বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন মালয়েশিয়ায় অস্থির ছিলেন সালাউদ্দিন-চুন্নুরা

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১৭:২৭

এই খবর শুনে বড় ধাক্কা খেলেন ফুটবলাররা। যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাদের। সেদিনকার ম্যাচটাও বাতিল করতে চেয়েছিল দল। পরে ফিফা আয়োজিত টুর্নামেন্ট বলে ম্যাচ খেললেন। তবে কালো ব্যাজের পাশাপাশি লাল-সবুজ পতাকা অর্ধনমিত রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সবাই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে যখন হত্যা করা হয়, তখন মারদেকা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিল জাতীয় ফুটবল দল।

ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে তখন কুয়ালালামপুরে অস্থিরতা বিরাজ করছিল সালাউদ্দিন-চুন্নুদের ফুটবল শিবিরে।

বিকেলে ম্যাচ থাকায় সেদিন সকালে নাশতা করছিলেন সালাউদ্দিনরা। দলের অধিনায়ক তিনি। এমন সময় এক ভারতীয়ের কাছে অভ্যুত্থানের ঘটনা শোনেন। তখনও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কিছু জানতেন না জাতীয় ফুটবলাররা।

সেই স্মৃতি মনে করে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘১৫ আগস্টে কুয়ালালামপুরে আমাদের ম্যাচ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। খেলা আমাদের বিকেলে। ব্রেকফাস্ট করছিলাম ৯-১০টার দিকে। তখন আমার ও কামালের বন্ধু তান্না আসে হংকং থেকে খেলা দেখার জন্য। ও জানত কামাল এসেছে আমাদের সাথে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আসা হয় নাই কামালের সেটা জানত না।

‘ওই সময়ে একজন শিখ ভদ্রলোক আমাদের সামনে আসলেন। বললেন যে, আমাদের দেশে ক্যু হয়েছে। উনি আর আমাদের বিস্তারিত দিতে পারেননি। তখন তো মোবাইল-টেলিভিশন ছিল না এভাবে। টেলেক্স মেশিনে একটা বার্তা দেখে আমাদের তথ্যটা দিয়েছে।’

এই খবর শুনেই হন্তদন্ত হয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যান সালাউদ্দিনরা।

বাফুফের বর্তমান সভাপতি বিস্তারিত বলেন পুরো ঘটনা।

‘ট্র্যাকস্যুট পরা অবস্থায় আমি আর তান্না ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে। সেখানে গিয়ে মনে হলো শ্মশানঘাট। শুধু একজন রিসেপশনে বসা। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম অ্যাম্বাসেডর আছে? পরে অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করলাম যে ঘটনা কী? তিনিও ডিটেইলস বলতে পারলেন না।’

পরে দুপুর গড়াতে না গড়াতেই পুরো ঘটনা জানতে পারে জাতীয় দল। এই খবর শুনে বড় ধাক্কা খেলেন ফুটবলাররা। যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাদের। সেদিনকার ম্যাচটাও বাতিল করতে চেয়েছিল দল। পরে ফিফা আয়োজিত টুর্নামেন্ট বলে ম্যাচ খেললেন। তবে কালো ব্যাজের পাশাপাশি লাল-সবুজ পতাকা অর্ধনমিত রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সবাই।

সেই ম্যাচে খেলা তারকা ফুটবলার ও বর্তমানে আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই ম্যাচটি খেলতে চাইনি। দেশে এত বড় ঘটনা ঘটে গেছে। এরপর কীভাবে খেলি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে খেলতে হয়েছে।

‘তবে আমরা আয়োজকদের রাজি করিয়েছি কালো ব্যাজ পরে খেলব। খেলার সময় মাঠের বাইরে আমাদের লাল-সবুজ পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ওরাও সহমর্মিতা জানিয়ে সব দাবি মেনে নিয়েছে। ম্যাচটি কোনোমতে খেলে চার গোলে হেরে যাই।’

মারদেকা টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে একটি অনুষ্ঠানে শেষবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জাতীয় ফুটবল দলের। সেই স্মৃতি মনে করতে গিয়ে ভেঙে পড়েন কাজী সালাউদ্দিন। বলেন, ‘আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। ৭ই আগস্ট। বঙ্গবন্ধু কর্নারে দেখবেন জাতীয় দলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি আছে। সেটাই তার সঙ্গে আমাদের শেষ স্মৃতি।’

বন্ধু শেখ কামালেরও যাওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা থাকায় জাতীয় দলের সঙ্গে যাওয়া হয়নি কামালের। ভারাক্রান্ত মনে সালাউদ্দিন সেই স্মৃতি টেনে আনলেন।

তিনি বলেন, ‘কামালের সঙ্গে আমার দেখা হয় ৮ই আগস্টে। মালয়েশিয়ায় মারদেকা টুর্নামেন্ট খেলতে যায় জাতীয় দল। ওই সময় দলের অধিনায়ক ছিলাম। এয়ারপোর্টেও অনেক কথা হয় কামালের সঙ্গে। ইউনিভার্সিটির একটা প্রোগ্রামের জন্য ও যেতে পারে নাই। বলল-তোরা যা। আমি আর পরান পরে যাব তোদের সঙ্গে। আর এশিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাব আমাদের ফুটবল টিম নিয়ে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার কষ্ট আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সালাউদ্দিন। বলেন, ‘১৫ আগস্টের মতো কালো দিন বাংলাদেশে আর আসবে না। প্রচণ্ড কষ্ট হয় মনে করে যে, এই দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক। ওনার ডাকেই আজকে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে আমি এখানে বসে কথা বলতে পারছি স্বাধীন বাঙালি হিসেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর