বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুরুর বিদায়ে শোকাচ্ছন্ন ‘বাংলার ম্যারাডোনা’

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:৪১

গুরুর এমন বিদায়ে কাতর হয়ে সাব্বির বলেন, ‘ম্যারাডোনা শতাব্দিতে একবারই জন্মায়। আমার মনে হয় না আরেকবার কোন ম্যারাডোনা জন্মাবে। সম্ভব না। বল নিয়ে এমন জাদু দেখানো ফুটবলারকে হারানো অনেক কষ্টের। অনেক বেদনার।’

১৯৮৯ সালের ঘটনা। ঢাকার মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ থাইল্যান্ডের সঙ্গে। মাঝমাঠ থেকে বলটা নিয়ে চার থাই ফুটবলারকে ড্রিবলিং করে দারুণ এক গোল করেন এক স্বাগতিক প্লে-মেকার। অনেকটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার করা ‘শতাব্দীর সেরা’ গোলটির মতো।   

থাইল্যান্ডকে পুরো দলকে বোকা বানিয়ে দর্শণীয় গোলটির মালিক রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির। দেশের সমর্থকেরা যাকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘বাংলার ম্যারাডোনা’।

ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার জার্সিতে জাদু দেখাতেন, আর সাব্বির লাল-সবুজে। দুজনই ছোট গড়নের। খেলার ধরন ও পজিশনও কাছাকাছি। তবে ম্যারাডোনাকে নিজের গুরু মানেন সাব্বির।

তাই গুরুর বিদায়টা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না ‘শিষ্য’। শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। নিউজবাংলার সঙ্গে ম্যারাডোনার বিদায় শোকের অনেকখানিই ভাগ করেছেন দেশের ফুটবলের এই কিংবদন্তি।

বলেন, ‘এতো বড় একজন ফুটবল কিংবদন্তির এতো কম সময়ে চলে যাওয়াটা কষ্টদায়ক। এটা স্বাভাবিক সব মৃত্যুই কষ্টদায়ক। অনেক মানুষ মিস করবেন ম্যারাডোনাকে। তিনি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন।

‘তার মতো ফুটবলার যিনি এককভাবে যুব চ্যাম্পিয়ন ও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। এরকম আর কেউ নাই। বিভিন্ন সময় তার যে উত্তেজনা এটা দেখতে পারব না। মাঝেমধ্যে বিভিন্নরকম কাণ্ড করেন এটাও দেখতে পারব না।’

ম্যারাডোনাকে অনুসরণ করে নিজের খেলার স্টাইলে পরিবর্তন আনার স্মৃতিটুকু মনে করিয়ে দেন সাব্বির।

মোহামেডানের এই প্লেমেকার বলেন, ‘ম্যারাডোনার ৮৬ বিশ্বকাপ দেখেছি। বিভিন্ন লিগের খেলাও দেখেছি। প্রত্যেক ফুটবলারই একজন ভালো ফুটবলারকে অনুসরণ করে। ম্যারাডোনা তেমনই একজন।

‘আগে খেলা হতো ৪-২-৪ ফরমেশনে। দুইজন উইংয়ে, দুইজন স্ট্রাইকার আর দুইজন মাঝমাঠে। পরবর্তী সময়ে ৪-৩-৩ এসেছে। তারপরে ৪-৪-২ আসছে। আমি আগে উইংয়ে খেলতাম। যখন থেকে ম্যারাডোনা ফুটবলে আসলো তখন কিন্তু মিডফিল্ড খেলতাম।’

মিডফিল্ডার ম্যারাডোনাকে দেখে মাঝমাঠে থিতু হন সাব্বির। বলেন, ‘আপনি অবশ্যই দেখবেন যেখানেই বল সেখানেই ম্যারাডোনা। তার বিচরণ ছিল পুরো মাঠেই। একই জিনিস আমার ক্ষেত্রেও ছিল। যখন আমি উইংয়ে খেলতাম তখন বিচরণ পুরো মাঠে ছিল না। পরে মিডফিল্ডে খেলেছি। পুরো মাঠে খেলতে পারতাম। তাকে অনুসরণ করেই এটা হয়েছে।’

মাঝমাঠে থিতু হতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় বলে জানান সাব্বির। বলেন, ‘কতটা স্কিলফুল হতে হয়, কতটা কোয়ালিটিফুল হতে হয় এভাবে খেলতে গেলে। পুরো টিমকেই খেলাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় জয় এনে দিচ্ছেন। এটা খুবই কঠিন কাজ। প্রচুর অনুশীলন দরকার এজন্য। ম্যারাডোনা কীভাবে খেলে ফলো করতাম। সে বাঁ পায়ের আর আমি ডান পায়ের। তারপরও চেষ্টা করতাম তার খেলার স্টাইল ফলো করার।’

মোহামেডানের জার্সিতে এক যুগ খেলা সাব্বির ম্যারাডোনার যে বিষয়টা সবচেয়ে পছন্দ করতেন তা হলো পাসিং। ‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ম্যারাডোনা যখন উইংয়ে খেলতেন মনে হতো বলটা আউট হয়ে যাবে। একদম শেষ মুহূর্তে পাস করে দিতেন তিনি। এটা অসাধারণ একটা স্কিল। আমিও শিখেছিলাম’, জানান সাব্বির।

খেলার ধরনে মিল থাকার কারণে ৮০ দশকে সাব্বিরের নাম পড়ে যায় ‘বাংলার ম্যারাডোনা’। নিজের নামের পাশে ম্যারাডোনা নামটা শুনলেই গর্ববোধ করেন সাব্বির। বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সেরা প্লেয়ারের নামের সাথে বা সম্মানের সাথে আমার নামটা নেয়া হয় তখন আমি গর্বিত বোধ করি। যদিও তার ধারেকাছে ছিলাম না আমি। সমর্থকেরা বা সাংবাদিকেরা এই নাম দিয়েছে। আমার খেলার মধ্য দিয়ে সমর্থকরা একটু হলেও খুশি হতেন দেখে ডাকতেন ‘বাংলার ম্যারাডোনা’। এটা অনেক গৌরবের। অনেক ভালো লাগে। অন্যরকম অনুভূতি।'

গুরুর এমন বিদায়ে কাতর হয়ে সাব্বির বলেন, ‘ম্যারাডোনা শতাব্দীতে একবারই জন্মায়। আমার মনে হয় না আরেকবার কোনো ম্যারাডোনা জন্মাবে। সম্ভব না। বল নিয়ে এমন জাদু দেখানো ফুটবলারকে হারানো অনেক কষ্টের। অনেক বেদনার।’

এ বিভাগের আরো খবর