বাংলাদেশে কখনও আসা হয়নি ডিয়েগো ম্যারাডোনার। তবে, দেশে না আসলেও বাংলাদেশি ফুটবলারদের একবার দারুণ উপহার দেন ফুটবল ঈশ্বর! নিজেই সাক্ষাত করে চমকে দেন সবাইকে।
ঘটনাটি ২০১৮ সালের। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সুস্থ ফুটবলারদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ইউনিফায়েড ফুটবল দল খেলতে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটির ফুজাইরাহ আমিরাতে, আল ফুজাইরাহ ক্লাবের মাঠে অনুশীলন করছিলেন দেশের ফুটবলাররা।তখন এই ক্লাবের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ম্যারাডোনা। হঠাৎ অনুশীলনের সময় বাংলাদেশের ইউনিফায়েড দলের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
ফুটবল কিংবদন্তির বিদায়ে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন সেই দলের ফুটবলার মো. মাহামুদুল হাসান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ঢাকার রহমতগঞ্জ ক্লাবের এই ফুটবলার নিউজবাংলাকে শোনালেন ম্যারাডোনার সঙ্গে দেখা হওয়ার গল্প।
মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ও সুস্থ ফুটবলার মিলিয়ে ১৫ সদস্যের একটা ইউনিফায়েড নিয়ে আবুধাবিতে গেলাম। আমি তখন বিকেএসপিতে খেলি। সেখান থেকে এই দলে সুযোগ পেয়ে গেলাম। আবুধাবিতে একটা সুবিধা হলো তারা সবাইকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে নিয়ে যায় এবং অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়।
‘আমাদের সুযোগ হয়েছিল ফুজাইরাহ নামের একটা জায়গায় যাওয়া। সেখানে আমাদের শিডিউল অনুযায়ী ট্রেনিং করছিলাম। দিনটা ছিল ১৪ মার্চ রাত। সেদিন জানানো হলো একটা সারপ্রাইজ আছে। ম্যারাডোনা আসবেন। আমরা বিশ্বাস করি নাই। কারণ ম্যারাডোনা এখানে কী করবেন!’
১৫ মার্চ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসে। অনুশীলন করছিলেন মাহামুদুলরা। ম্যারাডোনা হঠাৎ করেই সাক্ষাত করতে চলে আসেন মাঠে। ছবি তোলাসহ আড্ডায় মাতেন বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তি। সময় দেন ২৫ মিনিট।
সেই ২৫ মিনিটের স্মৃতি আজও মোহিত করে মাহামুদুলকে। তিনি বলেন, ‘বিকেলে অনুশীলন করছি। একজন লেজেন্ড যখন আসেন এমনিই ভীড় লেগে যায়। অবশেষে তিনি আমাদের সঙ্গে ২৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেলেন।’
প্রথম সাক্ষাতেই সবাইকে আপন করে নেন ম্যারাডোনা। রহমতগঞ্জের এই ফুটবলার বলেন, ‘তিনি এসেই সবার সঙ্গে করমর্দন করলেন। সবার হাতে চুমু খেলেন। বাংলাদেশে আসার জন্য দাওয়াত দিলাম। উনিতো স্প্যানিশ বলেন, আমরা তাই তার দোভাষীকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। এরপর আমরা উনাকে স্পেশাল অলিম্পিক নিয়ে বললাম। ম্যারাডোনা বললেন আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে হবে।’
‘ফুটবল ঈশ্বরের’ অনুপ্রেরণায় উজ্জ্বীবিত হয়ে এই টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ দল।
মাহামুদুলের কথায়, ‘মিরাকল হলেও সত্য এই টুর্নামেন্টে আমরা অনেক ভালো ভালো দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই। তার কথাগুলো আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। এরপর তিনি সবার সঙ্গে ছবি তুললেন।
‘আরও অবাক লাগে উনি আমাদের মতো নগন্য মানুষের সঙ্গে এমন হেসে হেসে আলিঙ্গন করেছে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমিতো সেই দোভাষীকে বলে ম্যারাডোনাকে একবার ছুঁয়ে দেখেছিলাম। পৃথিবী জয় করা এই ফুটবলারটি আসলেই মানুষ কী না স্পর্শ করে দেখেছিলাম। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমার।’
ম্যারাডোনার বিদায় নিয়ে কথা বলার সময় গলা ধরে আসে মাহামুদুলের, ‘তার মতো এমন কিংবদন্তি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এটাই বড় পাওয়া। কিন্তু তিনি এতো দ্রুত পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন ভাবিনি। এমন ফুটবলার যুগে যুগে নয় শতাব্দীতে একজন করে আসেন। তাকে মিস করবো অনেক।’