বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জামায়াতে ইসলামীও একই দিন একই কর্মসূচি ঘোষণার পরও যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের বিষয়ে স্পষ্ট জবাব দিচ্ছে না বিএনপি।
রোববার বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি জবাব দেননি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যিনি বিলুপ্ত করে দেয়া ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ছিলেন। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও ধোঁয়াশায় রাখেন সাংবাদিকদের।
নজরুলের কাছে প্রশ্ন ছিল, বিএনপি যে যুগপৎ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে, তাতে জামায়াতও থাকছে কি না। জবাবে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদের এই সদস্য বললেন, ‘আমরা কিছু দাবি নিয়ে সব গণতান্ত্রিক ও দল প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছি যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও আমাদের যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়নি। কাজেই এখন বলা যাবে না কে আছে, কে নেই।’
১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বেঁধে দুই বছরের পরের নির্বাচনে বিএনপি ভূমিধস জয় পেলেও পরে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপিকে বড় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ধপাসের পর দলটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে জামায়াত যোগের বিষয়টি উঠে আসার পর এই জোট ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করেন দলটির নেতারাই।
তার পরও বিএনপি এই জোট চালিয়ে যায়। তবে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেই বিএনপি বিষয়টি নিয়ে ভুগেছে। ভোটের আগে আগে ভারতীয় একটি প্রভাবশালী দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, জামায়াত জোটে আছে জানতে পারলে তারা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কই গড়তেন না।
এবারও বৃহত্তর বা যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামায়াত ইস্যু কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না, এই ভাবনা থেকে দলটির সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য আলোচনায় যায়নি দলটি। যদিও গত আগস্টে এই জোট ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে কুমিল্লা ইউনিটের রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আপত্তি নেই বলে জানান।
অবশেষে গত ৮ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তাদের জোট আর নেই। তারা যুগপৎ আন্দোলন করবেন।
তার পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে ‘যুগপতের সঙ্গীদের’ ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তবে কোনো দলের কোনো নেতা যাননি সেখানে।
তবে সেই সমাবেশে বিএনপি যে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে এবং তা আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর যে গণমিছিলের ডাক দেয়, তার সমর্থনে বিলোপ করে দেয়া ২০ দলের শরিকরাই আগে সাড়া দেয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, বিএনপির তোলা দাবি নিয়ে তারাও ২৪ ডিসেম্বর একই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে।
তবে সেই কর্মসূচির দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় দলটি বিএনপিকে ভর্ৎসনা করে। বলে, বিএনপি সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। এরপর বিএনপি ১৩ ডিসেম্বর জানায়, তাদের কর্মসূচি স্থগিত। পর দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি।
চার দিন পর বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, তাদের গণমিছিল হবে ৩০ ডিসেম্বর। তার দুই দিন পর আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতও তাদের মিছিল পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নিয়ে যায়।
জামায়াত ও বিএনপি যোগাযোগ করেই কর্মসূচি দিচ্ছে- এই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হলেও ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন তা স্বীকার করতে চাননি।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছি। এই আন্দোলনে কে আসবে না আসবে সেটা তাদের বিষয়। যারা এই সরকারের বিদায় চায়, যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা চায়, তারা একমত হয়ে তাদের অবস্থান থেকে আন্দোলন করলে আমরা তো নিষেধ করতে পারব না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখুন যুগপৎ-এর একটা যথার্থ মানে আছে। স্ব-স্ব অবস্থান। এখন এই সরকারের পতন নিয়ে যারা ভাবছে তারা একত্র হবে এটাই স্বাভাবিক। জামায়াত বলে কথা না, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আরও যেসব সমমনা দল আছে সবাই এই যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদার।
‘এখন জামায়াত যদি আমাদের ১০ দফা দাবিতে সহমত জানান, সেটাতে হাইলাইটের কিছু নেই। বাকি দলগুলোর মতোই তারাও একটা অংশ এই সরকারবিরোধী কর্মসূচির।’
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক কবে
সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক সুতায় দাঁড় করিয়ে একই দিন একই কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ করতে বিএনপির এই চেষ্টার শুরু গত ২৪ মে। সেদিন মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রথম দফার সংলাপ শুরু হয়। যা ৩ আগস্ট গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে শেষ হয়।
প্রতিটি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুই পক্ষ থেকেই ঘোষণা আসে, যুগপৎ আন্দোলনে নামবে তারা।
আগেভাগে গণমাধ্যমকর্মীদের সময় জানিয়ে আলোচনার স্থলে উপস্থিত থাকতেও বলা হয়।
তবে সে সময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি বিএনপি। আর জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও জানানো হয়নি।
