কুমিল্লায় রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে জোট ত্যাগের পেছনে পুরো দায় বিএনপিকে দিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
তার দাবি, এই জোটকে অকার্যকর করে রেখেছিল প্রধান দল বিএনপি। বারবার দেনদরবার করেও তাদেরকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়ানো যায়নি।
সেই সঙ্গে বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে না বলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে হতাশ হওয়ার কথা বলেন জামায়াত নেতা। প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ক্ষমতায় থাকার শেষ দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের প্রসঙ্গ। সেদিনই এই জোট কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার কুমিল্লার রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি এই বক্তব্যে শফিকুর জানান, বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত দলটির সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে তাদের দল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে কিছু স্বীকার করতে চান না। আবার তিনি অস্বীকার করেছেন, এমনও নয়। বলেছেন, সময় এলে সবকিছু বলা যাবে।
জামায়াতের মুখপাত্র ও প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের বক্তব্যও একই। তার দাবি, তাদের আমিরের বক্তব্য আনুষ্ঠানিক নয়। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বিজ্ঞপ্তি আকারেই আসবে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ভূমিকায় অসন্তোষ
জামায়াতের আমির একেবারে শুরুতেই বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা ছিলাম শুনে হয়তো ভাবছেন কী হয়েছে এখন। হ্যাঁ, হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জোট দেশের জন্য উপকারী একটা জোট ছিল। ৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। তার পরে আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বহু চিন্তা করে দেখেছি, এর পর থেকে এই জোট বাংলাদেশের জন্য আর উপকারী জোট নয়।’
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সে সময়ের বিএনপি সরকার। সে সময় সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের এই সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক থাকায় তাকে মেনে না নিয়ে আন্দোলনে ছিল আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিকরা।
এর মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কর্মসূচি ছিল মুক্তাঙ্গন, গুলিস্তান ও পল্টন মোড় ঘিরে। বিএনপির কর্মসূচি ছিল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আর জামায়াতের অবস্থান ছিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে।
বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের লগি-বৈঠার পিটুনিতে মারা যায় জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন। সেদিন জামায়াত কর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি করে কোনো রকমে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারলেও এই মৃত্যু তাদেরকে বিএনপির ওপর অসন্তুষ্ট করে।
এই সংঘর্ষ চলাকালেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। জামায়াতের সে সময়ের আমির মতিউর রহমান নিজামী গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই তাকে বারবার ফোন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীদের পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু দিনভর পুলিশের অবস্থান ছিল নামকাওয়াস্তে। আর বাহিনীটির সদস্যরা বরং আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু বাধা দিচ্ছিলেন না।
জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রাণহানির পর সন্ধ্যায় মোতায়েন হয় সে সময়ের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর।
ততক্ষণে সেদিনের সংঘর্ষের পর সে সময়ের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের প্রাধান্যের বিষয়টি উঠে আসে। এর কয়েক মাস পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জারি হয় জরুরি অবস্থা। ওই মাসের ২২ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল নবম সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির ক্ষমতায় আসা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
কিন্তু সেটি হয়নি। জরুরি অবস্থা জারির প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে যে ভোট হয়, তাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কয়েক বছরে জামায়াতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা ফাঁসিতে ঝুলেছেন।
বিচার চলাকালে মারা গেছেন গোলাম আযম, আবদুস সুবহান বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন। আর আরেক শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে বন্দি।
এই দণ্ড কার্যকর রাজনীতিতে জামায়াতকে ঘিরে তৈরি হওয়া মিথ ভেঙে দিয়েছে। জামায়াত তার সমর্থকদের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করেছিল যে, কেউ তাদের নেতাদেরকে ফাঁসি দিতে পারবে না। এই চেষ্টা করা হলে আরব দেশগুলো বাংলাদেশের শ্রমিকদের ফেরত পাঠাবে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগের দিন থেকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরুর হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু পরে দেখা গেল, জামায়াত আসলে কিছুই করতে পারেনি। এখন এমনকি দলীয় কার্যালয়গুলোও বন্ধ।
জোট নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দল এই জোটকে কার্যকর করার তাদের চিন্তা নাই। তাদের যদি চিন্তা না থাকে, তাহলে তা হবে না।
‘এই বিষয়টা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট, দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে এটা স্বীকার করেছে। …বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।’
শফিকুর বলেন, ‘একটা জোটের সাথে কি কেয়ামত পর্যন্ত থাকব?... কোনো অ্যালায়েন্স আপনারা করবেন না, বাস্তবতাও নাই, পারবেনও না।’
বিএনপি ও জামায়াত আলাদা থাকলেও যোগাযোগ থাকবে বলে জানিয়ে দেন শফিকুল। বিএনপি যে তাদের দাবিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চেষ্টা করছে, তাতে জামায়াতের সায় থাকবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।’
শরিয়া আইন নিয়ে বিএনপির অবস্থানে ভেঙেছে হৃদয়
