এবারের ফেডারেশন কাপের প্রত্যেক কোয়ার্টার ফাইনালই বাড়তি উত্তেজনা ছড়িয়েছে। টানটান উত্তেজনা ছড়াল টুর্নামেন্টের শেষ আটের শেষ ম্যাচটিও।
কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ লড়াইয়ে উত্তর বারিধারার সঙ্গে শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ঢাকা আবাহনী একমাত্র গোলটি আসে ব্রাজিলের ফুটবলার ফ্রান্সিসকো তোরেসের দুর্দান্ত ভলি থেকে।
ফেভারিট ও কাগজে-কলমে হেভিওয়েট হয়েই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে নামে মারিও লেমসের আবাহনী
অন্যদিকে এবার চমক দেখিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেয় কোচ শেখ জাহিদুর রহমানের উত্তর বারিধারা। আকাশি-হলুদ আক্রমণ রুখে দিতে জমাট রক্ষণের সঙ্গে আক্রমণের পরিকল্পনাই ছিল স্থানীয় এই কোচের।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে আবাহনীকে রুখে দিলেও অতিরিক্ত সময়ে এক আচমকা ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উত্তর বারিধারার রক্ষণ। ভলিতে আবাহনীর তোরেসের বুলেট শটে স্তব্ধ হয়ে যায় সুমন-মামুন আলিফরা। ওই এক গোলেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে মারিও লেমসের শিষ্যরা।
তবে শুরুটা জমজমাট উপহার দিয়েছে দুই দল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে বিনোদনের সকল রসদে ভরে উঠে ম্যাচ।
ম্যাচের আট মিনিটে উত্তেজনার শুরু। জুয়েল রানার পাস থেকে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া জীবনের মাটি কামড়ানো শটটা কর্নারের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেন উত্তর বারিধারার গোলকিপার মামুন আলিফ। পরপর দুটি পেনাল্টি থেকে কোনও সুযোগ তৈরি করে নিতে ব্যর্থ হয় আকাশি-হলুদ শিবিররা।
এবার ১২ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে থেকে একটা দারুণ সুযোগ তৈরি করে উত্তর বারিধারা। ফ্রি-কিক থেকে তৈরি হওয়া বলটা বাঁ পায়ে হাফ ভলি করেন অধিনায়ক সুমন রেজা। তবে শটটা দুর্বল হওয়ায় বলটা তালুবন্দী করতে খুব একটা ঘাম ঝরাতে হয়নি আবাহনীর গোলকিপার সোহেলকে।
প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে দুই দলের মধ্যে গোছানো ফুটবল নৈপুণ্য দেখা যায়।
১৬ মিনিটে লিড নিতে পারত আবাহনী। রাফায়েল আগোস্তের কর্নার থেকে মাসিহ সাইঘানির হেডটা বারের একটু উপর দিয়ে গেলে আবারও হতাশ হতে হয় আবাহনী সমর্থকদের।
২১ মিনিটেও ডেডলক ভাঙতে ভাঙতে ভাঙা হয়নি আবাহনী। উত্তর বারিধারাকে একেবারে গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে বাঁচিয়ে দেন পাপন সিং। রায়হানের লম্বা থ্রো থেকে সাইঘানির হেডটা ডান বার দিয়ে ঢুকছিল। অনেকটা বাম প্রান্তে লাফিয়ে গোলকিপারের ভূমিকা পালন করেন পাপন।
এই ক্লিয়ার থেকেই দারুণ একটা পাল্টা আক্রমণ গড়ে তুলে বারিধারা। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বারিধারার রক্ষণ থেকে বল চলে যায় আবাহনীর রক্ষণে। মোস্তফার বাড়ানো থ্রুটা যদি সুমন রেজার মাথায় পড়ত তাহলে বড় বিপদে পড়ার সম্ভাবনায় থাকত আবাহনী।
