বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমি ও কোচের অভাবে উঠতি ক্রিকেটাররা

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ১৭:২৮

খেলা শেখার জন্য ব্যাঙের ছাতার মত অ্যাকাডেমি গড়ে উঠলেও সেখানেও রয়েছে মানসম্পন্ন কোচের সংকট। ঢাকার বাইরে মাঠ থাকলেও অ্যাকাডেমি রয়েছে হাতে গোনা।

মাদারীপুরের ১৪ বছরের কিশোর ফাহাদের (ছদ্মনাম) স্বপ্ন পেস বোলার হওয়ার। স্থানীয় ম্যাচগুলোতে দারুণ বোলিং করে এলাকার সবার নজরে আসলেও নিজ জেলায় অ্যাকাডেমির অভাবে প্রতিভার বিকাশ হয়নি এই কিশোরের। নিয়মিত ঢাকায় এসে কোনো অ্যাকাডেমিতে কোচিং করাটাও ছিল তার জন্য সময় ও অর্থ সাপেক্ষ। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খুব বেশি এগোতে পারেননি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। 

বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোরের অবস্থা ফাহাদের মতো। প্রতিভা থাকলেও শেখার জায়গার অভাবে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন ছাড়তে হচ্ছে কাঁচা বয়সেই।

উলটো ছবিও আছে। হাতের কাছে অ্যাকাডেমি থাকলেও সেখানে সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রতিভা বিকশিত হয়নি অনেকেরই। তাদের মধ্যে একজন রাহাত চৌধুরী।

১৯ বছর বয়সী এই কিশোর ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ঢাকার একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু নামে অ্যাকাডেমি হলেও, বাস্তবিকভাবে সেখানে দুই বছরে ক্রিকেট শিখতে পেরেছেন সামান্যই। রাহাত জানান, ‘কোচদের কাছে ছাত্রদের তুলনায় মায়া বেশি ছিল টাকার। যেখানে খেলোয়াড় থেকে ৫০-১০০ টাকা নিলেই হয় একটি ম্যাচের জন্য, সেখানে তারা নিতেন ৫০০ টাকারও বেশি।’

রাহাত আরও জানান, খেলার মাঠ পরিচর্যার ক্ষেত্রেও উদাসীন ছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। অ্যাকাডেমি থেকে গিয়ে পেশাদার ক্রিকেট খেলবেন, তেমন কোনো সুযোগও ছিলো না।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এমন চিত্র অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত দুই দশকে দেশের ক্রিকেট দেখেছে অভাবনীয় সাফল্য। সঙ্গে বেড়েছে পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেবার প্রবণতা।

একজন খেলোয়াড়ের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা ধারাবাহিক। নিরলস পরিশ্রম, নিয়মিত অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন একজন উঠতি ক্রীড়াবিদের।

তাদের খেলা শেখার জন্য ব্যাঙের ছাতার মত অ্যাকাডেমি গড়ে উঠলেও সেখানেও রয়েছে মানসম্পন্ন কোচের সংকট। ঢাকার বাইরে মাঠ থাকলেও অ্যাকাডেমি রয়েছে হাতে গোনা।

উত্তরা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলছে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণ। ছবি: ফেইসবুক।

 

ঢাকায় মাঠ সংকট, ঢাকার বাইরে অ্যাকাডেমির

শহরায়নের প্রভাবে ঢাকায় বেড়েছে মাঠ সংকট। সে কারণেই পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত খেলোয়াড়। মাঠের অভাবকেই খেলাধুলায় নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহের কারণ মনে করেন বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মাঠ সংকট অবশ্যই একটা বড় কারণ। বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় মাঠ কম থাকার কারণে মানুষের উৎসাহ কমে যাওয়া, খেলাধুলার প্রচলন কমে যাওয়া এটা খুবই স্বাভাবিক।’

নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে একমত ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কোচ আব্দুল মজিদ এবং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কোচ মনিরুল ইসলাম তাজ।

‘পর্যাপ্ত মাঠের অভাব ঢাকায়। এই সমস্যা তো দীর্ঘ দিনের। এটা নিয়ে আর বলে লাভ নেই। আমরা প্রতিদিনই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি,’ বলেন আব্দুল মজিদ।

মনিরুল ইসলাম তাজ বলেন, ‘অবশ্যই এটা (মাঠ সংকট) একটি বাধা। এটার কারণেই আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এটা যদি হতো তাহলে আরও কিছু প্লেয়ার বের হতো।’

ঢাকায় অবশ্য ক্রিকেট অ্যাকাডেমির অভাব নেই। নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, ঢাকায় অ্যাকাডেমি আছে ১০০-১২০টি । পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ নেই সেখানে। ঢাকার বাইরের অ্যাকাডেমি সংকটও ফুটে উঠল তার কথায়।‘ঢাকায় অনেক অ্যাকাডেমি আছে। বাইরে সেভাবে নেই। ঢাকায় হয়তো ১০০-১২০টা অ্যাকাডেমি আছে। তার মধ্যে অনেকগুলোতে ভালো মানের উইকেট নেই। কোচ নেই৷ কাজেই অ্যাকাডেমির সংখ্যা কত সেটা খুব বড় ব্যাপার নয়’, বলেন ফাহিম। ইন্দিরা ক্রীড়া চক্রের কোচ আব্দুল মজিদও জানান, ঢাকার বাইরে অ্যাকাডেমির সংখ্যা কম এবং বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের পক্ষেই ঢাকায় এসে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে অ্যাকাডেমি সংখ্যায় কম কিন্তু মাঠ অনেক বেশি। (এটি খেলোয়াড়দের জন্য) অবশ্যই কঠিন। কারণ সবার পক্ষে তো আর ঢাকায় এসে, ট্রেনিং করে বেড়ে ওঠাটা সম্ভব হয় না’।

