শুধু নিজেই আলো ছড়াননি সাঁতার ডিসিপ্লিনে নৌ বাহিনীকেও চ্যাম্পিয়ন করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন।
বাংলাদেশ গেমসের এই আসরে মোট ৪২ টি ইভেন্টে ৩৩টি স্বর্ণ, ২৪ টি রৌপ্য, ১৪টি ব্রোঞ্জসহ সর্বোচ্চ ৭১টি পদক অর্জন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্জন ৯টি স্বর্ণ, ১৭ রৌপ্য, ১৭ ব্রোঞ্জসহ মোট ৪৩টি পদক।
বাংলাদেশ গেমসের এই আসরে মোট ৪২ টি ইভেন্টে ৩৩টি স্বর্ণ, ২৪ টি রৌপ্য, ১৪টি ব্রোঞ্জসহ সর্বোচ্চ ৭১টি পদক অর্জন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী
গত ফেব্রুয়ারিতে আরেক সাঁতারু আসিফ রেজার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন টুম্পা। স্বামী আসিফও সাঁতারের দ্রুততম মানব। নিজেও দ্রুততম মানবী। দু’জন দু’জনকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেন জানান টুম্পা।
‘প্রতিযোগিতা চলাকালে আসিফের উপস্থিতি আমার জন্য বড় শক্তি, আসিফও আমাকে পাশে পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়। এটা দু'জনের জন্য খুবই ভাল লাগার বিষয়।’
২০০৩ সালে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে সাঁতার ক্যারিয়ার শুরু টুম্পার। ২০০৪ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। নিজের নামের পাশে কিংবদন্তি ফেলপসের নাম উচ্চারিত হওয়ার বিষয়কে সম্মানের সঙ্গে দেখছেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে আরেক সাঁতারু আসিফ রেজার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন টুম্পা। দেশের দ্রুততম মানব-মানবী এখন এই জুটি। ছবি: সংগৃহীত
ফেলপসের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা জানান তিনি। বলেন, ‘রিও অলিম্পিকে ফেলপসের সাঁতার দেখেছিলাম। কী যে দারুণ এক অনুভূতি। আমার আইডলের নাম আমার পাশে উচ্চারিত হচ্ছে এটা অনেক অনুপ্রেরণার।’
এখানেই থেমে থাকতে চান না। সামনের টোকিও অলিম্পিকেও সুযোগ করে নিতে চান দেশের দ্রুততম মানবী। এজন্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতে চান তিনি।
বলেন, ‘বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনকে উদ্যোগী হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে আমাদের। আমরা সারাবছর অনুশীলনের সুযোগ পাই না। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারলে সারাবছর প্রস্তুতির জন্য হলেও অনুশীলন করতে পারতাম। টাইমিং, ফিটনেস ও স্ট্যামিনা ভালো হতো।’