৫০ বছর আগের ওই দিনটাও ছিল শনিবার। গ্লাসগো রেঞ্জার্সের মাঠ আইব্রক্স স্টেডিয়ামে সেদিন ওল্ড ফার্ম ডার্বিতে তারা মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সেল্টিকের।
ম্যাচের ৮৯তম মিনিটে জনি জনস্টোনের গোলে এগিয়ে যায় সেল্টিক। শেষ মিনিটে গোল খেয়ে জয়ের আশা ত্যাগ করে তাই মাঠ ছাড়তে শুরু করেন রেঞ্জার্স সমর্থকরা। ১৩ নম্বর সিড়ি দিয়ে তারা যখন নামছেন, তখনই তারা পেছনে শুনতে পান সমর্থকদের উল্লাস। কলিন স্টাইনের গোলে যে সমতায় ফিরেছে রেঞ্জার্স!
বিপত্তি বাধে আইব্রক্স স্টেডিয়াম থেকে বের হবার সময়। সাত লেনে ভাগ করা ১৩ নম্বর সিড়িটি দিয়ে মাঠ থেকে বেরুনোর সময় ঘটে দুর্ঘটনা।
পায়ের নীচে চাপা পড়ে মারা যান ৬৬ জন রেঞ্জার্স সমর্থক। তাদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ কিশোর, যারা বাস করতেন একই এলাকায়, ১০০ গজের ভেতর।
প্রাথমিক ধারণা ছিল, রেঞ্জার্সের গোলের পর মাঠে ফিরতে যাওয়ার সময় ঘটে দুর্ঘটনা। তবে তদন্তে দেখা যায়, যখন দুর্ঘটনা ঘটে, সবাই মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন।
সেই রাতে মারা যাওয়া ৬৬ ভক্তের মধ্যে ছিলেন রেঞ্জার্স সমর্থক বিলি রের ভাই। বিলি ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইলকে বলেন, বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তারও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি তার, বন্ধুকে নিয়ে ডার্বি দেখতে গিয়েছিলেন তার ভাই জেমস। জেমস আর ফিরে আসেননি।
সে রাতে বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক জিমনেশিয়ামকে মর্গ বানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেখানেই রাখা হয়েছিল মৃতদেহ।
আইব্রক্স স্টেডিয়ামের ১৩ নম্বর সিড়িতে দুর্ঘটনার প্রথম ঘটনা ছিল না এটি। ১৯৬১ সালে সেখানে মারা যান দুই দর্শক। ১৯৬৯ সালে আহত হন ২৬ জন।
সেদিন আইব্রক্সে ছিলেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার অ্যালেক্স ফার্গুসনও। তিনি স্মৃতিচারণ করেন, স্থানীয় হাসপাতালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর অ্যাম্বুলেন্সকে স্টেডিয়ামের দিকে যেতে দেখেন তিনি।
‘রেঞ্জার্স সমতায় ফেরার পরই আমি মাঠ ছেড়েছিলাম। হাসপাতালের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি অনেক অ্যাম্বুলেন্স মাঠের দিকে যাচ্ছে। আমরা ভাবছিলাম, সেখানে নিশ্চয়ই বড় কোন ঝামেলা হচ্ছে।’
‘বাড়িতে ফেরার পর জানতে পারলাম কী হয়েছে। আমার ভাই মার্টিনও সেই ম্যাচে ছিল। সে রাতে বাড়ি ফেরার পর আমরা বুঝতে পারি, সে ঠিক আছে’, বলেন ফার্গুসন।
৫০ বছর পর একই মাঠে আবারও মুখোমুখি হয়েছে রেঞ্জার্স ও সেল্টিক। ম্যাচের আগে সেই ৬৬ ভক্তের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দুই দলই।