আবাহনী-কিংস মানেই ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনা। এবারও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সবুজ ঘাসে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ভরা জমজমাট ম্যাচ উপহার দিয়েছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের দুই হেভিওয়েট দল।
দল দুটির রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে এবার জয় হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের। বৃহস্পতিবার ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আবাহনীকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে কিংস। জোড়া গোল করে দলকে ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জোনাথন ফার্নান্দেজ।
ঠিক দুই বছর আগে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে কিংসকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল আবাহনী।
মাঝমাঠ দখলে রেখে ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ করে গেছে অস্কার ব্রুজনের বসুন্ধরা কিংস।
ম্যাচের ১২তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবসন রবিনহোর শট বারে লেগে ফিরে আসে। হতাশ হতে হয় কিংস সমর্থকদের।
১৭তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে কিংস বাহিনী। এবার ডিফেন্ডার খালিদ শাফির পাস থেকে ছয় গজের ভেতর থেকে আলতো শট নেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল বেসেরা। বাম প্রান্ত দিয়ে জালে ঢুকতে থাকা বল দারুণভাবে রুখে দেন গোলকিপার সোহেল।
আবাহনী গোলের প্রথম সুযোগ পায় ১৯তম মিনিটে। ফ্রি-কিক থেকে রাফায়েল আগুস্তোর শটটা হেড করেন কারভেন্স বেলফোর্ট। গোলবারের মাঝ বরাবর গেলে সহজভাবেই বল তালুবন্দি করে বিপদমুক্ত করেন আনিসুর রহমান জিকো।
এর চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন রাফায়েল। কিংসের রক্ষণে বাধা পেয়ে বল চলে যায় বক্সের ভেতরে থাকা মাসিহ সাইঘানির পায়ে। ভলিতে বলটা বারের বাইরে মেরে দিলে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় আবাহনীর।
স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কিংসকে চমকে দেয় আবাহনী। ৩০ মিনিটের মাথায় আকাশী-হলুদদের এগিয়ে দেন ফ্রান্সিসকো তোরেস। ডান প্রান্ত থেকে বেলফোর্টের বাড়ানো বল থেকে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে বারের বাম কোণ বরাবর শটে জালে পাঠান এই ব্রাজিলিয়ান।
প্রথমার্ধের ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত আবাহনী। ৪১ মিনিটে এবার সাদ উদ্দীনের লং পাস থেকে বল বুকে নিয়ন্ত্রণ করে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট নেন তোরেস। দারুণভাবে আক্রমণ রুখে দেন গোলকিপার জিকো।
ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় আবাহনীর ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে।
পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করলেও খেই হারায়নি কিংস। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই ম্যাচে সমতা ফেরায় তারা।
৫১তম মিনিটে সমতা ফেরায় কিংস। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোনাথন ফার্নান্দেজের বুলেট শট বার কাপিয়ে ফিরে আসে। ফিরতি বলে হেড করে বল জালে জড়ান রাউল বেসেরা। তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় জোনাথনের শট বারে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে। পরে জোনাথনের নামের পাশে গোল দেয়া হয়।
১-১ ব্যবধানে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের যত নাটক যেন এই সময়েই অপেক্ষা করছিল।
১০৯ মিনিটে এবার লিড নেয় কিংস। জনির থ্রু থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত থেকে মতিন মিয়ার ক্রস থেকে সিক্স ইয়ার্ডের ভেতর থেকে গোল করেন বেসেরা। নিজের দ্বিতীয় ও টুর্নামেন্টে চার নম্বর গোলটি আদায় করে নেন এই আর্জেন্টাইন।
পাঁচ মিনিট পরে সমতায় ফেরার সবচেয়ে বড় সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় আবাহনী। বাম প্রান্ত থেকে জুয়েলের ভেসে আসা পাসটা হেডে বারের সাইড দিয়ে পাঠিয়ে দেন জীবন।
ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে অফসাইড থেকে গোল করে আবাহনী। এ নিয়ে লাইন্স ম্যানের ওপর চড়াও হয় আবাহনীর ফুটবলাররা। এ সময় খেলা বন্ধ ছিল পাঁচ মিনিটের মতো।
নাটকের পর ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে রবসনের পাস থেকে এবার জোনাথন ফার্নান্দেজের গোলে ব্যবধান ৩-১ করে কিংস।
এ জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে পা রাখল বসুন্ধরা কিংস। আগামী ১০ জানুয়ারি সাইফ স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে মাঠে নামবে কিংস।