বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষ কি আমাকে ভালোবেসেই যাবে: ম্যারাডোনা

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ২২:০৯

আমি চিরকাল এই মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। প্রতিদিন তারা আমাকে অভিভূত করে। আর্জেন্টাইন ফুটবলের কারণে আমার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কোনোদিন ভোলার মতো নয়। আমার কল্পনাকেও তা ছাড়িয়ে যায়। কারণ, অনেকটা সময় আমি এসবের বাইরে ছিলাম। তখন মনে হতো, মানুষ কি আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে! আমাকে নিয়ে তাদের অনুভূতি কি আজীবন একই থাকবে!

আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। কোটি কোটি ফুটবল অনুরাগীকে শোকে ভাসিয়ে চলে গেছে ফুটবল ঈশ্বর।

ভক্তদের এই চোখের জল কি প্রাণহীন জগত থেকে অনুভব করছেন মুকুটহীন মহানায়ক!

জীবনে খ্যাতির চূড়া যেমন স্পর্শ করেছিলেন, তেমনি ডুবেছেন বিতর্কের গহীন সাগরে। এরপরেও জীবনের রিয়েলিটি শোতে তিনি এক ধ্রুব নায়ক। নন্দিত-নিন্দিত এই মহাতারকা জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে অজস্র মানুষের বিপুল ভালোবাসায় মুগ্ধতার কথা জানিয়ে গেছেন।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন আগে আর্জেন্টাইন পত্রিকা ক্লারিনকে এই সাক্ষাৎকার দেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। সেটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য। 

প্রশ্ন: জীবনে আপনার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ কী ঘটেছে? কোনো আক্ষেপ আছে কি?

ম্যারাডোনা: আমি সুখী ছিলাম এবং আছি। আমার যা কিছু আছে, সব আমাকে এনে দিয়েছে ফুটবল। কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি আমি পেয়েছি। নেশা আমার জীবনে না থাকলে হয়ত আরও বেশি খেলতে পারতাম।

কিন্তু আজ সেটা অতীত। এখন আমি ভালো আছি এবং আমার আক্ষেপের জায়গা হলো- মা-বাবাকে হারানো। টোটার (ম্যারাডোনার মা) সঙ্গে শুধু একটা দিন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমি সবসময় করি। আমি জানি, স্বর্গ থেকে তিনি আমায় নিয়ে খুবই গর্বিত এবং সেখানে তিনি সুখে আছেন।

প্রশ্ন: জন্মদিন উপলক্ষে সব আর্জেন্টাইনের জন্য আপনি কী চান?

ম্যারাডোনা: আমি চাই এই মহামারি (করোনা) খুব দ্রুত চলে যাক এবং আমার আর্জেন্টিনা সামনে এগিয়ে যাক। সব আর্জেন্টাইনের জন্য আমার চাওয়া, তারা সবাই যেন ভালো থাকে। আমাদের দেশটা খুব সুন্দর এবং আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারবেন।

আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেতে পাচ্ছে না। ক্ষুধার্ত থাকার কষ্ট কী সেটা আমি জানি। আমি জানি যখন দিনের পর দিন যখন তুমি না খেয়ে থাক তখন পেটের ভেতর কেমন অনুভূতি হয়। এটা আমার দেশে হতে পারে না। আর্জেন্টাইনদের জন্য আমার চাওয়া- তারা যেন সুখে থাকে, কাজ করতে পারে ও প্রতিদিন খেতে পায়। 

প্রশ্ন: করোনা মহামারি আপনাকে খুব কাছ থেকে আঘাত করেছে। স্ত্রীর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে, আপনার বোন আক্রান্ত হয়েছে এবং আপনাকেও কড়া নিয়মের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আপনি কি করোনাভাইরাসকে ভয় পাচ্ছেন?

ম্যারাডোনা: আমাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারত সেটা এটাই। এমন কিছু আমি আগে কখনো দেখিনি। তবে লাতিন আমেরিকা অনেক বেশি সফল। আশা করছি, এটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। অনেক মানুষের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে, কারো কাজ থাকছে না, কেউ ঠিকমতো খেতে পাচ্ছে না। আমি পুতিনের উপর ভরসা রাখি। আমি জানি তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে আসবেন, কারণ এমন অবস্থা বেশি দিন থাকা উচিত নয়। 

প্রশ্ন: মানুষ যখন আপনার কাছে আসে, আপনাকে দেখে, ছোঁয়, যে অভিব্যক্তি চেহারায় ফুটে ওঠে- সেটা কি আপনি অনুভব করতে পারেন?

