বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছবিতে ফুটবল ঈশ্বর

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:০৩

ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিউজবাংলা বাছাই করেছে তার জীবনের ২০টি ছবি। শৈশব থেকে শুরু করে বোকা জুনিয়র্স, আর্জেন্টিনা, নাপোলি, বার্সেলোনা কাঁপানো মহান শিল্পীর এ এক বর্ণিল অ্যালবাম। 

বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন ফুটবলের ঈশ্বর। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা অধ্যায়ের অবসান হলো ৬০ বছরে। ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিউজবাংলা বাছাই করেছে তার জীবনের ২০টি ছবি। শৈশব থেকে শুরু করে বোকা জুনিয়র্স, আর্জেন্টিনা, নাপোলি, বার্সেলোনা কাঁপানো মহান শিল্পীর এ এক বর্ণিল অ্যালবাম।   

আর্জেন্টিনার ভাগ্যাকাশে উৎসবের আলো

চার্চ অফ পম্পেইয়ে ম্যারাডোনার ব্যাপ্টিজম (১৯৬০) 

 

'আমি তো ওকে বামন ভেবেছিলাম'

১০ বছর বয়সী ম্যারাডোনার খেলা দেখে আর্জেন্টিনার তখনকার শিশু দলের কোচ ফ্রান্সিসকো কর্নেয়ো বিশ্বাস করতে পারেননি তার বয়স ১০। তাই প্রমাণ চেয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। পরে বলেছিলেন, 'আমি তো ওকে বামন ভেবেছিলাম!'

১০ বছর বয়সী ম্যারাডোনা 

 

জাপানে যুব বিশ্বকাপ জয়

১৯৭৯ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলতে যান জাপানে। অবধারিতভাবেই ডিয়েগো ফেরেন শিরোপা নিয়ে! 

যুব বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা

 

৮২-এর কান্না

১৯৮২ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিততেই হবে। নইলে ছিটকে পড়তে হবে বিশ্বকাপ থেকেই। কিন্তু ব্রাজিল ম্যাচে বারবার ফাউলের শিকার হলেও ম্যারাডোনা দেখলেন, ফাউলের বাঁশি রেফারি বাজাচ্ছেন না। তাতেই মেজাজ হারালেন। ৮৫ মিনিটে বাতিস্তার বুকে লাত্থি মেরে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল ম্যারাডোনা ও আর্জেন্টিনার। 

ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাচ্ছেন মাঠ ছেড়ে

 

বার্সেলোনায় দিনকাল

বোকা জুনিয়র্স থেকে বার্সেলোনায় ১৯৮২ সালে পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার জন্য বার্সেলোনাকে গুণতে হয়েছিল বিশ্ব রেকর্ড পাঁচ মিলিয়ন ইউরোর ট্র্যানসফার ফি। তবে মাত্র দুই বছর সেখানে থেকে ম্যারাডোনা পাড়ি জমান নাপোলিতে। 

বার্সেলোনায় ম্যারাডোনা

 

নাপোলির মহারাজা

১৯৮৪ সালে ম্যারাডোনা যখন নাপোলিতে আসলেন, নাপোলি তখন ইতালির সেরা দল হওয়া দূরে থাক, বরং কোনমতে সেরি আতে টিকে থাকাই তাদের দায়। ইতালিয়ান ঘরোয়া ফুটবলের শিরোপা তখন তাদের জন্য ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতই ব্যাপার। বিশ্বের সেরা ফুটবলার কেন সেই ক্লাবে যাবেন!

