বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেসি না ম্যারাডোনা: সেরা কে?

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২১ ২১:০৫

এই প্রশ্নের সমাধানে আসা শুধু কঠিনই নয় অসম্ভবও বটে। তবে বিতর্কটি ফেলে দেয়া যায় না। আধুনিক ফুটবল কিংবদন্তির ৩৪ তম জন্মদিনে সেটারই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা যাক।

ফুটবলের সহস্র রেকর্ডের বরপুত্র লিওনেল মেসিকে দীর্ঘদিন যাবতই তুলনা করা হয় ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে। নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়েছেন বলেই এলিট ক্লাবে পেলের সারিতে থাকা ম্যারাডোনার সঙ্গে উচ্চারিত হয় তার নামও। তবে যদি বলা হয় এই দুজনের মধ্যে কে সেরা?

এই প্রশ্নের সমাধানে আসা শুধু কঠিনই নয় অসম্ভবও বটে। তবে বিতর্কটি ফেলে দেয়া যায় না। আধুনিক ফুটবল কিংবদন্তির ৩৪ তম জন্মদিনে সেটারই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা যাক।

পরিসংখ্যানে কে এগিয়ে?

যদি শুধু গোলের হিসেব বা ট্রফি হিসেব করা হয় তাহলে ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাবেন মেসি। ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে ইতোমধ্যে ৭০০-এর উপরে গোল করেছেন যেখানে ম্যারাডোনার গোলসংখ্যা ৩৪৫-এ থেমে গেছে। মেসি ১০টি লিগ শিরোপার পাশাপাশি চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি জিতেছেন। অন্যদিকে ম্যারাডোনা তিনবার লিগ টাইটেল জেতার পাশাপাশি একটি ইউয়েফা কাপ জেতেন। মেসির ঝুলিতে যেখানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ছয়টি ব্যালন ডর, সেখানে ম্যারাডোনার শূন্য। বলে রাখা ভালো, এই পুরস্কারটি ইউরোপের বাইরের ফুটবলারদের দেয়া শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে।

ম্যারাডোনাকে টপকে গেছে মেসি?

এতো সহজ নয়। ফুটবলের মাহাত্ম শুধু গোলের হিসেব আর ট্রফির ধাচে পরিমাপ করা কঠিন। প্রথমত, ১৯৮০ সাল ও ৯০-এর প্রথম দিকের ফুটবলটা একেবারে ভিন্ন ছিল এখন থেকে। তখন অতি-ডিফেন্সিভ খেলা হতো প্রচুর কিন্তু এর মাঝেও মাঠে ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবল দেখেছে বিশ্ব, যেখানে রক্ষণাত্মক ফুটবলের পাশাপাশি গোলের বন্যা দেখা গেছে। তখন ইতালি ফুটবলের রাজধানী ছিল বলা চলে। মিশেল প্লাতিনি, জিকো, রুড খুলিত, মার্কো ফন বাস্টেন ও ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের মতো বিশ্বসেরারা সেরি আ মাতাতেন।

ম্যারাডোনা সেই লিগে রেলিগেশন শঙ্কায় থাকা নাপোলিতে যোগ দেন ১৯৮৪ সালে। সেখানে ইতালির দলটিকে সেরাদের কাতারে নিয়েছেন নিজের দক্ষতায়। এই দলটাকে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে লিগ শিরোপা জেতান ম্যারাডোনা। আন্ডারডগ দল হিসেবে এসি মিলান ও ইউভেন্তাসের মতো বিশ্বসেরা দলের বিপক্ষে নাপোলিকে একটা কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান।

অন্যদিকে মেসি যখন বার্সেলোনায় খেলেছেন তখন দলের পোস্টার বয় ছিলেন। তাকে একাই দলটাকে কাঁধে বইয়ে আনতে হয়নি। কার্লোস পুয়োল থেকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, চাভি এরনান্দেস, নেইমার ও লুইস সুয়ারেসের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার পাশে পেয়েছেন আর্জেন্টাইন মেগাস্টার।

নাপোলির অধিনায়ক হিসেবে ইউয়েফা কাপ ট্রফি হাতে ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ছবি: টুইটার

যখন ম্যারাডোনা খেলেছেন তখন ফুটবল এতোটাই ডিফেন্সিভ ছিল যে ফিফাকে ‘গো ফর গোলস’ নামে একটা ক্যাম্পেইন করতে হয়েছিল। সেরি আয় ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের এক পরিসংখ্যানের মতে ম্যাচ প্রতি গোলের হার ১.৯৩। যেখানে পেপ গার্দিওলার কোচিংয়ে মেসির প্রথম মৌসুমে লা লিগায় গোলের হার ছিল ২.৯০। প্রতি ম্যাচে প্রায় তিনটি করে গোল। ইয়োহান ক্রইফের মতাদর্শে গড়া দর্শনে বার্সেলোনা ওই জেনারেশনের কিছু বিশ্বসেরা ফুটবলারদের পাশে পান মেসি।

কে বেশি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সফলতা পেয়েছেন?

