একই পৃষ্ঠপোষকের অধীনে থাকা দুই দল বসুন্ধরা কিংস ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ম্যাচ ছিল সোমবার। মাঠে নামার ঘণ্টা তিনেক আগে বরখাস্ত হন শেখ জামালের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। ক্লাবের এমন আচমকা সিদ্ধান্তে অবাক হওয়ার পাশাপাশি বিব্রত হয়েছেন শেখ জামালের এই কোচ।
প্রথম দিন কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি হারানোর পেছনের ঘটনা জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ।
তার মতে, পরিকল্পনা করে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পেছনে ক্লাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন দেশের ফুটবলের অভিজ্ঞ এই কোচ।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মানিক বলেন, “আমি নিজেও জানি না কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল। আমি অবাক হয়েছি। যেখানে আমি খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ করেই জানানো হয়, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বিস্তারিত কিছু নেই। ক্লাবে যাওয়ার জন্য বারণ করা হয়েছে। চিঠিতে শুধু লেখা ‘আর প্রয়োজন নেই’।”
পরিকল্পনা করে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান মানিক।বলেন, ‘আমার কাছে এটা প্ল্যানিং মনে হয়েছে। স্থানীয় কোচদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বলতে চাই, ১৫ নম্বর ম্যাচে যখন আরামবাগের কাছে হেরে যাই, ওই দিন আমার সঙ্গে কাদের সাহেব (ক্লাব চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের) কথা বলেছেন। তখন হাফ টাইমের বিরতি চলছে। তিনি ফোন দিয়ে আমাকে বললেন দেখো মানিক, আফসারকে নামাতে পারো কি না। সে গোলটোল পেতে পারে।
‘সেকেন্ড হাফে তাকে নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখানেই কথা শেষ। এরপরে আমরা ৩-১ গোলে ম্যাচ হেরে যাই।’
আরামবাগের অঘটনের পর ঈদের পরদিন কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। সেই বৈঠকেই বরখাস্ত করা হয় দলের গোলকিপিং কোচ শামসুজ্জামান ইউসুফকে। এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রধান কোচ মানিক।
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে চেয়ারম্যান যে ব্যবহার করেছেন, তেমনটা আমার ক্যারিয়ারে পাইনি।’
এ ঘটনার পরপরই নিজ থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মানিক। চাকরি ছাড়ার চিঠি নিয়ে ক্লাব ম্যানেজমেন্টের কাছে যান তিনি।
২০১৯ সালের মার্চে দায়িত্ব পাওয়ার পরে লিগে দল যখন ছয়ে ছিল, সেই দলটাকে এই মৌসুমে সেরা দুইয়ে নিয়ে আসেন মানিক। এবার শিরোপাপ্রত্যাশীদের ছোট্ট তালিকায় কিংসের পর উচ্চারিত হয়েছে শেখ জামালের নাম। প্রথম লেগে কিংস হোঁচট খেয়েছে শেখ জামালের কাছে। দ্বিতীয় লেগের জন্য যখন মানিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এমন অভিজ্ঞতা তাকে চমকে দিয়েছে।
মানিক বলেন, ‘কিংসের ম্যাচটা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এই ম্যাচটা জিতলে কিংসের সঙ্গে টাইটেলে ফাইট করা বা তাদের কিছুদিন আটকে রাখা যেত। আর দ্বিতীয় হওয়া নিশ্চিত হতে পারত। এমন সময়ে আচমকা এই সিদ্ধান্ত।’
ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো সমস্যা দেখেন না মানিক। তার দাবি, গত ঈদের আগেই সব খেলোয়াড়, কোচিং প্যানেলসহ অফিশিয়ালদের বেতন চুকিয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ক্লাবের চেয়ারম্যান মনজুর কাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি জানান, চেয়ারম্যান খেলার বাইরেও অনেক কিছুতেই প্রভাব রাখার চেষ্টা করেন।
মানিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলের নামে দল এটা। দেশের ফুটবলে অনেক কিছু দিয়েছে এই ক্লাব। ক্লাবের চেয়ারম্যান সুস্থ নন। ২০১৬ সালের পরে বাফুফে নির্বাচনের পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার নিজের সম্মানের স্বার্থে তার সরে যাওয়া উচিত।’
দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লাবে নতুন একজন চেয়ারম্যান আসা উচিত। দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, যাতে ওনাকে ক্লাবের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখেন।’
চাকরিচ্যুতের পর আপাতত বিশ্রামে থাকতে চান মানিক। খেলোয়াড়-জীবনের পর কোচিং ক্যারিয়ারও সমৃদ্ধ মানিকের। ১৯৯৬ সাল থেকে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগে কোচিং করিয়ে আসছেন।মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেল ও শেখ জামালের মতো বড় ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মানিক।