বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এক গোলে পিছিয়ে পড়া লাল-সবুজদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয়বারের মতো পয়েন্ট এনে দেন ডিফেন্ডার তপু বর্মন।
বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় জসিম বিন স্টেডিয়ামে আফগানদের প্রথমার্ধে রুখে দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে পিছিয়ে থেকে দারুণভাবে কামব্যাক করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ড্রয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচে এক গোলে হারা বাংলাদেশ আজকের ম্যাচ শুরু করে জমাট রক্ষণ আর কাউন্টার অ্যাটাক কৌশল নিয়ে। সেটাতে প্রথমার্ধে বেশ উজ্জ্বীবিত দেখিয়েছে জাতীয় দলকে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা ইউরোপ নির্ভর খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত আফগানরা পুরো ম্যাচে বল দখলে এগিয়ে ছিল। কাউন্টার অ্যাটাকে কিছু দারুণ মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন জামাল-মতিন-রাকিবরা। কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান অন্য রকম হতে পারত।
ম্যাচের প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ১৫ মিনিটে প্রায় ৩৫ গজ থেকে নেয়া তপু বর্মনের শট গ্লাভসবন্দী করতে তেমন কষ্ট করতে হয়নি আফগানিস্তানের গোলকিপার ওভাইস আজিজির।
আফগানিস্তানের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের ডিফান্ডার তারিক কাজী। ছবি: আফগানিস্তান ফুটবল দল
এক মিনিট পর আরেকটি আক্রমণ সাজায় বাংলাদেশ। ১৬ মিনিটে বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন মাসুক মিয়া জনি। বলটা এগিয়ে দেন সামনে থাকা সতীর্থের কাছে। বলটি রক্ষণে বাধা পেয়ে বিপদমুক্ত হলেও হ্যান্ডবলের আবেদন করেন জামাল ভূঁইয়া। তাতে অবশ্য সাড়া দেননি ইরানের রেফারি মওউদ বুনিয়াদিফার্ড।
এবার কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের সুযোগ তৈরি করে আনুশ দস্তগিরের আফগানিস্তান। ১৮ মিনিটে আফগানি ফরোয়ার্ড আমির শারিফির একটি শট বাংলাদেশের রক্ষণে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে ঢোকার সময় পা দিয়ে বিপদমুক্ত করেন আনিসুর রহমান জিকো।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে নিজেদের প্রথম কর্নারটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার নেয়া নিচু কর্নার কিক বিপদমুক্ত করে আফগান রক্ষণ।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে আরেকটি ভালো আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন জিকো। ডান প্রান্ত থেকে শারিফির সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে বিট করে ডান প্রান্ত থেকে ক্রসের বদলে শট নেন আফগান অধিনায়ক ফারশাদ নূর। তার নেয়া শট দারুণভাবে থামিয়ে দিয়ে বিপদমুক্ত করেন জিকো।
আফগানিস্তানের আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত বাংলাদেশের রক্ষণ ভাগ। ছবি: আফগানিস্তান ফুটবল দল
ছেড়ে দেয়নি বাংলাদেশও। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাকের প্রচেষ্টা আসে বাংলাদেশের কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত বল পেয়ে ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকে শট নেন মতিন। বল গোলবারের অনেক বাইরে চলে গেলে আরেকটি সুযোগ হারায় লাল-সবুজরা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমেই প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে আচমকা গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত থেকে দাভিদ নাজিমের ক্রস থেকে বাঁ পায়ে শটে বল জালে জড়ান আমির শরিফি।
৬০ মিনিটে সোহেলকে বদলে মানিক মোল্লাকে মাঠে নামান জেমি। তারপরে যেন খেলায় গতি পায়। কিছু দারুণ আক্রমণে সুযোগ তৈরি করতে থাকে বাংলাদেশ।
আফগান অধিনায়ক ফারশাদ নুরের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের তারিক কাজী। ছবি: বাফুফে
ম্যাচের ৮০ মিনিটে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। সিক্স ইয়ার্ডের ডান পাশ থেকে গোলকিপার আজিজির সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে বিট করতে ব্যর্থ হোন ফরোয়ার্ড আব্দুল্লাহ। গোলকিপারের গায়ে লাগান এই ফরোয়ার্ড।
তার দুই মিনিট পরই দুর্দান্তভাবে বাংলাদেশ সমতায় ফেরান ডিফেন্ডার তপু বর্মন। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলটা হেডে সিক্স ইয়ার্ডের সামনে থাকা তপুকে এগিয়ে দেন রিয়াদুল রাফি। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণভাবে টার্ন করে ডান পায়ের জোড়াল শটে বল জালে পাঠান এই ডিফেন্ডার। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এটাই তপুর প্রথম গোল। আর ক্যারিয়ারে চতুর্থ।
ম্যাচে প্রতিপক্ষের বক্সে বেশ কয়েকটি হ্যান্ডবলের দাবি তোলে বাংলাদেশ। তার একটি ৮২ মিনিটে। এবারও হতাশ করেন রেফারি।
এরপরে আর কোনো দল গোলের দেখা না পাওয়ায় ১-১ গোল আর পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে দুই দল।
এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এটা দ্বিতীয় পয়েন্ট বাংলাদেশের। এর আগে ভারতের সঙ্গে ড্র করে জামাল ভূঁইয়ার দল। সামনের ৭ জুন সেই ভারতের সঙ্গে ম্যাচ আছে বাংলাদেশে। একই ভেন্যুতে ম্যাচটি শুরু হবে রাত আটটায়।