ম্যারাডোনার শৈশব কেটেছে কঠিন দারিদ্রতার মধ্যে। বুয়েনোস আইরেসের উপকণ্ঠে ভিয়া ফিওরিতা বস্তিতে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭৬ সালে যখন তিনি তরুণ তখন দেশের সামরিক অভ্যুত্থান দেখেন। ১৯৭০ ও ৮০ সালের শেষদিকে দেশের ভঙ্গুর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে বড় হন ম্যারাডোনা। সেসময় আর্জেন্টিনার মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়িয়েছিল ২০ সেন্টে। ১৯৮২ সালের ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার লড়া মালভিনাস যুদ্ধ দাগ কেটে যায় ২২ বছরের ডিয়েগোর মনে।

অন্যদিকে অর্থকষ্টে বেড়ে উঠলেও, ১৩ বছর বয়সে নিজের পরিবেশ পালটে ফেলেন মেসি। চলে আসেন বার্সেলোনায়। এটাও ঠিক যে মেসির গ্রোথ হরমোনের জটিলতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অর্থের কারণেই বার্সেলোনায় মেসিকে ভর্তি করায় তার পরিবার। ফুটবলের নিয়ম কি মেসিকে বেশি সহায়তা করেছে?

মাঠের মধ্যে ম্যাচ অফিসিয়ালদের কাছে খুব কম নিরাপত্তা পেতেন ম্যারাডোনা। ক্যারিয়ারে বেশ বড় বড় ইনজুরির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ইতালি ডিফেন্ডার ক্লদিও জেনটিলের রাগবি ট্যাকল বা ‘বিলবাওয়ের কসাই’ খ্যাত আন্দোনি গয়কোচেয়ার ট্যাকলে একেবারে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতে পারত ম্যারাডোনার।

মেসি তার সময়ে ম্যাচ অফিসিয়ালদের কাছ থেকে ম্যারাডোনার সময় থেকে অনেক বেশি সুবিধা পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফিফা একটি নতুন নিয়ম চালু করে যেখানে বলা হয়, ‘পেছন থেকে ট্যাকেল করলে খেলোয়াড়ের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এটা বড় ফাউল হিসেবে ধরা হবে। লাল কার্ড দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে।’ এর পরে খেলোয়াড়দের জন্য আরও কম নির্মম হয়ে ওঠে খেলাটা।

অন্যদিকে ম্যারাডোনা প্রযুক্তির যুগে খেলেননি। যে সময়ে সফটও্যয়ার ব্যবহার করে লিওনেল মেসির হাজারও টাচ ও ড্রিবল বিশ্লেষণ করে তার পরবর্তী মুভমেন্ট সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন হতে পারছে বিশ্ব। আর ফুটবলও ট্যাকটিক্যালি এতটা নিঁখুত হয়ে ওঠেনি ম্যারাডোনার সময়ে। মেসির মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলারদের বল পায়ে দক্ষতার পাশাপাশি এখন অনেক বেশি প্রয়োজন 'গেম প্লে অ্যাওয়্যারনেস'।

বার্সার হয়ে চার বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা লিওনেল মেসি

কার প্রভাব বেশি পড়েছে বিশ্বে?

১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে যখন বিশ্বকাপটা হচ্ছিল তখন অনেক বিগ্রহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। ইংল্যান্ডের কাছে মালভিনাস যুদ্ধে হেরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দেশটি। এই অবস্থায় আর্জেন্টিনাকে একাই কাঁধে করে বিশ্বকাপ জেতানোর সঙ্গে বোনাস হিসেবে সেই ইংল্যান্ডকে জোড়া গোলে হারানোর প্রভাব ছিল অনেক বড়। সঙ্গে নাপোলিকে একা ঘাড়ে নিয়ে বিশ্বকাতারে তোলা, ওই শহরের মানুষদের বহিঃর্বিশ্বের সামনে তুলে ধরাও ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

সেই হিসেবে মেসি অনেক বেশি সুসজ্জ্বিত ব্যক্তিজীবনে। বিশ্বসেরার আসনে থাকার যে ধারাবাহিকতা মেসি দেখিয়েছেন এক যুগেরও সময় বেশি ধরে। সেটাই আসলে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। সেই তুলনায় ম্যারাডোনা শিখরে ছিলেন ছিলেন ছয় কি সাত বছর। কিন্তু মেসির উজ্জল ক্যারিয়ারে ওই একটাই অধরা তাহল বিশ্বকাপ।

ম্যারাডোনা তার ক্যারিয়ারে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জেতেন। মেসিও ২০১৪ সালে তা জেতেন। কিন্তু ফাইনালে এসেই সব খেই হারিয়েছেন মেসি। যেখানে ১৪৭ ম্যাচে মেসি করেছেন ৭৩টি গোল সেখানে পজিশনের হিসেবে আরও নিচে খেলে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করেছেন ম্যারাডোনা। কিন্তু তিন বিশ্বকাপে নক আউট পর্বে কোনো গোল আদায় করতে পারেননি মেসি।

বিশ্বকাপ জেতাই কি সেরার নির্ধারক?

এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ রয়েছে। আলফ্রেড দি স্টেফানো ও ইয়োহান ক্রইফের মতো সর্বকালের ফুটবলার কখনও বিশ্বকাপ খেলেননি কিন্তু তাতে তাদের মাহাত্ম্য কমেনি । অধিকাংশ ফুটবলার যদিও বিশ্বকাপ জেতাটাকেই সেরা মানার ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখেন। তবে ম্যারাডোনা নিজেও মেসিকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সেরা খেলোয়ার হওয়ার জন্য মেসিকে বিশ্বকাপ জিতার প্রয়োজন নাই।’

এ বিভাগের আরো খবর