শেষ পর্যন্ত তিনি পারলেন। যে আক্ষেপটা তাকে পোড়াচ্ছে দেড় দশক, সেটা দূর হলো। বার্সেলোনার মেসি থেকে অবশেষে আর্জেন্টিনার মেসি হলেন আলবিসেলেস্তে অধিনায়ক।
সেই ২০০৭ সাল থেকে শুরু। একে একে খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ ও চারটি কোপা আমেরিকা। ফাইনাল খেলেছেন চারবার। কোনোবারই ফুটবল দেবতা মুখ ফিরে তাকায়নি।
২০১৪ বিশ্বকাপের পর টানা দুই ফাইনাল হেরেছেন। ২০১৬ কোপার ফাইনাল হারের পর অভিমানে অবসর নেন। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যান বিশ্বকাপের মূল পর্বে।
অন্যদিকে নিজ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জিতে চলেছিলেন একের পর এক শিরোপা। আর্জেন্টিনার প্রিয় সন্তান হয়ে গিয়েছিলেন ‘বার্সেলোনার মেসি’। মোট ৩৬টি শিরোপা জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে।
আর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে তার ট্রফি ক্যাবিনেট ছিল শূন্য। শেষ পর্যন্ত ট্রফি জিতলেন লিওনেল মেসি। টানা ১৪ বছরের ব্যর্থতা দূর হলো অবশেষে।
মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবার আকাশি-সাদা জার্সিতে শিরোপার স্বাদ পেলেন নম্বর টেন।
ফাইনালের শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে সাইড লাইনে কান্নায় ভেঙে পড়েন আর্জেন্টিনার তালিসমান। আর সতীর্থরা সবার আগে ছুটে যান তার কাছে। ঘিরে ধরেন দলনেতাকে।
ফাইনালে গোল করে জয়ের নায়ক আনহেল দি মারিয়া হলেও পুরো টুর্নামেন্ট দলকে টেনেছেন মেসি।
শুধু এবারই কেন? আগের চার ফাইনালে দলকে টেনে তোলার ভার সামলেছেন আধুনিক ফুটবলের এই গ্রেট।
তাই হয়তো শিরোপা জিতে সতীর্থরা বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া এই যোদ্ধাকে সান্ত্বনা ও অভিনন্দন জানাতেই ছুটলেন।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে যেমনটা ভাবা হয়েছিল ঠিক তেমনটাই হলো। ব্রাজিল ডিফেন্স পুরোটা সময় বোতলবন্দি করে রাখল মেসিকে।
সুযোগ যে পাননি এক-দুইবার তা নয়। তবে কাজে লাগাতে পারেননি। ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে এডারসনকে কাছ থেকে একা পেয়েও গোল করতে না পারাটা ছিল অনেকটাই দৃষ্টিকটু।
পুরো টুর্নামেন্টে ৪ গোল ও চার অ্যাসিস্ট করে সেরা গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া মেসি ফাইনালে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
তবে সেসব আজ মাথায় রাখবেন না আর্জেন্টাইন ফ্যানরা। আজ তাদের উৎসবের দিন। ২৮ বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের কোনো শিরোপা উঠেছে প্রিয় দলের হাতে।
একটা ভার যেন নেমে গেছে তাদের বুক থেকে। এখন থেকে অন্তত তাদের আর শিরোপার জন্য হাহাকার করতে হবে না কিছুদিন।
আর আর্জেন্টিনার হয়ে পোডিয়ামে যিনি ট্রফি তুলতে গেলেন, সবচেয়ে বেশি ভারমুক্ত হয়েছেন বোধ হয় তিনিই।
কারণ ক্যারিয়ারের ১৮ বছর পর কয়েক দিন আগেই ৩৪ বছরে পা দেওয়া লিওনেল মেসি প্রথমবারের মতো এখন ‘আর্জেন্টিনার মেসি’।
শিরোপা জয়ের পর সবার আগে চেনা পরিচিত ভঙ্গিতে দুই হাত উপরে তুলে উদযাপন করলেন মেসি। সব সময় প্রিয় দাদিকে স্মরণ করেন তিনি গোল করা বা জয়ের পর।
মারাকানায় জয়ের পর বোধ হয় আরও একজনকে স্মরণ করেছেন আর্জেন্টিনার নাম্বার টেন। কিছুদিন আগেই প্রয়াত এক ফুটবল-ঈশ্বরকে যিনি সব সময় নজর রেখেছেন তার শিষ্যদের ওপর।