ভারতের কাছে দুই গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। হারের ম্যাচে সাধারণত অর্জন বলে কিছু খোঁজার কোনো অবকাশ থাকে না। তবে, এই হারেও বাংলাদেশের এক ফুটবলারের পারফরম্যান্স দৃষ্টি কেড়েছে প্রতিপক্ষ ভারতেরও।
শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট করে বললে এক ডিফেন্ডারের জন্য রীতিমত দলের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে ভারতের মাস্টারমাইন্ড কোচ ইগর স্টিমাচকে।
ভারতের মাথাব্যথার কারণ হওয়া এই ফুটবলারের নাম তারিক রায়হান কাজী।
ভারতের কাছে পূর্ণ পয়েন্ট খোয়ানো বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি বলতে হবে ফিনল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এই ফুটবলারকে।
কী বিশেষ এমন করেছেন তারিক, যার জন্য তিনি এখন লাইমলাইটে?
আফগানিস্তান ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিতে তার অভিষেকের দিনে ড্রয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তপুর গোলে এক পয়েন্ট পাওয়ায় দিন দুর্দান্ত পারফর্ম করেও তারিক ছিলেন ‘পার্শ্বনায়ক’।
পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত। মাত্র ২০ বছর বয়সী তারিকের জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে এটাই ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। এতো কম বয়সে কী আর করবেন তারিক!
প্রথমার্ধে ভারতকে রুখে দেয়ার পেছনে জেমির ট্রাম্প কার্ড ছিলেন রাইটব্যাক তারিক কাজীই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচ লেফ্ট উইংয়ে নামান বিপিন সিংকে। প্রথম ৪৫ মিনিটে রক্ষণের ডানে তারিককে একবারও বিট করতে পারেননি বিপিন।
উল্টো তারিকের কাছে বেশ কয়েকবার বলের দখল হারাতে হয়েছে তাকে। শারীরিকভাবেও বেশ কৌশল দেখান তারিক। তার পাল্টা আক্রমণে বারবার ভুগতে হয়েছে ভারতকে।
বাম পাশ দিয়ে ভারতের সব আক্রমণ পঙ্গু করে দেন তারিক। প্রথমার্ধে ওই পাশ দিয়ে সব আক্রমণ অকার্যকর হওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয় ভারতকে।
দ্বিতীয়ার্ধে বিপিনকে তুলে আশিক কুরুনিয়ানকে নামাতে বাধ্য হন ভারতের কোচ স্টিমাচ। তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। বারবার তারিকের কাছে হোঁচট খেতে হয়েছে আশিককেও। পরে কৌশলে তারিক থেকে দূরত্ব বজায় রেখে প্রথম গোলে বলের যোগান দেন আশিক।
ভারতের বেশিরভাগ আক্রমণ অকার্যকর রাখেন তারিক কাজী
পুরো ম্যাচে তারিকের অবদান কেমন সেটা বোঝাতে একটা পরিসংখ্যান দেয়া যেতে পারে।
জনপ্রিয় ফুটবল ওয়েবসাইট ফুটমবের তথ্যমতে, এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রেটিং তারিকের। ১০ এর মধ্যে ৭.৪ রেটিং পেয়েছেন তিনি। পুরো ম্যাচে ৫৩ বার বল স্পর্শ করেছেন এই ডিফেন্ডার। গ্রাউন্ড ডুয়েলস জিতেছেন পাঁচবার। এরিয়াল ডুয়েলস জিতেছেন দুই বার ও পাঁচবার বল বিপদমুক্ত করেছেন।
শুধু তাই নয়, ডিফেন্ডার হয়েও বাংলাদেশের কাউন্টার অ্যাটাকেও দেখা গেছে তাকে। বলতে গেলে জামাল-তপুরা যতগুলো চান্স পেয়েছেন ভারতের ডি-বক্সে তাতে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছেন তারিক। ডিফেন্স থেকে আক্রমণে, আবার আক্রমণ থেকে ডিফেন্স নেমে আসার কঠিন কাজটি বেশ সফলভাবে পালন করেন উদীয়মান এই তারকা।
সবমিলে ভারত ম্যাচে বেশ পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন এই ফুটবলার। বলে রাখা ভালো, তারিক কাজী ইউরো কাপের টিকিট পাওয়া ফিনল্যান্ডের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন। খেলেছেন ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ লিগেও। ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তারিকের।
ইউরোপের সোনালি ভবিষ্যৎ ছেড়ে লাল-সবুজের টানে বাংলাদেশে আসেন তারিক। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের হয়ে রাজসিক অভিষেক হয় তার। দেশের ক্লাব পর্যায়ের সর্বোচ্চ এই লিগে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডের সুনজরে পড়েন তিনি। এরপর প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ জার্সিতে কাতারে অভিষেক হয় এই ফুটবলারের।
এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় তারিক কাজীর
এমন পারফর্মের পরও দলের হারে হতাশ তারিক। তিনি বলেন, ‘ভারত ম্যাচের পর আমরা অনেক হতাশ হয়েছি। শেষ ১০ মিনিটে মনোযোগ ধরে রাখার অভাবে হয়তো ম্যাচটা হারিয়েছি। তারা দুটা গোল করেছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। দল হিসেবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
‘এখন আমরা ওমান ম্যাচের দিকে চেয়ে রয়েছি। নতুনভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওমানের বিপক্ষে আমরা সর্বোচ্চটুকুই দিব।’
উল্লেখ্য, জামাল ভূঁইয়ার পর দ্বিতীয় প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে তারিক কাজীর।