ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা মৃত্যুর আগে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা পাননি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
ম্যারাডোনার মৃত্যু তদন্তে গঠিত ২০ সদস্যের মেডিক্যাল প্যানেলের প্রতিবেদনে তারা এমন তথ্য দিয়েছেন।গত বছরের ২৫ নভেম্বর মারা যান আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক ম্যারাডোনা। মস্তিষ্কের সফল অস্ত্রোপচার শেষে বুয়েনোস আইরেসের একটি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই সপ্তাহ পর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ৬০ বছর বয়সী ফুটবল ঈশ্বরের।চিকিৎসকদের কোনো ধরনের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করে আর্জেন্টিনা কর্তৃপক্ষ। তার মৃত্যুর পর পাবলিক প্রসিকিউটর তার মৃত্যুর কারণ ও চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হয়েছে কি না, সেটি খুঁজে বের করতে ২০ সদস্যের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেয়।ম্যারাডোনার মৃত্যুর পাঁচ দিন পর তার নিউরোসার্জন লিওপোলদো লুকের বাসায় তল্লাশি চালায় বুয়েনোস আইরেস পুলিশ।
লুকের পাশাপাশি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অগুস্তিনা কোসাচোভ, মনোবিজ্ঞানী কার্লোস দিয়াস ও দুইজন নার্সকে তদন্তের আওতায় আনা হয়।২০ সদস্যের প্যানেল তদন্ত শেষে শুক্রবার ৭০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
সে প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবহেলাজনিত মৃত্যুর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন অভিযুক্তরা। এ কারণে ১৫ বছর জেল হতে পারে তাদের।‘ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল টিমের পদক্ষেপগুলো ছিল অপ্রতুল, ঘাটতিযুক্ত ও বেপরোয়া’, প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি।প্রতিবেদনে তদন্ত প্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তার (ম্যারাডোনা) মধ্যে দীর্ঘসময় যন্ত্রণা ভোগ করার লক্ষণ ছিল, যে কারণে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি ২৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টা থেকে রোগীকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।’রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ৩ নভেম্বর ম্যারাডোনার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কথা বলতেও অসুবিধা হতো ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী এ তারকার। মৃত্যুর সময় তিনি লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন।ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তার দুই কন্যা লুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তার কারণেই তাদের বাবার স্বাস্থ্য ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছিল। সে ইঙ্গিত আছে তদন্ত প্রতিবেদনেও।
এতে বলা হয়, ‘সঠিক জায়গায় সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ম্যারাডোনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা জোরালো হতো।’বুয়েনোস আইরেসের একটি ভাড়া বাসায় তার চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তদন্ত প্যানেলের মতে, ম্যারাডোনার সে সময় ওই ‘মানসিক সক্ষমতা’ ছিল না যে কোথায় তার চিকিৎসা করা হবে, সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার।তদন্ত প্যানেল আরও খুঁজে পেয়েছে, তার চিকিৎসায় ‘ঘাটতি ও অনিয়ম’ করা হয়েছে।
এক পর্যায়ে ম্যারাডোনার মেডিক্যাল টিম তাকে ‘ভাগ্যের ওপর’ ছেড়ে দেয় বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।