কাতারের ঝুলিয়ে দেয়া টোপ গিলে জেনে-শুনে কুমিরের মুখে পা দিয়ে বসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। মাত্র চার সপ্তাহের প্রস্তুতিকে সম্বল করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দোহায় খেলতে পাঠায় জাতীয় দলকে। চার মাস প্রস্তুতিতে থাকা কাতারের কাছে বিপর্যস্ত ও নাকাল হয়ে ফিরতে হয় বাংলাদেশকে। ম্যাচের পর মিডিয়ার সামনে বাফুফের এমন ‘অবিবেচক ও অপরিপক্ব’ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেন জাতীয় দলের হেড কোচ জেমি ডে।
তাতেই আতে ঘাঁ লাগে ফেডারেশনের। প্রকাশ্যে বিষয়টি দেখে নেয়ার কথাও বলেন বাফুফের কর্তারা। ফুটবল পাড়ায় গুঞ্জন ওঠে, এই বুঝি যায় জেমির চাকরি! জেমি কাতার থেকেই পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিকে যান নিজের পদে।
সম্প্রতি আরও একটি টোপ পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাকি যে তিন ম্যাচ হোম ভেন্যুতে খেলার কথা বাংলাদেশের, সেগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার প্রস্তাব দিয়েছে ওমান ও কাতার।জেমির সঙ্গে বাফুফের কী হলো? জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে সবসময় কেন এত অভিযোগ? জাতীয় দল নিয়ে ফেডারেশনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আসলে কী?এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। হোয়াটস্যাপে নেয়া জেমি ডের সাক্ষাৎকারের একাংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পরের তিন ম্যাচ ঢাকার বাইরে খেলার প্রস্তাব দিয়েছে ওমান ও কাতার। এ নিয়ে আপনার অভিমত কী?
আমরা এএফসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে খেলতে চাই।
বাকী তিন ম্যাচের হোম ভেন্যু বাংলাদেশ। যদি ঢাকার বাইরে খেলতে হয় তাহলে হোম সুবিধা না পাওয়াটা কতটা কষ্টের? যেখানে ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা করছে বাংলাদেশ?
এই ম্যাচগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি হোম সুবিধা না পাই তাহলে ইতিবাচক ফল আনার সম্ভাবনা কম। সবচেয়ে বড় কথা হলো ছয় ম্যাচের পাঁচটিই আমাদের অ্যাওয়ে খেলতে হবে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
সামনে বিশ্বকাপ বাছাই ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের মতো বড় দুটা টুর্নামেন্ট অপেক্ষা করছে। জাতীয় দল নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
নির্ভর করছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সূচি ও গোল্ডকাপের সময় ঘোষণার উপর। যদি গোল্ডকাপ মার্চে শুরু হয় তাহলে ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তুতি শুরু করতে চাই।
সবশেষ ফেডারেশন কাপে ঘরোয়া ফুটবলারদের পারফরম্যান্স কেমন দেখলেন?
সব ম্যাচই দেখা হয়েছে। আমার মনে হয় টুর্নামেন্টটা লিগের প্রস্তুতি হিসেবে খেলা হয় যেখানে অর্ধেকের বেশি দল কয়েক সপ্তাহের অনুশীলন করে খেলতে নামে।
কোন কোন খেলোয়াড়ের খেলা চোখে ধরেছে?
আমার মনে হয়েছে ফেড কাপটা লিগের জন্য খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের আগে ফুটবলারদের পুরোপুরি ফিট থাকা প্রয়োজন। এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কিংসের রবসন রবিনিয়োর খেলা। আর ঘরোয়া ফুটবলারদের নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। কারণ মানুষ এ নিয়ে কথা বলবে।
জেমিকে নিয়ে সবসময় একটা সমালোচনা হয় যে, জেমি লিগের খেলা মাঠে বসে দেখে না। বিষয়টা কীভাবে দেখেন?