মানসম্পন্ন কোচের অভাব দেশজুড়ে

ঢাকায় প্রচুর অ্যাকাডেমি থাকলেও মনিরুল ইসলাম মনে করেন, মানসম্পন্ন কোচের অভাবও খেলোয়াড় না উঠে আসার অন্যতম একটি কারণ।

‘অ্যাকাডেমিগুলোয় মানসম্পন্ন কোচের অভাব আছে। দেশে অনেক অ্যাকাডেমি আছে কিন্তু সব জায়গায় কোয়ালিটি কোচ নেই। মাঠের পাশাপাশি কোচের অভাবটাও (খেলোয়াড় উঠে না আসার) একটি কারণ’, মনিরুল জানান।

নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, কোচদের মূল্যায়নের সংস্কৃতি নেই বাংলাদেশে। খেলোয়াড় গড়ে তোলার বা প্রস্তুত করবার জন্য যে অবকাঠামো, সেরকম কিছু কোচদের জন্য নেই। ‘ভালো খেলোয়াড় খোঁজার জন্য আমাদের দেশে এখন একটা অবকাঠামো আছে। যেমন, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮ - সেখানে যদি খুব ভালো করে তাহলে আমরা বলি যে তার সম্ভাবনা আছে জাতীয় দলে খেলার। এভাবে কোচ, ফিজিও, ট্রেনার- সবারই এমন ধাপ পার করে আসা উচিত।

শেখ জামাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলছে প্রশিক্ষণ। ছবি: ফেইসবুক।

 

‘কেউ যদি জেলা পর্যায়ে কোচ হিসেবে ভালো করে, তাকে পরবর্তীতে বিভাগীয় পর্যায়ে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। রিওয়ার্ডশিপের ব্যাপারটা নিয়ে আসতে হবে। সেখানে ভালো করলে ধাপে ধাপে তাদেরকে অ্যাকাডেমি দল, এ দল, হাই পারফরম্যান্স দলের সাথে আমরা সংযুক্ত করতে পারি’, বলেন ফাহিম।নাজমুল আবেদীনে মতে এখন যে কেউই কোচ হচ্ছে। তবে কোচ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যে জ্ঞান সেটি নেই অনেকেরই।

তিনি বলেন, ‘কোচদের শিক্ষার বিষয়টা আমাদের দেশে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত। একজন বিশ্বমানের কোচ হতে গেলে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। জানতে হয়। আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতিটাই দুর্ভাগ্যজনকভাবে গড়ে ওঠেনি। এখন যে কেউ আসতে পারে এবং কোচ হতে পারে।’

দেশের পেশাদার ক্লাবগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তালিকাভুক্ত। তাদের অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়েরা সুযোগ পান বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলার। নাজমুল আবেদীনের মতে অধিকাংশ ক্লাবেই বছরজুড়ে করানো হয় শুধু অনুশীলন। যা মোটেও খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে না।

‘ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে আপনাকে খেলে শিখতে হবে। আমাদের অনেক অ্যাকাডেমি আছে। যেখানে সারা বছর অনুশীলন করানো হয়। অথচ এভাবে খেলা শেখা সম্ভব না। বরং, আমাদের উচিত খেলার সুযোগ করে দেয়া। তখন দেখা যাবে খেলতে খেলতেই তারা অনেক কিছু শিখেছে। ভিত্তিটাও শক্ত হয়েছে’, বলেন নাজমুল।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ঊঠলেও পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে ঝরে পড়ছে অধিকাংশ শিশু-কিশোর । ছবি: সাইফুল ইসলাম।

শুরু হয়েছে অনলাইন অ্যাকাডেমি

মাঠ ও মানসম্পন্ন অ্যাকাডেমির বিকল্প হিসেবে অনেকেই ঝুঁকছেন ভার্চুয়াল সমাধানের দিকে। ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেরিতে হলেও ঢাকার শিশু-কিশোর এবং উঠতি খেলোয়াড়দের জন্য শুরু হয়েছে অনলাইন কোচিং প্ল্যাটফর্ম।

বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল বা ইউটিউব চ্যানেল এরই মধ্যে অনিয়মিত, আধা নিয়মিত ভাবে ক্রীড়া কোচিং বা টিপস দিয়ে থাকলেও সম্প্রতি শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন অ্যাকাডেমি।

‘খেলবেই বাংলাদেশ’ নামের এই প্ল্যাটফর্মে ফুটবল ও ক্রিকেটের ক্লাস নিচ্ছেন সাইফুল বারী টিটু এবং শাহরিয়ার নাফীসের মতো স্বনামধন্যরা।

এর প্রতিষ্ঠাতা কাজী সাবিরের লক্ষ্য অনলাইনে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়া।

‘ঢাকার বাইরে কোয়ালিটি কোচিংয়ের অভাব আছে। জেলা পর্যায়ের কোচেরা ট্রেনিং দিচ্ছেন। কিন্তু এর পরের পর্যায়ে প্রশিক্ষণ তারা পায় না। শাহরিয়ার নাফীস, সাইফুল বারী টিটু এখানে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন। আমরা সু্যোগটা তৈরি করে দিতে চাই’, বলেন সাবির।

এ বিভাগের আরো খবর