বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জামাল-মেসির হতাশা যেন একই সুতোয় গাঁথা

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২১ ২২:৫৫

ক্লাব পর্যায়ে দুই ফুটবলারের একরাশ সাফল্য গাঁথা থাকলেও জাতীয় দলের জার্সিতে দুইজনেরই যেন না পাওয়ার গল্পটা একই সুতোয় বোনা।

ডাগ আউটে হতাশায় বিমর্ষ বসে আছেন জামাল ভূঁইয়া। চোখের চাহনিতে একরাশ না পাওয়ার বেদনা, শরীরী ভাষায় ফেলা আসা লাল-সবুজের ট্রফি না জেতার আর্তনাদ। সব কিছুই যেন নদীর মতো মিলিয়ে যাচ্ছে লিওনেল মেসির কষ্টের মহাসমুদ্রে।

ক্লাব পর্যায়ে দুই ফুটবলারের একরাশ সাফল্য গাঁথা থাকলেও জাতীয় দলের জার্সিতে দুইজনেরই যেন না পাওয়ার গল্পটা একই সুতোয় বোনা।

মেসির গল্পটা সবার জানা। তারপরেও মনে করিয়ে দেই, ছোটবেলায় নিজের দেশ ছেড়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্পেনে পাড়ি জমান লিও। শরীরে গ্রোথ হরমোন সমস্যা নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে বার্সেলোনায় জার্সিতে নাম লেখান এই খুদে ফুটবল জাদুকর। কী জেতেনি ক্লাবের জার্সিতে!

লিগ থেকে শুরু করে ক্লাব পর্যায়ের সর্বোচ্চ শিরোপা ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, সবই জিতেছেন কাতালান জার্সিতে। ব্যক্তিগত সাফল্যও ঈর্ষণীয়। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন। সর্বোচ্চ ছয়বার ব্যালন ডি ও’র জয়ীসহ অসংখ্য রেকর্ডের বরপুত্র মেসির জীবনে তবুও আছে এক অপ্রাপ্তি। সেই বেদনা- আর্জেন্টিনার জার্সিতে ট্রফি ছুঁতে না পারা!

সেই ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও আর্জেন্টিনার জার্সিতে আরাধ্য ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি মেসির। দুই দুইবার কোপা আমেরিকার ফাইনালেও বিদায় নিতে হয়েছে রানার আপের সান্ত্বনা নিয়ে। ম্যাচ শেষে তার সেই আর্তনাদের দৃশ্য কাঁদিয়েছে পুরো ফুটবল বিশ্বকে।

মেসির এই হতাশার দৃশ্যটা যেন মিলে যায় বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টারবয় জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে।

ডেনমার্কে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি এই প্রবাসী ফুটবলার ছোটবেলায় চার চারবার গুলিবিদ্ধ হয়েও ফুটবলের টানে ফিরেছেন মাঠে। তার সতীর্থরা যখন ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন সুদূর ডেনমার্ক থেকে সব ছুড়ে দিয়ে লাল-সবুজের টানে সাত হাজার কিলো মিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।

এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট দেশে নিজের জাত চিনিয়েছেন জামাল। ক্লাবপর্যায়ে সাফল্য পেতেও দেরি হয়নি এই মিডফিল্ডারের। ঝুলিতে যোগ হয় কয়েকটি শিরোপা। ক্লাবের জার্সিতে শেখ জামালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ ও কিংস কাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন।

ব্যক্তিগত পর্যায়েও সাফল্যের স্বাক্ষর দেখান। ২০১৪ সালে কিংস কাপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও সেরা ফুটবলারের পুরস্কারটাও বগলদাবা করেছেন। কাতারের বিপক্ষে গোল করে ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে (অনূর্ধ্ব-২৩) ইতিহাসের প্রথমবার লাল-সবুজকে নক আউট পর্বে তুলেছেন।

ক্লাবের জার্সিতে সফলতা পাওয়া জামালের জীবনেও কষ্টের নাম জাতীয় দল। আক্ষেপের নাম লাল-সবুজ জার্সিতে কোনো টুর্নামেন্টে একটি শিরোপা। আট বছরের ক্যারিয়ারে যে এখনও পর্যন্ত কোনো ট্রফি জেতেননি তিনি!

মেসির মতো বারবার হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের ছয়জাতির টুর্নামেন্টে ফাইনালে মালয়েশিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ। অবাক করার মতো বিষয় হলো, মেসি যেমন বিশ্বকাপ হারিয়েও সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন ঠিক তেমনি জামালও গোল্ডকাপের সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন।

চোখের সামনে থেকে ট্রফি হাতছাড়া হতে দেখেছেন দু’জন।

কষ্টের সীমানাটা এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ ফুটবলেও হতাশ হয়েছেন জামাল। তিনটা সাফে খেলেছেন। তিনটাতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। একবারতো ঘরের মাঠেই। সবশেষটা হলো নেপালে ত্রিদেশীয় ফুটবল সিরিজে।

শেষ পর্যন্ত কি ট্রফি ছাড়াই জাতীয় দলের যাত্রার সমাপ্তি হবে তাদের?

দু’জনেই ক্যারিয়ার একেবারে সায়াহ্নে। এতো হতাশার মধ্যে আশার গল্পটা হলো, জাতীয় দলের জার্সিতে ট্রফি জেতার সুযোগ যে নেই তা বলা যাবে না। এলএমটেনের সামনে কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ জেতার হাতছানি। আর জামালের সামনে সাফ বা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ট্রফি জেতার সুবর্ণ সুযোগ। আক্ষেপ মেটানোর সুযোগ।

বড় কোনো টুর্নামেন্টে গেলেই যেন অদৃশ্য কারণে শিরোপাহীন ফিরতে হয় বাংলাদেশের।

শিরোপা জিততে না পারার পেছনে নিজেই যুক্তি দিলেন জামাল। বলেন, ‘আসলে আমরা বড় মঞ্চে বা বড় ম্যাচ পেলে আমাদের পারফর্ম করা উচিৎ। অনেক প্লেয়ার সেদিন ‍যেন ‍লুকিয়ে ছিল। বড় ম্যাচে লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বড় ম্যাচে বড় প্লেয়াররা পারফর্ম করবে।’

জাতীয় দলের জার্সিতে শিরোপা খরা মিটবে জামাল ভূঁইয়া ও লিও মেসির? কিন্তু অধরাই থেকে একটি ট্রফি?

এ বিভাগের আরো খবর