গত বছর আমি ৩৪ রাউন্ডের ৩০ রাউন্ড দেখেছি এবং এই বছরে যতগুলো সম্ভব ম্যাচ দেখেছি। লাইভ দেখা ভালো। তবে এটা প্রয়োজনীয় নয়। যত ম্যাচ দেখেছি তাতেই সব ফুটবলারকে দেখা হয়ে যায়।শুধু ভিডিও বা কোনো অ্যাপে খেলা দেখে কি জাতীয় দলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলের খেলোয়াড় সঠিকভাবে বাছাই করা সম্ভব?
হ্যাঁ সম্ভব। আমি তাই বিশ্বাস করি। ইংল্যান্ডের পেশাদার দলে কাজ করেছি এবং ভিডিও দেখে খেলোয়াড় বাছাই ও চুক্তি করেছি। আমরা প্রতিপক্ষের খেলা দেখতে যাই না। ভিডিও দেখে বাছাই করি। তবে খেলোয়াড় বাছাই করার ক্ষেত্রে এটা যথেষ্ট না।
কোন পদ্ধতিটা ভালো?
আমি স্বীকার করি লাইভ দেখা বেশি ভাল। কিন্তু দুই উপায়ে করা যায়। আমরা তাই করি।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অনেক পুরনো। এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন একটা স্বতন্ত্র নির্বাচক প্যানেল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে কি আপনার ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে?
আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রধান কোচের খেলোয়াড় বাছাইয়ের সব ক্ষমতা থাকা উচিত। দলের স্বার্থে।
জাতীয় দলের স্বার্থে একজন বেতনভুক্ত স্থায়ী ম্যানেজার ও গোলকিপার কোচ নিয়োগ দেয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তার মধ্যে বিপ্লব ভট্টাচার্যকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
আমি এই নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত না। ম্যানেজার যাকেই দিবে আমি তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকব। তবে, যতদূর জানি, বিপ্লব খেলোয়াড় হিসেবে অনেক ভালো ছিল। আশা করি তার সঙ্গে কাজ করে গোলকিপাররা উপকৃত হবে।
কাতার ম্যাচের পর প্রেস কনফারেন্সে আপনি ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল’ এমন মন্তব্য করেছিলেন। তার পরপরই আপনাকে ‘বহিষ্কারের’ গুঞ্জন ওঠে। বাফুফে থেকে কোনও চাপ এসেছিল?
এখনও বলব আমাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। মাত্র চার সপ্তাহের ট্রেনিং নিয়ে আমরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিলাম। যেখানে ওরা চার মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মানুষ সবসময়ই গুজব করতে পছন্দ করে। আমার উপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি করেনি বাফুফে। ফেডারেশন বুঝতে পারে ম্যাচটা আমাদের খেলা উচিত হয়নি।
এবারও কি কাতার ও ওমানের ডাকে সাড়া দেয়া উচিত বাফুফের নাকি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত?
আমি বাফুফেকে এটা স্পষ্টভাবে বলেছি যে আমরা বাংলাদেশে খেলতে চাই। এএফসির দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
জাতীয় দলের ক্যাম্পের ডাক দেয়া হলে, কিছু ক্লাব খেলোয়াড় ছাড়তে চায় না। জাতীয় দলতো দেশের সম্মানের জন্য। খেলোয়াড় ছাড়ার ব্যাপারে ক্লাবের অ্যাপ্রোচ কেমন হওয়া উচিৎ?
এটা ক্লাবের বিষয়, কারণ তারা খেলোয়াড়দের বেতন দেয়। আন্তর্জাতিক উইন্ডো ছাড়া ক্লাব খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য নয়।
শেষ প্রশ্ন, যদি মার্চে গোল্ডকাপ শুরু হয় সেক্ষেত্রে কি আপনার পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকবে?
না, খেলোয়াড়রা লিগে খেলছে। আশা করি সবাই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফিট হয়ে যাবে। এবং গোল্ডকাপ হবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি।
ধন্যবাদ কোচ
ধন্যবাদ আপনাকেও।