তবে আলোচনা যে হয়েছে, সেটি জানা গেছে জামায়াতের তরফ থেকে। ২৭ আগস্ট কুমিল্লার একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট আর নেই। তবে তারা যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গেই থাকবেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে, নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথচলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।’
গত ২ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এবারও জামায়াতের সঙ্গে কবে কোথায় বসা হয়েছে, সে বিষয়টি জানানো হয়নি।
তবে বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বয়ং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যিনি দলটির সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে সাড়ে তিন মাস কিছুই বলেননি। তবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের আগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে একটি বিদেশি সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধির প্রশ্নে বিষয়টি স্বীকার করেন।
এএফপির প্রতিনিধির প্রশ্নে সেদিন তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা বলেছি, অন্য দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচি পালিত হবে একই সঙ্গে, যাকে আমরা যুগপৎ বলে থাকি। সবাই নিজের পছন্দের এলাকা বা অফিসে কর্মসূচি পালন করবে।’
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমার জানা মতে হয়নি।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা একজন একই প্রশ্নে বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন:দেশের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ সব সংস্কার শেষে নির্বাচন চান বলে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) এক জরিপে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সারা দেশে জরিপটি চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি।
এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। আর সবগুলো সংস্কার করার পরই নির্বাচন আয়োজন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে দেখা যায়, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোক চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) ভোটগ্রহণ হবে রোববার। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ২৯ মে এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা লেগেই আছে।
সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগেও কাঠালিয়া এবং রাজাপুর উপজেলায় প্রার্থীদের সমর্থকরা কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আমির হোসেন আমু এমপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও রয়েছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (নলছিটি ও সদর) ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই নির্বাচনের আগেও ঝালকাঠি সদরে এমপি আমু সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এতোটাই কম ছিল যা চোখে পড়ার মতো।
সেই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই রাজাপুরে ভোটের আগ মুহূর্তে এ ধরনের হামলার পর কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন নারীসহ বেশির ভাগ ভোটাররা। ঝালকাঠি সদরের মতো একই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায়ও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজাপুরের ভোটারদের পক্ষে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কেন্দ্রে যেতে আমাদের অনীহা।’
সাধারণ ভোটার শাহেদ আলি, পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চালান নিজের সংসার।
তিনি বলেন, ‘মারামারি হইলে যদি মোরা আহত হই, হেলে মোগো ডাক্তার খরচ কেউ দেবে না। তাই ভোট দিতেও যামুনা।’
শাহেদ আলির মতো সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়েছেন এখানকার ভোটাররা, তবে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল পিপিএম বলেন, ‘আগামী ৯ জুন রাজাপুর ও কাঠালিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য শান্তিময় পরিবেশ ভোটারদেরকে উপহার দেয়া হবে। ভোটের আগের দিন থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে দুই উপজেলায়।’
আরও পড়ুন:বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ভোট গণনা চলছে।
সিইসি বলেন, ‘৬০ উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ৯ জনকে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভৈরব উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভালো কাজ হয়েছে।’
ভোট নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, এটা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) বিচার বিশ্লেষণ করবো না।
উপজেলায নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এ দিন ভোরে মারা যান উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের রামপুর চতিলা গ্রামে আলমগীর হোসেন ও আবুল কাশেম। সকাল ১০টায় চতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পর্যায়ক্রমে তাদের জানাজা নামাজ হয়।
স্কুলটিতে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ভোট চলছিল। এমতাবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার খানেক মানুষ অংশ নেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুশফিকুর রহমান সেলিম এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তারা অনেকটা অলস সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় জানাজা নামাজে গ্রামের হাজার খানেক মানুষকে স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন। কারণ তারা অধিকাংশই ছিলেন ওই কেন্দ্রের ভোটার।
ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৮ জন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচনি অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য