১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জিতে ফিরে প্রথম মৌসুমে নাপোলির ঘরে নিয়ে আসেন প্রথম সেরি আ শিরোপা। মর্ত্যের মানুষ থেকে হয়ে গেলেন স্বর্গের আরাধ্য।

১৯৮৯ সালে নাপোলিকে নিয়ে ইউয়েফা কাপ জেতার পর

 

নেপলস ম্যারাডোনার, ম্যারাডোনা নেপলসের

নেপলসে ম্যারাডোনা ছিলেন ঈশ্বরের চেয়েও বড় কেউ। সাবেক স্টোক সিটি খেলোয়াড় অ্যালান হাডসন বলেছিলেন, ‘যে শহরে শয়তানেরও দেহরক্ষীর প্রয়োজন পড়ত, ম্যারাডোনা সেখানে ঈশ্বরের চেয়েও বড় ছিলেন।’

তার প্রমাণ মিলতো গ্যালারিতে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে স্রেফ ম্যারাডোনার জন্য নাপোলির আল্ট্রাসরা ইতালিকে বাদ দিয়ে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেয়।

নাপোলি গ্যালারিতে ডিয়েগোর উপাসনা

 

ইংল্যান্ড, ঈশ্বরের হাত, ঐশ্বরিক বাম পা

ইংল্যান্ডের সাথে রাজনৈতিক কলহের সুবাদে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচে ছিল ভিন্ন এক মেজাজ। প্রথম গোলের মধ্য দিয়ে সেই আগুনে ঘি ঢালেন ম্যারাডোনা। ইংল্যান্ড গোলকিপার পিটার শিলটনের দিকে এগুতে থাকা বলে মাথা ছোঁয়াতে পারবেন না বুঝতে পেরে ম্যারাডোনা হাত দিয়েই চেষ্টা করলেন। শিলটনকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়াল জালে, রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলো ম্যারাডোনার হাত দিয়ে করা প্রচেষ্টা, গোলের বাঁশি বাজালেন তিনি। ম্যাচের পর ম্যারাডোনা বললেন, ঈশ্বরের হাত ছিল সেটি। 

ঈশ্বরের হাত

 

কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় গোলে প্রমাণ করলেন, তিনি বাস্তবিকই ঐশ্বরিক। মাঝমাঠে বল পেয়ে গোলকিপার পিটার শিলটনসহ ছয় জনকে কাটিয়ে বল জালে জড়ালেন, ইংল্যান্ড খেলোয়াড়রা হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এই গোলটিই পরে নির্বাচিত হয় শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে। 

বিংশ শতাব্দীর সেরা গোল

 

আহ, বিশ্বকাপ! 

১৯৮২ বিশ্বকাপ শেষ হয় অশ্রুতে। ১৯৭৮ সালে সুযোগই পাননি। সেই আক্ষেপ মেটান ১৯৮৬ সালে। এক বিশ্বকাপে পাঁচ গোল। পাঁচ অ্যাসিস্ট। ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে ঈশ্বরের হাত আর শতাব্দীর সেরা গোল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে জয়সূচক গোলের অ্যাসিস্ট তার। ম্যারাডোনার পাস থেকে গোল করে বুরুচাগা আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন ৩-২ গোলে। বিশ্বকাপ জিতে নেন ম্যারাডোনা। 

বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে

 

ম্যারাডোনার বিয়ে 

১৯৮৪ সালে ক্লদিয়া ভিয়াফানিয়েকে বিয়ে করেন ম্যারাডোনা। 

ক্লদিয়া ভিয়াফানিয়ের সঙ্গে ম্যারাডোনার বিয়ে

 

১৯৯০ এর কান্না 

১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালেও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গেলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু এবার পারলেন না। ফাইনালে হারতে হলো ১-০ গোলে। প্রশ্ন উঠেছিলো সেদিনের রেফারিং নিয়ে কিন্তু তাতে আর ম্যাচের ফলাফল বদলায় না! ম্যারাডোনা তাই মাঠ ছাড়লেন অশ্রুভরা চোখে, আক্ষেপ মেশানো কান্নায়। 

ফাইনালে হারের পর

 

নক্ষত্রের পতন

১৯৯০ বিশ্বকাপে ইতালিকে আর্জেন্টিনা হারানোর পর থেকেই ইতালিয়ানদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ম্যারাডোনা। তার মাথার উপর থেকে সরে যায় আশীর্বাদের হাত। ১৯৯১ সালে কোকেনের জন্য ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসেন তিনি, নিষিদ্ধ হন ১৪ মাসের জন্য। 