ম্যারাডোনা: আমি চিরকাল এই মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। প্রতিদিন তারা আমাকে অভিভূত করে। আর্জেন্টাইন ফুটবলের কারণে আমার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কোনোদিন ভোলার মতো নয়।

আমার কল্পনাকেও তা ছাড়িয়ে যায়। কারণ, অনেকটা সময় আমি এসবের বাইরে ছিলাম। তখন মনে হতো, মানুষ কি আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে! আমাকে নিয়ে তাদের অনুভূতি কি আজীবন একই থাকবে!

প্রেজেন্টেশনের দিন আমি যখন জিমনেশিয়ার মাঠে প্রবেশ করলাম, সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম- মানুষের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক কোনোদিন শেষ হবে না।

প্রশ্ন: আর্জেন্টাইন ক্রীড়াবিদদের মধ্যে কী এমন আছে যা নীল-সাদা রঙটাকে হারানো অসম্ভব করে তুলেছে?

ম্যারাডোনা: আমরা অল্প বয়সেই বিদেশে পাড়ি জমাই। দেশ থেকে অনেকটা সময় আমরা দূরে থাকি। একে অপরকে ভীষণভাবে মিস করি। এ কারণেই যখন কোনো জাতীয় দল আমাদের ডাকে- সাঁতরে হলেও আমরা চলে আসি। কারণ, এটা নিজ দেশে থাকার অনুভূতি দেয়, নিজ দেশের পতাকাকে সুরক্ষা করার অনুভূতি তৈরি করে এবং এই অনুভূতিটাই আমাদের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করে।

প্রশ্ন: আর্জেন্টাইন খেলার কোন দিকটি আপনাকে উৎসাহিত করে?

ম্যারাডোনা: সবকিছু। আমি সবকিছু দেখি। আমি প্রত্যেক আর্জেন্টাইনকে অনুসরণ করি- তিনি যেখানেই যাক। আর্জেন্টাইন পতাকা যেখানেই উপস্থিত, সেখানেই আমি অনুপ্রেরণা দিতে চাই। যখনই কোনো আর্জেন্টাইনকে বিজয়ী হতে দেখি- উচ্ছ্বাসিত হই। সেদিনই আমি পিকুকে (দিয়েগো শোয়ার্টজমান, আর্জেন্টাইন টেনিস খেলোয়াড়) দেখছিলাম নাদালের (স্প্যানিশ টেনিস খেলোয়াড়) সঙ্গে খেলতে এবং তাদের চেয়ে মনে হয় আমি বেশি উত্তেজিত ছিলাম।

প্রশ্ন: মেসি-বার্তোমেউ-বার্সেলোনার বিষয়টা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি সে জায়গায় থাকলে কি দরজা বন্ধ করে চলে আসতেন?

ম্যারাডোনা: আমি বুঝতে পারছিলাম এর শেষটা খুব খারাপ হতে যাচ্ছে এবং ভেবেছিলাম লিও বের হয়ে আসবে। বার্সেলোনা বড় একটা ক্লাব। সে ওখানে অনেক দিন ছিল। কিন্তু যে ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য, সেটা লিও পায়নি। সে তাদের সবকিছু দিয়েছে, অনেক উপরে উঠিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যখন ও হাওয়া বদল করতে চাইল, তারা না করে দিল।

বিষয়টা হলো, দরজা বন্ধ করে ফেলাটা এত সহজ না। এর সঙ্গে একটা শর্ত জড়িত, বড় একটা ক্লাব জড়িত, মানুষের ভালোবাসা জড়িত। নাপোলির সময়ে আমি এমন করিনি।

প্রশ্ন: রিভার ও বোকার মধ্যে কে কোপা লিবার্তাদোরেস জিতবে?

ম্যারাডোনা: বোকা ভালো, আমি পছন্দ করি। মিগেল (রুসো) দলের শক্তি ফিরিয়ে এনেছে। এখন দলে আরও কিছু খেলোয়াড় যোগ দিয়েছে যারা দলটাকে উপরে তুলছে। রিভার গায়ার্দোর সঙ্গে অনেক সময় ধরে কাজ করেছে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা একে অপরকে মন থেকে চেনে। তবে এবার বোকার উপর আমি বিশ্বাস রাখছি।  

সাক্ষাৎকারটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন ক্রিস্টিনা জয়ীতা মুন্সী

এ বিভাগের আরো খবর