বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প করবেন শরণার্থী থেকে ফুটবলার নাদিয়া ‍

  •    
  • ২২ জুন, ২০২১ ১৪:০৫

ক্লাবইউ নামের একটি এনজিও ও পিএসজিকে সঙ্গে নিয়ে নাদিয়া চেষ্টা করছেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য স্পোর্টস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে। তার প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবিরে।

নারী ফুটবলের খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে নাদিয়া নাদিমের নামটা নতুন নয়। ডেনমার্কের এই তারকা ফরোয়ার্ড জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য। ইউরোপিয়ান জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) হয়ে গত মৌসুমে জিতেছেন লিগ শিরোপা।৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল লিগের (এনডাব্লিউএসএল) দল রেসিং লুইভিল এফসিতে যোগ দেন ৩৩ বছর বয়সী নাদিয়া। বর্তমানের খ্যাতিমান এই ফুটবল তারকা জীবনের শুরুটা এমন ছিল না।ডেনমার্ক থেকে অনেক দূরের দেশ আফগানিস্তানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নাদিয়া নাদিমের। বাবা ছিলেন আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর নামী জেনারেল। তার বয়স যখন ১১, তখন তার বাবাকে হত্যা করে তালেবান।

বাবার মৃত্যুর পর মা ও তিন বোনসহ জাল পাসপোর্টে পাকিস্তান চলে আসে নাদিয়ার পুরো পরিবার। সেখান থেকে তারা পাড়ি জমায় ডেনমার্কে। পুরো পরিবারের জায়গা হয় ডেনিশ রেফিউজি ক্যাম্পে।

শৈশবের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় নাদিয়াকে। সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র চিন্তা ছিল কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। পরের দিন পর্যন্ত কীভাবে টিকে থাকা যায়।

‘সবসময় ভাবতাম আমি কী করব এখন? কী করলে কালকের সকালটা দেখতে পাব?’শরণার্থী ক্যাম্পেই নাদিয়ার সঙ্গে ফুটবলের পরিচয়। ক্যাম্পের অন্য শিশুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে খেলতে এর প্রেমে পড়ে যান ১১ বছরের নাদিয়া।‘আমার কাছে দেখেই (ফুটবল) ভালো লেগেছিল। শুরুতে সবাই বলে লাথি মারতাম। বলের পেছনে সবাই মিলে ছোটাছুটি করতাম। একবার খেলা শুরুর পর থেকে আমি কখনোই খেলা ছাড়িনি। সেখান থেকে শুরু করে আমি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে খেলেছি’, বলেন নাদিয়া।শরণার্থী শিবিরে এক ফুটবল ক্লাবের মাধ্যমে নাদিয়ার হাতেখড়ি হয় মাঠের ফুটবলে। সেখান থেকে বিফিফটিটু আলবোর্গ হয়ে ডেনিশ প্রিমিয়ার লিগের দল আইকে স্কোভবাকেনে সুযোগ পান ২০০৬ সালে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফুটবল ক্লাব শুরু করতে চান নাদিয়া। ছবি: টুইটার

সেখানে ছয় বছর কাটিয়ে চলে আসেন ফরচুনা হিয়োরিংয়ে। তাদের হয়ে প্রথমবার খেলেন ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে। সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নারী লিগে।

দুই মৌসুম খেলার পর তিনি ডাক পান ম্যানচেস্টার সিটি থেকে। সিটির পর পিএসজি ঘুরে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন এই স্ট্রাইকার।সাফল্যের পরও ভুলে যাননি নিজের শুরুর ঘটনা। এখনও তাকে পীড়া দেয় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজারো শরণার্থী শিবির ও শরণার্থীদের সংগ্রামের জীবন।তাই নাদিয়া নিয়েছেন ভিন্ন এক উদ্যোগ। ক্লাবইউ নামের একটি এনজিও ও পিএসজিকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা করছেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য স্পোর্টস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে। তার প্রকল্প শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবিরে।সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পে গেলে বোঝা যায় সেখানকার পরিবেশ কতটা নির্মম ও রূঢ়। আমি জানি। আমার নিজের দেহে তা অনুভব করেছি।

‘কেনিয়া বা বাংলাদেশের কক্সবাজার যেখানে বিশ্বের অন্যতম বড় শরণার্থী ক্যাম্প আছে, এগুলো কোনো সহজ বিষয় নয়।’নাদিয়ার আশা ক্যাম্পগুলোর নিরানন্দ পরিবেশ থেকে শিশুদের কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি নিজের মতো আরও দুই-একজন ফুটবলার খুঁজে পাবেন তিনি।নাদিয়া বলেন, ‘ভেবে দেখুন, কক্সবাজারের লাখ লাখ শরণার্থীর মধ্যে যদি দুই, তিন, চারজন ফুটবল খেলোয়াড়কে পাওয়া যায় এই প্রজেক্টের কারণে। তারা সত্যিই অসম্ভব একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

‘আশা করি খেলাধুলার মাধ্যমে তারা এক বা দুই ঘণ্টার জন্য নিজেদের বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে পারবে। হয়তো বা নিজের ভবিষ্যত বদলানোরও সুযোগ পাবে।পিএসজি ও ক্লাবইউ শরণার্থী শিবিরগুলোতে একেকটি করে ক্লাব সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবে, যাতে শিশুদের জন্য থাকবে লাইব্রেরি, খেলাধুলার সরঞ্জাম। ক্লাব সেন্টার টুর্নামেন্ট ও ট্রেনিং সেশনও আয়োজন করবে।ফুটবল মাঠের বাইরে নাদিয়া পড়াশোনা করছেন রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জন হতে। ফুটবল মাঠ থেকে অবসরের পর সার্জন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশুদের কল্যাণে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান এই সুপার উইম্যান।

এ বিভাগের আরো খবর