১৯৯১ সালে ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসার পর

 

এবার কোকেন

আধা কিলোগ্রাম কোকেন নিয়ে বুয়েনোস আইরোসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ম্যারাডোনা। শাস্তি? ১৪ মাসের স্থগিত কারাদণ্ড ও পাঁচ মিলিয়ন লিরা জরিমানা। 

আধা কেজি কোকেন নিয়ে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হবার পর

 

আহা ম্যারাডোনা, আহারে ম্যারাডোনা

১৯৯৪ বিশ্বকাপে গেলেন ৩৪ বছর বয়সে। গ্রিসের সঙ্গে গোলের পর হুংকারে মিশে থাকলো ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসার পর জমে থাকা ক্ষোভ। কিন্তু ম্যারাডোনা ডোপ টেস্ট ধরা পড়লেন আরেকবার। 

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ এফেড্রিন পাওয়া গেল ম্যারাডোনার শরীরে। নিষিদ্ধ হলেন ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপের মহানায়কের বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে বিদায়টা কী করুণ। নক্ষত্রের পতন তো জ্বলেপুড়ে নিজেকে নিঃশেষ করেই হয়! 

১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসার পর

 

কাস্ত্রোর সঙ্গে বন্ধুত্ব

কিউবান বামপন্থী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে অসমবয়সী বন্ধুত্ব ছিল বামঘেঁষা ম্যারাডোনার। মৃত্যুতেও কী অদ্ভুতভাবে মিলে গেলেন দুজনে, দুজনের পৃথিবী ছাড়ার তারিখ একই। 

স্ত্রী ও দুই কন্যার সঙ্গে কাস্ত্রোর সান্নিধ্যে ম্যারাডোনা

 

তারা দুইজন

সর্বকালের সেরা কে? এই প্রশ্ন নিয়ে তর্ক শেষ পর্যন্ত নেমে আসে দুইজনে। একজন ম্যারাডোনা, আরেকজন পেলে। ২০০০ সালে যখন শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করে ফিফা, দর্শকদের ভোটে জিতেছিলেন ম্যারাডোনাই, ফিফার জুরি প্যানেল নির্বাচিত করেন পেলেকে। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর পেলে বলেছেন, স্বর্গে কোনো এক দিন তারা নিশ্চয়ই ফুটবল খেলবেন। 

প্রতিদ্বন্দ্বী পেলের সঙ্গে 

 

অতীত ও বর্তমান 

লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই শুনে গেছেন তিনি 'নতুন ম্যারাডোনা'। শোনার কারণও যৌক্তিক, ছোটখাটো গড়ন, বা পায়ে বল পেলে তাদের থামানো অসম্ভব এবং অবশ্যই, দু'জনই বুয়েনোস আইরেসের। 

আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে মেসিকে পেয়েছিলেন ম্যারাডোনা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২০১০ বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল আক্ষেপের খাতায় আরেকটি পাতা। কিন্তু সেবার অন্তত দুই প্রজন্মের দুই আর্জেন্টাইন জিনিয়াস মিলে গিয়েছিলেন এক প্রান্ত। 

মেসির কোচ যখন ম্যারাডোনা

 

শেষ পাগলামি

২০১৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হতো নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ১-১ গোলে সমতায় ম্যাচ। ঠিক সেই সময় মার্কাস রোহোর গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পুরো গ্যালারিতে বুনো উল্লাস, উল্লাসে ভেসে যান ম্যারাডোনা। উদযাপন করেন নিজের আপন ভঙ্গিতে। 

মার্কাস রোহোর গোলের পর ম্যারাডোনার বুনো উদযাপন

 

শেষ ছবি 

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে কিছু দিন আগেই অস্ত্রোপচার হয়েছে ম্যারাডোনার। সেখান থেকে সেরেও উঠছিলেন। শেষ ছবিটি তুলেছিলেন ডাক্তার লিওপোলদো লুকে, অস্ত্রোপচারের পর। 

ম্যারাডোনার শেষ ছবি

 

এ বিভাগের আরো খবর