শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়ার কথা জানানোর দুই সপ্তাহ পর এই জোটের শরিক ১২টি দল মিলে গঠন করল আলাদা জোট।
নতুন এই জোট বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গেই একমত পোষণ করেছে। জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দলটির তোলা ১০ দফা দাবি এবং ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ ঘোষণা করা ২৭ দফা রূপরেখার প্রতি তারা একমত।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়।
- আরও পড়ুন: জোট ভাঙল বিএনপি, জানে না শরিকরা
এই সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য জানানো হয়, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিএনপি তার শরিকদেরকে ডেকে ২০ দলীয় জোটের নাম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে। এ কারণেই তারা নতুন এই জোট গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন।
- আরও পড়ুন: বিএনপির জোট আর নেই, অবশেষে ফখরুলের ঘোষণা
- আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছেদে কতটা পাল্টাবে রাজনীতি
- আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত নিয়ে বিএনপির ‘লুকোচুরি’
২০ দলীয় জোট ভাঙার আগে বিএনপি গত নির্বাচনে গড়ে তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও কার্যত বিলোপ করে দেয়। তবে সেখানেও দেয়া হয়নি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। তবে শরিকরা জানেন বাস্তবতা। সেই শরিকদের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এই মঞ্চও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে একমত।
- আরও পড়ুন: ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব নেই, স্বীকার করলেন ড. কামাল
- আরও পড়ুন: ড. কামালকে ডাকছে না বিএনপি
- আরও পড়ুন: আমি গাধা, তাই ঐক্যফ্রন্টে গিয়েছি: কাদের সিদ্দিকী
আবার ২০ দলীয় জোটে না থাকলেও জামায়াতও থাকছে যুগপৎ আন্দোলনে। যদিও বিএনপি তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছে না।
কারা আছে এই জোটে
এই জোটের দলগুলো হলো: মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাফর), সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা বিএলিডিপি (একাংশ), জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, আবদুর রকীবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), নুরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি এবং তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি বা জাগপা (একাংশ)।
- আরও পড়ুন: বিএনপির ওপর জামায়াত নাখোশ ‘তিন কারণে’
- আরও পড়ুন: দুই বিবেচনায় জামায়াত-বিচ্ছেদ গোপন বিএনপির
- আরও পড়ুন: ১৬ বছর পর বিএনপি কার্যালয়ে অলি, চাইলেন ‘শক্ত কর্মসূচি’
সাত সিদ্ধান্ত
‘বিলুপ্ত’ ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সাত দফা সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। এগুলো হলো:
#তারা ১২ দল নামে পরিচিত থাকবে এবং সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথের সব কর্মসূচি পালন করবে।
# দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভই তাদের সবার অভিন্ন লক্ষ্য।
# তাদের বিশ্বাস, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থের অনুকূলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করবে।
এই জোট মনে করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দলীয় সরকারের অধীনে বিনা ভোট ও ‘রাতের ভোট’ নামে ‘ভোটারবিহীন কারচুপির নির্বাচন’ হিসেবে দেশে-বিদেশে সমালোচিত ও নিন্দনীয় হয়েছে এবং নির্বাচনের সকল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
তারা এও বলেছেম অগণতান্ত্রিক, অসংবিধানিক এবং সম্পূর্ণ গায়ের জোরে একটি অনির্বাচিত সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতাসীন ছিল এবং আছে।
# তারা মনে করে ২০২৪ সালে হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও জনগণের ভোটকে পাশ কাটিয়ে নতুন কোনো কলা-কৌশল খাটিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনের হ্যাটট্রিক করতে চাচ্ছে সরকার।
তবে জনগণ এবারে রুখে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে জোট বলেছে, ‘বারবার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবে না দেব নাকো আর ধান’।
১২ দল মনে করে বিএনপির ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ প্রমাণ করেছে দেশের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক গণজাগরণ।
তারা এও বলেছে, সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। তাই শুরু করেছে হামলা মামলা গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা।
- আরও পড়ুন: পঞ্চম দল হিসেবে বিএনপির জোট ছাড়ল খেলাফত মজলিস
- আরও পড়ুন: শরিকরা চলে গেলে বিএনপি খুশি
# ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার জন্য সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে বিএনপির ১০ দফা দাবি এবং ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবেও ১২ দল একাত্মতা ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এবং সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি ঘোষিত সব আহ্বান এবং আন্দোলনের যুগপৎ অংশগ্রহণ করার অঙ্গীকারও করছে।
# সরকারকে পদত্যাকে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ দল বিএনপির ঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।
এবং
# নতুন এই জোট মনে করে দেশ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনীত। দীর্ঘ ১৪ বছরের লুটপাট ও দুঃশাসন জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে।