বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ম্যারাডোনার চার বিশ্বকাপ

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:৫৩

১৯৮২ সালের স্পেনের বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার। তখন তিনি স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সারও ফুটবলার। তাই স্পেনের দর্শকদের তুমুল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা।

ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজন ডিয়েগো ম্যারাডোনা চলে গেছেন ভক্তদের কাঁদিয়ে। তর্ক-বিতর্কের ক্যারিয়ারে বাঁ-পায়ের এই জাদুকরের খেলায় মুগ্ধ হননি এমন একজন ফুটবলপ্রেমীও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া এই ‘ফুটবল ঈশ্বরের’ ক্যারিয়ার নানা অর্জন আর বিতর্কের।

ফিফার অনলাইন ভোটে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্ম আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে। সাদা-নীল জার্সিতে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় এই ফুটবল জাদুকরের।

আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। আর্জেন্টিনাকে একাই বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন। আরেকবার রানার্স আপের দুঃখ নিয়ে ফিরেছেন। শেষ বিশ্বকাপে কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে যাত্রা শুরু১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় এই কিংবদন্তির। ১৮ বছর বয়সে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে (১৯৭৯) অংশগ্রহণ করেন। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেন ম্যারাডোনা। সঙ্গে বাগিয়ে নেন যুব বিশ্বকাপের স্বতন্ত্র সবচেয়ে বড় পুরস্কার গোল্ডেন বল।

২১ বছর বয়সে এক তরুণ ম্যারাডোনার প্রথম বিশ্বকাপ

যুব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ততদিনে নিজের নাম কুড়িয়েছেন ম্যারাডোনা। আশার আলো তাই জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে। ১৯৮২ সালের স্পেনের বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার। তখন তিনি স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সারও ফুটবলার। তাই স্পেনের দর্শকদের তুমুল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা।

প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি ম্যারাডোনা। পরে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় পর্বে ইতালি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে প্রথম বিশ্বকাপের যাত্রা থেমে যায় তার। ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড পান আর্জেন্টিনার নাম্বার টেন। এই বিশ্বকাপ থেকে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জোড়া গোলই তার অর্জন। সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম অভিজ্ঞতা থাকলই।

ম্যারাডোনার গৌরবের ৮৬’র বিশ্বকাপ

বলতে গেলে একাই বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনাকে উপহার দেন ম্যারাডোনা। নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ দিয়েই নিজের নামকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো বিশ্বজুড়ে। এই বিশ্বকাপ দিয়েই কোটি ভক্তের মনে ঝড় তুলেছেন তিনি।

পুরো বিশ্বকাপেই আধিপত্য দেখিয়েছেন ম্যারাডোনা। নিজে পাঁচ গোল করেছেন; সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও পাঁচটি গোল। এই বিশ্বকাপে তিনি প্রথম গোল করেন ইতালির বিপক্ষে, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলায়। আর কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রমাণ করেন তিনি। এই ম্যাচে একইসঙ্গে ইতিহাসের সেরা গোলটি করেন ছয়জন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে। আবার সবচেয়ে বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে খ্যাত গোলটাও করেন এই ম্যাচেই। এমন একটা দলের সঙ্গে এই গোলটি যখন করেন তখন আর্জেন্টিনা এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় উত্তেজনায় ভরপুর ছিল।

সেমি-ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও তিনি জোড়া গোল করে দলকে ফাইনালে তুলেন। ফাইনালে, প্রতিপক্ষ পশ্চিম জার্মানির ডাবল-মার্কিং ভেদ করে ম্যাচের জয়সূচক গোলটি আসে তার পা থেকে। এসতাদিও আসতেকার ১১৫,০০০ দর্শকের সামনে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩–২ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা।

তার জয়গানের বড় একটা কারণ একটু পরিসংখ্যান দিলেই বুঝতে পারবেন। এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের ১০টিতেই ছিল ম্যারাডোনার অবদান। তার অধিনায়কত্ব আর্জেন্টিনা পায় তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।

১৯৯০ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার আক্ষেপ

ব্যাক টু ব্যাক বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে ইতালি যায় আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক ম্যারাডোনা আবারও। তবে এবার আর ম্যারাডোনার সেই জৌলুশে সামান্য ভাটা পড়ে গেছে গোড়ালির ইনজুরির কারণে।

প্রথম পর্বে গ্রুপে কোনমতো তৃতীয় স্থানে থেকেও দ্বিতীয় পর্বের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। ১৬ দলের পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্লদিও ক্যানিজিয়ার একমাত্র গোলে জয় পায় তারা, গোলটি ম্যারাডোনারই বানিয়ে দেওয়া ছিল।

কোয়ার্টার-ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুটআউটে কোনমতে জিতে সেমিতে আয়োজক দল ইতালির মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। এবারও পেনাল্টি শ্যুটআউটে ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছায় ম্যারাডোনার দল।

খেলায় রুডি ফোলারকে ফাউল করার কারণে দেওয়া বিতর্কিত পেনাল্টিতে আনড্রেস ব্রেহমার করা একমাত্র গোলে জয় পায় পশ্চিম জার্মানি। এক বিতর্কিত ‘গোলের’ আক্ষেপ নিয়ে দেশে ফিরতে হয় ম্যারাডোনার।

কলঙ্কের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ

১৯৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা দুইটি খেলায় মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রিসের বিপক্ষে তিনি একটি গোলও করেন। ড্রাগ টেস্টে এফিড্রিন ডোপিং-এর কারণে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনা ঐ টেস্ট সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক তাকে এনার্জি ড্রিংক রিপ ফুয়েল দেওয়ার কারণে তিনি ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়েছেন। তার দাবি ছিল, পানীয়টির ইউএস সংস্করণ আর্জেন্টিনার সংস্করণের মত নয়। যার মধ্যে ঐ রাসায়নিক দ্রব্যটি ছিল এবং তার প্রশিক্ষক অনিচ্ছাকৃতভাবে তা ব্যবহার করেন।

ফিফা তাকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করে এবং আর্জেন্টিনাও দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।

১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর ম্যারাডোনার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯১ খেলায় ৩৪টি গোল করেন।

তর্ক-বিতর্ক মিলিয়ে ফুটবল ইতিহাসে অনন্য স্থান তৈরি করেছেন ম্যারাডোনা। বল পায়ে সেই জাদুকরী ফুটবল নিদর্শন রয়ে যাবে যুগ থেকে যুগান্তরে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

এ বিভাগের আরো খবর