ডিয়েগো ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত ছিল ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়। আর সেই বিশ্বকাপে তার সেরা পারফর্মেন্স ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে।ঐ ম্যাচে তার জোড়া গোলেই আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করে জয় আর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে ফেলে ইংল্যান্ডকে।
মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় ভেন্যু আসতেকা স্টেডিয়ামে নামার আগে আর্জেন্টিনিয়ানদের মনে জ্বলছিল প্রতিশোধের আগুন।চার বছর আগে আর্জেন্টিনার কাছ থেক ফকল্যান্ড দ্বীপ দখল করে নেয় ইংল্যান্ড। তখন থেকেই ব্রাজিল ও উরুগুয়ের মতো ইংল্যান্ডও ফুটবলে আর্জেন্টিনার জাতশ্ত্রুতে পরিণত হয়।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের খেলোয়াড়েরা যথেষ্ট উত্তাপ ছড়ালেও গোলের দেখা পাননি। দ্বিতীয়ার্ধে আসে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, ম্যারাডোনার মুহূর্ত।
৫১ মিনিটে বক্সের ভেতর লাফিয়ে উঠে অদ্ভুত ভঙিতে হেড করে গোল করেন ম্যারাডোনা। ইংল্যান্ড গোলকিপার পিটার শিলটন রেফারির কাছে আবেদন জানান হ্যান্ডবলের। রেফারির লাইনসম্যানের সংকেত নিয়ে, গোলটিকে বৈধ ঘোষণা করেন। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় হাত দিয়েই গোল করেছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। পরে গোলটি নন্দিত ও নিন্দিত হয় 'হ্যান্ড অফ গড' গোল নামে।
এর চার মিনিট পরই আসে বিশ্বফুটবলের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন ম্যারাডোনা। যে গোলটিকে ধরা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা।
নিজের অর্ধে বল রিসিভ করে ব্যাক হিলে বোকা বানান দুই ইংলিশ ডিফেন্ডারকে। এরপর এক দৌঁড়ে ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষের অর্ধে।চার্জে আসা দুই ডিফেন্ডার টেরি ফেনউইক ও টেরি বুচারকে অনবদ্য বডি ডজে পরাস্ত করে ঢুকে পড়েন ইংল্যান্ডের ডি বক্সে।
ডামি শটে শিলটনকে টেনে বের করেন গোললাইন থেকে। ফার পোস্টে গোল করে উচ্ছ্বাসে মাতেন নাম্বার টেন।পুরো গোলটি করতে সময় নেন ১১ সেকেন্ড। আর পরাস্ত করেন পাঁচ জন ইংলিশ খেলোয়াড়কে।
হতভম্ব হয়ে পড়েন উপস্থিত ৯০ হাজার দর্শক, ইংল্যান্ডের ১১ খেলোয়াড় এবং টিভি সেটের সামনে বসা কোটি ভক্ত। এমন গোল আগে তারা দেখেননি। মাঠে হয়নি কখনও এমন গোল।ঐ ১১ সেকেন্ডে অমরত্ব নিশ্চিত করেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। একই ম্যাচে এমন নিন্দিত আর নন্দিত হওয়ার নজির ফুটবলে আর নেই।
২০০০ সালে ফিফা অ্যাওয়ার্ডসে গোলটি পায় শতাব্দীর সেরা গোলের সম্মান। ম্যারাডোনার প্রয়াণের পর সাবেক ইংলিশ তারকা ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার দ্বিতীয় গোল প্রসঙ্গে স্কাই টিভিকে বলেন, ' ফুটবল মাঠে ঐ প্রথম ও শেষবার আমার মনে হয়েছিল দাঁড়িয়ে তালি দিতে।'