বছরের পর বছর ধরে দিয়ে আসা স্লোগান ‘আল্লাহর আইন চান, সৎলোকের শাসন চাই’ জামায়াত বলে না ২০০৮ সাল থেকে।
ওই বছর নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে আল্লাহর আইনের কথা তাদের গঠনতন্ত্র থেকে তুলে দিলেও শরিয়া আইনই তাদের রাজনীতির প্রধান বিষয়।
দলটির আশা ছিল, বিএনপিও এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল এ নিয়ে যে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছন, তাতে হৃদয় ভেঙেছে জামায়াতের।
শফিকুর বলেন, ‘(জোটের) প্রধান দলের নেতা তো বলেই ফেলেছেন, আমরা শরিয়া আইন সমর্থন করি না।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ভোটের আগে আগে ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, ‘আমরা জামায়াতের ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হই। বিএনপি কিন্তু জামায়াত নয়। বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি মৌলবাদেও বিশ্বাস করে না। জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের কোনো মোহ নেই।’
এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে সবাই চেষ্টা করার কথাও বলেন শফিকুর। বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে তওফিক দান করেন, তাহলে আগামী দিনগুলোতে আমাদেরকে অনেক বড় প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করার জন্য।’
‘দোয়া করেন, এ সকল ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করেন। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।’
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়: জামায়াত
সেই রুকন সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও জামায়াত আমিরের জোট ছাড়ার বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলতে চান না কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দই কথা বলবেন। আমরা না।’
জামায়াতের আমিরের এই বক্তব্যের ভিডিও অনলাইনে ভেসে বেড়ালেও দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দও স্বীকার করতে চান না জোট ভাঙার বিষয়টি।
এক প্রশ্নে দলটির প্রচার সম্পাদক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা অফিশিয়াল বক্তব্য না। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করে থাকে।‘
দলের রুকন সম্মেলনে আমিরের বক্তব্য যদি আনুষ্ঠানিক না হয়, তাহলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কবে আসবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আমির তো শত শত বক্তব্য দেন। ব্যক্তি ও অফিশিয়াল বক্তব্য এক নয়। এ রকম যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে অফিশিয়ালি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়মতো জানানোর কথা বলেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’
দুই দলের সম্পর্কের নানা সমীকরণ
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটের আলোচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই। জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, তারা সে সময় ১০০টি আসন চেয়েছিল বিএনপির কাছে। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় জোট আর হয়নি। পরে অঘোষিতভাবে ৩৫টি আসনে জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনিময়ে তারাও দেশের বাকি আসনগুলোতে বিএনপির হয়ে কাজ করেছে।
১৯৯৬ সালে বিএনপি ও জামায়াত পুরোপুরি আলাদা নির্বাচন করে। তখন ভরাডুবি হয় জামায়াতের। তারা জেতে মাত্র তিনটি আসনে। এরপর বিএনপি ও জামায়াত দুই পক্ষই একে অপরের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হয় জামায়াত ও বিএনপি। সঙ্গে ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং আজিজুল হকের ইসলামী ঐক্যজোট।
প্রথমে এরশাদ ও পরে আজিজুল হক জোট ছেড়ে দেন। তবে সমালোচনার মধ্যেও জামায়াতকে বিএনপি কখনও ছাড়তে রাজি হয়নি।
দুই বছর পর যে জাতীয় নির্বাচন হয়, তাতে এই জোটের ভূমিধস জয়ের পেছনে দুই দলের ভোট যোগ হওয়াই ছিল প্রধান কারণ।
তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবার জামায়াত সঙ্গ বিএনপির জন্য নেতিবাচক হিসেবেই ধরা দেয়। ওই নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বড় হয়ে ওঠার পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি হয়। স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে সঙ্গী করে ভোটে নেমে দীর্ঘদিনের শক্তিশালী অবস্থানেও বড় ব্যবধানে হেরে যায় বিএনপি।
ওই নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে ১০টি কমিটি গঠন করা হয় বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনার জন্য। এর মধ্যে ৯টি কমিটিই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতাকে দায়ী করে, যা ছিল বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিমত।
নির্বাচনের পর বিএনপির তরুণ নেতারাও প্রকাশ্যেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি তোলেন জামায়াত ছাড়ার।
তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে এবং নির্বাচনের পর সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে জামায়াতকে নিয়েই যোগ দেয় বিএনপি। আর ব্যাপক সহিংসতার পর বিএনপি নেতারা নানাভাবে জামায়াতকে দায় দেন।
ওই নির্বাচনের পর একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট কৌশলগত। সময় এলেই তিনি জামায়াতকে ত্যাগ করবেন।
এসব ঘটনায় আবার জামায়াত মনঃক্ষুণ্ন হয় বিএনপির প্রতি। যদিও তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য আসেনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচারের সময় বিএনপির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতাও পায়নি জামায়াত। এ নিয়েও খেদ আছে দলের নেতাদের মধ্যে।
বিএনপি চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে পরে ২০-দলীয় জোট গড়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট তারা করে গত সংসদ নির্বাচনের আগে।
এর মধ্যে বিএনপির জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গ নানা সময়ই এসেছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সময় এলে তারা জামায়াতকে ছেড়ে দেবেন।
এর মধ্যে ২০২১ সালের শুরুতে বিএনপি এই জোট ত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে আর গণমাধ্যমকে কিছু জানায়নি।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য