গোছানো ফুটবল উপহার দিয়ে ৩৬ মিনিটে সুযোগ তৈরি করে বারিধারা। ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে সুমন রেজার তুলনামূলক দুর্বল পায়ে নেয়া দুর্দান্ত লং রেঞ্জ শটটা একেবারে কাপিয়ে দেয় আবাহনীর গোলপোস্ট। গোলকিপার সোহেল ফিস্ট করে একেবারে শেষ মুহূর্তে বিপদমুক্ত না করলে বিপদেও পড়তে হতো আবাহনীর।
সেই বিপদ কাটিয়ে প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় আবাহনী। ডি-বক্সের ভেতরে গোলকিপার মামুনের কিছুটা অসচেনতায় বল পেয়ে পোস্টে শট নেন আবাহনীর অধিনায়ক। কিন্তু সেটি জালে জমাতে ব্যর্থ হন তিনি। আরেকবার হতাশায় ডোবে আকাশী-হলুদ সমর্থকরা।
যার ফলে গোলশূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যায় ম্যাচ।
দ্বিতীয়ার্ধেও কৌশলে কোনও পরিবর্তন নেই। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয় কিছু ধীর গতির ফুটবল দিয়ে। ৫৯ মিনিটে এসে একটা সুযোগ তৈরি করে আবাহনী। বাম প্রান্ত থেকে বেলফোর্টের ক্রসটা মাথায় ঠিকমতো জমাতে পারেননি ব্রাজিলের রাফায়েল আগোস্তো।
৬৪ মিনিটে নির্ধারিত সময়ের সবচেয়ে সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ পায় আবাহনী।
ডি-বক্সের একটু বাইরে ফ্রি-কিক আদায় করে নেয় আবাহনী। রাফায়েলের থ্রু থেকে বলটা রক্ষণে বাধা পেয়ে চলে যায় মাসিহ সাইঘানির পায়ে। এই আফগানির শটটা গোলবারের সামনে রক্ষণে বাধা পেয়ে ফাঁকায় থাকা জুয়েল রানার পায়ে এসে পড়ে। এক টাসেই বারে শট নিলে বল বারের পাশ দিয়ে গিয়ে আরেকটি হতাশার গল্প রচনা করে আবাহনী।
এদিকে উত্তর বারিধারার আক্রমণ মানেই ‘ওয়ান ম্যান শো’ সুমন রেজার।
ম্যাচের ৬৬ মিনিটে দারুণ একটা অ্যাটাক তৈরি করে উত্তর বারিধারা। ডি-বক্সের বাইরে সুমনের ব্যাক পাস থেকে কসনেভের নেয়া বুলেট শটটা বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
দুই দলের জন্য ডেডলকটা ভাঙাই যেন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকেও সময়ও ছুটছে রেফারির শেষ বাঁশির দিকে।
তবে তার আগে ৮৩ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ তৈরি করে আবাহনী। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে বেলফোর্টের উদ্দেশে রক্ষণকে বোকা বানিয়ে দারুণ একটা থ্রু করেন জীবন। বলটা পায়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েও গোলকিপারকে বিট করতে পারেননি এই হাইতিয়ান। শট নেয়ার আগেই পেছন থেকে বল ক্লিয়ার করে বারিধারার রক্ষণ।
৮৯ মিনিটে জীবনের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে ডি-বক্সের বাইরে কিছুটা জায়গা তৈরি করে বাঁকানো শট নেন বেলফোর্ট। তবে এমন সহজ শট গ্লাভসবন্দী করতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি মামুন আলিফের।
ম্যাচ যখন শেষ বাঁশির অপেক্ষায়, তখন ফ্রান্সিসকো তোরেসের ভলিতে ডেডলক ভাঙে আবাহনী। সাইঘানির লম্বা থ্রোটা জীবনের পায়ে লেগে ঠিক সিক্স ইয়ার্ডের সামনে পেয়ে যান তোরেস। সেখান থেকে ভেসে ওঠা বলটা জালে জড়াতে ভুল করেননি এই ব্রাজিলিয়ান। একই সঙ্গে দলের একমাত্র ও নিজের প্রথম গোলটি আদায় করে নেন তোরেস।
আগামী ৭ জানুয়ারি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে খেলবে ঢাকা আবাহনী।