চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সর্বোচ্চ আসনে বসেছেন কাজী সালাউদ্দিন। আগামী চার বছরের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবেই দেশের ফুটবলের দায়িত্ব এখন তার হাতে।
নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া সাবেক এই মহাতারকার সামনে চ্যালেঞ্জ ১২ বছরের ব্যর্থতা মুছে দেয়া। দেশের ফুটবল উন্নয়নে ভোটারদের কাছে যে আশ্বাস দিয়েছেন তা প্রমাণের। এছাড়া আছে নির্বাচনি ইশতেহারে ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি পূরণের চ্যালেঞ্জ।
শনিবার নির্বাচনে জয়ের পর কাজী সালাউদ্দিন আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘ইশতেহারের ৮০ ভাগ পূরণ করবেন।’
তবে দেখা গেছে, আগের তিন নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবারও তার প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত ১২ বছরে সাফ ফুটবলে ৬ বারের মধ্যে ৫ বারই গ্রুপের বাইরে ছিটকে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। মাঝে ভুটান বিপর্যয়ের পর প্রায় ১৮ মাস ফুটবলের বাইরে থাকতে হয়েছিল দেশকে।
অপেশাদার প্রিমিয়ার লিগ, পাইপলাইন সংকট আর অনিয়মিত জেলা-বিভাগ লিগের ভঙ্গুর দশা ফুটবলকে এগিয়ে নিয়েছে কতটুকু তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
বিশেষ করে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ পেছাতে পেছাতে তলানিতে ঠেকেছিল। একসময় ১৯৭তম র্যাঙ্কিংয়েও পৌঁছেছিল। একটুর জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস বলা যায়!
এখন সেই র্যাঙ্কিং যে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে- তা বলা যায় না। অবশ্য তিনি ইশতেহারে বলেছেন, আগামী চার বছরে ১৫০’এ নিতে চান বাংলাদেশকে।
সেজন্য ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন, এভাবে ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ যা যা করা দরকার তাই করব’।
যদিও গত এক যুগেও একটা জিমনেসিয়াম করতে পারেননি সালাউদ্দিন। এবার আশ্বাস দিয়েছেন জিম তৈরি করেবেন শিগগিরই।
গেল ১২ বছরেও প্রিমিয়ার লিগটাকে পেশাদার করতে পারেনি বাফুফে। ১১ বার লিগ মাঠে গড়িয়েছে সত্যি, তবে পেশাদারত্বের ধারেকাছেও হাঁটেনি দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল লিগ।
এমনকি এএফসির সব শর্তই পূরণ করে না কোনো ক্লাব। ভঙ্গুর ক্লাব কাঠামোর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘কংক্রিট ক্যালেন্ডার’ দিতে না পারার ব্যর্থতা।
দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে পাইপলাইনটাও শক্ত করতে দেখা যায়নি। পাইওনিয়ার লিগ থেকে শুরু করে ডিভিশনের খেলাগুলো অনিয়মিত হওয়ায় দৃশ্যত বড় সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে।
২০১৫ সালে সিলেটে একাডেমি করে অর্ধবছরও ধরে রাখতে পারেনি ফেডারেশন। সেই ব্যাচের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এখন ফুটবলের বাইরে।
তবে সফলতাও যে পাননি তা বলাও যাবে না একেবারে। ২০১০ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণ, ২০১৮ সালে কাতারকে হারিয়ে প্রথমবার এশিয়ান গেমসে নকআউট পর্বে গিয়েছে বাংলাদেশ সালাউদ্দিনের সময়ই।
২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভারতের মাটিতে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে জিততে জিততে ড্র, বয়সভিত্তিক পুরুষ-নারী দলের একাধিক সাফ ফুটবল জয়, দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চল বাছাইপর্বে নারীদের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া- এগুলো সফলতাই।
তবে এসব সফলতা ছাপিয়ে বারবার শিরোনাম হয়েছে টানা ব্যর্থতার গল্প। পাইপলাইন সংকটের সঙ্গে জাতীয় দলের ভরাডুবি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বেশি।
গত এক যুগে জাতীয় দলের কোচ বদলেছে ১৯ বার। কোনো কোচকেই থিতু হতে দেখা যায়নি এই আমলে।
তবে বর্তমান কোচ জেমি ডে প্রায় তিন বছর ধরে জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন। তার সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি করেছে বাফুফে।
সালাউদ্দিনকে সব মিলিয়ে গেল এক যুগের ব্যর্থতা ঘোচাতে হবে আগামী চার বছরে। তাকে বিশেষ করে জাতীয় দলকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছরে কখনই সাফ গেমসে ফাইনালে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। এই ব্যর্থতার দায় প্রেসিডেন্টকে নিতে হবে। আমি চাইব সামনের চার বছর জাতীয় দল নিয়ে কংক্রিট পরিকল্পনা হোক। আগে থেকে পরিকল্পনা না নিলে জাতীয় দল ভালো করবে না।’
জাতীয় দলকে সমৃদ্ধ করতে পাইপলাইনে হাত দেয়া উচিত বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক।
তিনি বলেন, ‘পাইপলাইনে হাত দিলে জাতীয় দল সমৃদ্ধ হবে। লিগ সমৃদ্ধ হবে। লিগটাকে নিয়মিত করতে হবে। আর জেলা-বিভাগের ফুটবলটাকে নিয়মিত লিগের ফরম্যাটে করতে হবে প্রতিবছর।’
নতুন ইশতেহারের প্রসঙ্গ টেনে রোববার গণমাধ্যমকে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আগামী চার বছরে ইশতেহারে যা যা আছে পূরণ করার চেষ্টা করব।
‘পাইপলাইন শক্ত করতে আমরা শেখ রাসেল টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব ১০) শুরু করব। প্রত্যেক বয়সের দল থাকবে। তাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হবে বাফুফের ফর্টিজ একাডেমিতে রেখে।’
নিউজবাংলা/জেএইচ/এএসজে