প্রাণ নেয়ার জন্য একটা বুলেটই হয়তো অনেক সময় যথেষ্ট। ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়, চার চারবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন দেশের এক ফুটবলার। কোমায় থাকতে হয়েছে কয়দিন। পরে সেই দুঃসহ ট্রোমা থেকে বেরিয়ে ফিরেছিলেন ফুটবলে।
শুধু তাই নয় খেলতে পারতেন ইউরোপের সেরা লিগগুলোতেও। সবকিছু ছাপিয়ে নাড়ির টানে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশ আসা এই খেলোয়াড় এখন দেশের ফুটবলের পোস্টারবয়।
বুলেট বাধা পেরিয়ে ফুটবল জীবনে ফেরার এই শক্তির নামই জামাল ভূঁইয়া। আজ ৩১’এ পা রাখলেন এই ডেনমার্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে সতীর্থ-সাবেক ও ফুটবল প্রেমিদের শুভেচ্ছা প্লাবিত হচ্ছেন জাতীয় দলের এই অধিনায়ক।
হওয়ার কারণও আছে।
ইউরোপের দল ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় ক্লাব এফসি কোপেনহেগেনের যুব দলে খেলেছেন জামাল। ক্লাবের সতীর্থরা এখন ইউরোপ মাতাচ্ছেন! না ভুল পড়ছেন না।
নির্দিষ্ট করে বললে কোপেন হেগেন অ্যাকাডেমিতে তার তিন বন্ধুর একজন ড্যানিয়েল ভাস যিনি স্প্যানিশ লিগের অন্যতম শীর্ষ দল ভ্যালেন্সিয়ার মিডফিল্ডার। একজন থমাস ডিলেইনি যিনি জার্মান লিগের জায়ান্ট বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মিডফিল্ডার। আরেকজন কেনিথ জোহারে যিনি ইংল্যান্ডের এফএ কাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ব্রুমের স্ট্রাইকার।
তেমনই হতে পারতেন জামালও। যুব দলে খেলার সময় তো বাজে একটা ঘটনা ঘটে আপনার জীবনে। চার চারবার বুলেটবিদ্ধ হোন তিনি। একটা বুলেট লাগে কনুইয়ে, একটা পেটের নিচের দিকে ও বাকী দুইটা শরীরের দুই পাশে। এই ঘটনায় কোমায় ছিলেন দুইদিন। আর হাসপাতালে থাকতে হয়েছে চার মাস।
ফুটবলেই ফেরার কথা ছিল না তার। নিজেও ফুটবল ছাড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দমে যাননি। অবিশ্বাস্যভাবে ট্রোমা কাটিয়ে ফুটবলে ফিরেছেন। নাড়ির টানে এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট দেশে ফেরেন ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে জাতীয় দলে অভিষেক করেন।
এসে নিজের জাত চিনিয়েছেন জামাল। ক্লাবপর্যায়ে সাফল্য পেতেও দেরি হয়নি এই মিডফিল্ডারের। ঝুলিতে যোগ হয় কয়েকটি শিরোপা। ক্লাবের জার্সিতে শেখ জামালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ ও কিংস কাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন।
স্প্যানিশ লিগ লা লিগায় ধারাভাষ্য দেন জামাল ভূঁইয়া
ব্যক্তিগত পর্যায়েও সাফল্যের স্বাক্ষর দেখান। ২০১৪ সালে কিংস কাপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও সেরা ফুটবলারের পুরস্কারটাও বগলদাবা করেছেন। কাতারের বিপক্ষে গোল করে ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে (অনূর্ধ্ব-২৩) ইতিহাসের প্রথমবার লাল-সবুজকে নক আউট পর্বে তুলেছেন।
২০১৮ সাল থেকে এখনও জাতীয় দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামাল ভূঁইয়া। দেশের ফুটবলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বলা যায় তাকে। তার ৩১তম জন্মদিনে তাকে জানাই শুভ কামনা। এভাবেই দেশের ফুটবলটাকে তুলে ধরুন আরও ওপরে। জাতিকে এখনও অনেককিছু দেয়ার আছে আপনার।