গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে নিরুঙ্কুষ জয় পায় কাজী সালাউদ্দিন প্যানেল। ইতোমধ্যে দেশের ফুটবলে একশ’ দিন কাটিয়ে দিয়েছে নির্বাচিত কমিটি। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসে লাগাতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আছেন কাজী সালাউদ্দিন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, গত ১২ বছরের ব্যর্থতার দায়মুক্তি করতেই এবার সিরিয়াস হচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন। এই তিন মাসের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত কমিটি আশা দেখাচ্ছে।
তবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দৃশ্যমান ফল আনতে হবে বাফুফেকে। তার উপর নির্ভর করছে ফেডারেশনের ভাগ্য।
এই ১০০ দিনে কী কী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাফুফে?
নির্বাচনে নিরুঙ্কুষ জয়ের এক নভেম্বর দায়িত্ব নিয়ে চলতি মাসের নয় তারিখ এক শ দিন পূরণ করেছে নব নির্বাচিত কমিটি। কাজী সালাউদ্দিনের বিরোধী প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন মহিউদ্দীন মহি।
তিনি জানান, দায়িত্বে আসার পরপরই পুরো কমিটি নিয়ে বৈঠক করেছেন কাজী সালাউদ্দিন। বৈঠকে অতীতের ব্যর্থতার চুলচেড়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটবল উন্নয়নে কী কী কাজ করা যায় তা নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত চার বছরে নানান সময় বাফুফের কমিটির ব্যর্থতা নিয়ে প্রতিবাদী মুখ হয়ে সামনে আসা মহিউদ্দীন মহি এবারের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট।
বাফুফের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবার লক্ষ্য এক। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। দায়িত্বে এসেই নেপাল সিরিজ আয়োজন করেছি। ফেডারেশনের সামনের লনে জিম তৈরি করছি। একাডেমি নিয়ে কাজ হচ্ছে। দেশব্যাপী ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। কোচদের বিভিন্ন কোর্স চলছে। বিভিন্ন বিভাগের লিগ মাঠে নামছে।
‘ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করব। একটা ডেডিকেটেড ফুটবল স্টেডিয়াম করার ব্যাপারেও কথা হচ্ছে। ঢাকার আশে-পাশে একটা স্টেডিয়াম করার ভাবনা আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় ফুটবল যাতে মাঠে থাকে সেই বিষয়ে প্রাধান্য থাকছে।’
কমিটির বাইরে যারা আছেন তারাই বিচার-বিশ্লেষণ করে মত জানালে সাদরে গ্রহণ করবেন বলে জানান মহি।
বলেনম, ‘বিচার-বিশ্লেষণ করবে আমাদের বাইরে যারা আছেন। আমরা তুষ্ট। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে চাই।’
এক শ দিনের কার্যক্রম নিয়ে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের অভিমত:
গত নির্বাচনে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে লড়েছিলেন শফিকুল ইসলাম মানিক। তিনি এখন প্রিমিয়ার লিগের দল শেখ জামালের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ১২ বছরের তুলনায় এবারের কমিটিকে সিরিয়াস মনে হয়েছে তার কাছে।
মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের চেয়ে বেটার মনে হয়েছে। গত ১২ বছরের তুলনায় সিরিয়াস মনে হচ্ছে এবার। যা আশাব্যঞ্জক। এভাবে অব্যাহত রাখলে আশা করা যায় ভালো কিছু। সবকিছু আন্তরিকভাবে করলে উন্নয়নের ক্ষেত্র আরও বড় হবে।’
দেশের ফুটবলের উন্নতির অনেক জায়গা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিরোধীতার জন্য নয়, যে কাজগুলো করছে অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এখানে থেমে থাকলে হবে না। আমাদের ফুটবলের অনেক উন্নতির প্রয়োজন।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা ডিফেন্ডার কায়সার হামিদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি জানান, বাফুফে এখন যা করছে এটাই মূলত তাদের দায়িত্ব। ১২ বছর আগে যখন কাজী সালাউদ্দিন দায়িত্বে এসে এভাবে সিরিয়াস থাকলে আজ ফুটবল অনেক উন্নতি করত।
কায়সার হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত একশ’দিনে যেভাবে কাজ করছে বাফুফে এটাই মূলত তাদের দায়িত্ব। আমরা চাই একটা দৃশ্যমান উন্নতি। এই কয়মাসে যেভাবে কাজ করছে তাতে আশাবাদী হওয়া যায়।’
দৃশ্যমান উন্নতিই একমাত্র চেয়ার দখলের নিয়ামক মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তবে র্যাঙ্কিংয়ে এই উন্নতি দেখাতে হবে। উন্নতির পরিমাপটা হলো আপনি র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করছেন কিনা। গত ১২ বছরে র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে ঠেকেছে বাংলাদেশ। এর দায়টা অনেকাংশে বাফুফের।
‘প্রতিটা জেলা-উপজেলা থেকে খেলোয়াড় বের করার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। এবার তাদের একটু সিরিয়াস মনে হচ্ছে।’
একশ’ দিনের কর্মকাণ্ডকে একশ’তে ফার্স্ট ক্লাশ মার্ক দিবেন কায়সার হামিদ। বলেন, ‘আমি লেটার মার্ক দিব না। ফার্স্ট ক্লাশ মার্ক দিব। কারণ এখনও অনেক দিন বাকী।’
এখনও অনেক পথ বাকী
চার বছর ক্ষমতায় থাকবে কমিটি। এখনও অনেকটা পথ বাফুফের সামনে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখাই হবে কমিটির মূল চ্যালেঞ্জ।
কায়সার হামিদের মতে, ‘চেয়ার দখল করে লাভ নাই। আমরা ফুটবলের উন্নয়ন চাই। যারাই থাকুক ক্ষমতায় এটাই চাওয়া।’
ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মহিউদ্দীন মহি বলেন, ‘দায়িত্বে আসার পরে সবাই এখন একটা টিম। সবাই তার তার জায়গায় কাজ করবে। যে কাজগুলি করা হয় নাই ভবিষ্যতে সেগুলো ইম্প্লিমেন্ট করাই এখন দায়িত্ব।’
শফিকুল ইসলাম মানিকের কথায়, ‘ধারাবাহিকতার প্রয়োজন রয়েছে। সবাইকে পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কাজ করার পরিবেশ করে দিতে হবে।’
এই চ্যালেঞ্জ নিতে বাফুফে কতটুকু প্রস্তুত সেটা সময়ই বলে দেবে।