১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ইংল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা। ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের রেষারেষিতে ম্যাচে ভিন্ন আবহ। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা জন্ম দিলেন অবিশ্বাস্য এক বিতর্কের, ঠিক তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে চলা অসংখ্য বিতর্কের মতো।
ইংলিশ এক ডিফেন্ডারের ক্লিয়ারেন্স গেলো পেছনদিকে, বলের দিকে ছুটলেন ম্যারাডোনা ও ইংল্যান্ড গোলকিপার পিটার শিলটন। হেড করতে পারবেন না বুঝতে পেরে ম্যারাডোনা বাড়িয়ে দিলেন তার হাত। সেই হাতে লেগে বল জড়ালো জালে, ইংলিশ প্লেয়ারদের শত আপিলেও গোলের বাঁশিই বাজালেন রেফারি।
ম্যারাডোনা মারা গেছেন বুধবার। তার বয়স ছিলো ৬০ বছর। তার মৃত্যুর পর ইংলিশ পত্রিকা ডেইলি মেইলের এক কলামে শিলটন লিখেছেন, ম্যারাডোনার মহত্ব ছিল, কিন্তু ছিল না স্পোর্টসম্যানশিপ।
‘সে যদি জানত সে হেড করতে পারত তাহলে কি সে হাতের ব্যবহার করত? অবশ্যই না। সুতরাং ওটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।
‘যেটা আমার ভালো লাগেনি সেটা হলো সে কখনও ক্ষমা চায়নি। কোন পর্যায়েই সে বলেনি সে প্রতারণা করেছে এবং সে ক্ষমা চাইতে চায়। বরং, সে তার 'ঈশ্বরের হাত’ বাক্যটি ব্যবহার করে। সেটি ঠিক ছিল না। মনে হচ্ছে, তার মহত্ব ছিল কিন্তু দুঃখজনকভাবে স্পোর্টসম্যানশিপ ছিল না’, লেখেন শিলটন।
ম্যারাডোনা সেই গোলের জন্য ক্ষমা চাইলে তার সঙ্গে করমর্দন করতেও আপত্তি ছিল না শিলটনের। কিন্তু ক্ষমা চাননি ম্যারাডোনা, ঘটেনি হাত মেলানোর ঘটনাও।
‘আমাকে এবং তাকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে পরের বছরগুলোয়। প্রতিবারই আমার কথা একই ছিল- আমি যদি মনে করি সে ক্ষমা চাইবে, তাহলে আমি খুশি মনেই সেখানে যাব। এমনকি তার সঙ্গে করমর্দনও করতাম। কিন্তু আমাকে কখনই এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি যে সেটি হতে যাচ্ছে’, কলামে জানান শিলটন।
সেই 'ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে করা গোলের পর ম্যারাডোনা অবশ্য করেছিলেন শতাব্দীর সেরা গোলটি। শিলটনসহ ছয় জনকে কাটিয়ে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ান এই আর্জেন্টাইন।
‘সে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি অসাধারণ গোল করেছিল, কিন্তু আমরা তখনও প্রথম গোলটির প্রভাব থেকে বের হতে পারিনি। ম্যাচে প্রথম বার আমরা তাকে আমাদের দিকে দৌড়াতে দিয়েছিলাম এবং সে গোল করে বসে। সেটা দারুণ গোল ছিল কিন্তু আমরা সবাই নিঃসন্দেহ- প্রথম গোলটা না হলে সে দ্বিতীয়টিও করতে পারত না’, বলেন শিলটন।