মঞ্চ প্রস্তুত। আর কয়েক ঘণ্টা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে ফুটবল যুদ্ধ। আন্তর্জাতিক ম্যাচে জিততে মরিয়া বাংলাদেশ। জামাল-জীবনদের চিন্তা-ভাবনায় অতীত হারের প্রতিশোধ। লাল-সবুজদের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় নেপাল।
শুক্রবার বিকাল পাঁচটায় বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ সামনে রেখে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। কোভিড প্রোটোকল অনুযায়ী জীবানুমুক্ত করতে ভেন্যুর ভেতরে-বাইরে স্প্রে করা হয়েছে। মাঠ, ডাগআউট, প্যাভিলিয়ন ও গ্যালারি বাদ যায়নি কিছু।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সকল প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ ঘিরে। এই ম্যাচ দিয়ে আট মাস পর দেশের মাটিতে ফুটবল ফিরছে। উত্তেজনা তাই মাঠ ছাড়িয়ে দর্শকদের ঘরে ঘরে।
ফুটবল ফেরার আনন্দ দর্শকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচে নেপালের কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। গত বছর এসএ গেমসে হারে ১-০ গোলে। হারের প্রতিশোধটাও নিজেদের মাথায় রাখছেন ফুটবলাররা।
অনেকদিন পর মাঠে নামলেও জয়ের বিকল্প ভাবছেন না জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে।
জেমি বলেন, ‘অবশ্যই নেপাল খুবই ভালো দল। তাদের কিছু খুবই ভালো এবং আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় আছে। তাদেরকে হারানো কঠিন হবে। কিন্তু আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং ফিটনেসের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। খেলা, জয় পাওয়া এবং ফুটবলকে লম্বা সময় পর মাঠে ফেরানোর জন্যও আমরা মুখিয়ে আছি।’
এই সিরিজ সামনে রেখে ২৪ অক্টোবর থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এর মাঝে ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন তারিক কাজী ও মমিনুল ইসলাম মামুন। অসুস্থতার কারণে যোগ দেননি টুটুল হোসেন বাদশা। আর ক্যাম্পে যোগ দেননি মাসুক মিয়া জনি আর মতিন মিয়া। শেষ মুহূর্তে ইনজুরিতে বাদ পড়েছেন আরিফুর রহমান।
এসব বিষয় মাথায় রেখে দল সাজিয়েছেন জেমি। বলেন, ‘নেপাল ম্যাচে আমরা আক্রমণাত্মক ছক সাজাব না। কেননা আমাদের কাতার ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ৪-৪-২ বা ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলতে পারি। কৌশল সাজাব কাতার ম্যাচের প্রস্তুতি সামনে রেখে। জিততে চাই। কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তিত নই।’
জেতার বিকল্প দেখছেন না দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। সঙ্গে সবশেষ তিন ম্যাচে হারের প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর তিনি।
জেবি সিক্স কণ্ঠে সেই প্রতিশোধের প্রতিফলন, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই জিততে চাই। সবাই ম্যাচটা জিততে চায়। নেপালের কাছে তিন ম্যাচ হেরেছি। মাথায় সেই প্রতিশোধের বিষয়টা আছে এবং অবশ্যই ম্যাচটা জিততে চাই।’
নেপাল ম্যাচের জন্য ২৩ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। চমক ছিল গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার বাদ পড়া। ছিটকে গেছেন পাপ্পু হোসেনও। নতুনদের সুযোগ দিতেই এমন চমক বলছেন কোচ জেমি, ‘নতুনদের পরখ করে দেখতে চাই।’ সেই হিসেবে জিকোর অভিষেক হতে পারে এই ম্যাচে।
ঢাকায় জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় নেপাল। যদিও করোনার আঘাতে আট গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হারিয়েছে দলটি। বিকল্প খেলোয়াড়দের নিয়েই জয় চায় হিমালয়ের দেশটি।
আগে বাংলাদেশের সঙ্গে জয়ের কথা মনে করিয়ে দলের কোচ বাল গোপাল মহারাজন বলেন, ‘আমার ছেলেরা শেষ কয়েক বছরে এমন পরিস্থিতিতেও ভালো করে দেখিয়েছে। এর ধারাবাহিকতা আগামীকালও (শুক্রবার) দেখতে চাই।’
স্বাগতিকদের সমীহ করছেন নেপালের গোলকিপার ও অধিনায়ক কিরণ চেমজং। বলেন, ‘এমন সময়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছি দুটো প্রীতি ম্যাচে, সহজ হবে না মোটেও। তারা ভালো দল, আমরাও। সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই আগামীকাল (শুক্রবার) লড়তে চাই আমরা।’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ১৭ ধাপ উপরে আছে নেপাল। শেষ দুই হারের সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি। ইতিবাচক বলতে আছে দুই দেশের ইতিহাস। ১৯ বারের দেখায় ১২ বার জিতেছে বাংলাদেশ, ছয়টি জিতেছে নেপাল আর একটি ড্র।