রানি নামে গরুটির বয়স দুই বছর। প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দুই দাঁত উঠলেও তার উচ্চতা মাত্র ২০ ইঞ্চি। অথচ খর্বাকৃতির গরু হিসেবে এখন বিশ্বরেকর্ডধারী গরুর উচ্চতা ২৪.৭ ইঞ্চি।
বিদেশি বক্সার ভুট্টি জাতের রানির ওজনও রেকর্ডধারী গরুর চেয়ে ১৪ কেজি কম। ২০১৪ সালের ২১ জুন খর্বাকৃতির গরু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ভারতের কেরালা রাজ্যে মানিকিয়াম জাতের গরুটির ওজন ৪০ কেজি। রানির ওজন সেখানে ২৬ কেজি।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের একটি খামারে বেড়ে ওঠা রানিকে নিয়ে তাই খামারি ও এলাকাবাসীর আশা, দেশের প্রথম প্রাণী হিসেবে গিনেস বুক অফ রেকর্ডে নাম উঠবে রানির। তার মাধ্যমে আরেকবার বাংলাদেশকে জানবে বিশ্ব।
সোমবার সকালে সাভার উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে খামারে গিয়ে দেখা মেলে রানির। গিনেস বুকে রেকর্ড গড়তে পারে এমন তথ্যে সেখানে আগে থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়।
খামার কর্তৃপক্ষ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, দুই বছরের রানির উচ্চতা ২০ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ২৬ ইঞ্চি এবং ওজন ২৬ কেজি। ১১ মাস আগে নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রানিকে আনা হয় এই খামারে। এরপর থেকেই লালনপালন করছেন তারা। তবে মূল মালিক কে তা জানাতে পারেননি তারা।
কুরাগাঁও এলাকার লোকমান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার খামারে ছোট্ট একটা গরুর কথা শুনে সকালেই দেখতে এসেছি। গরুটার নাম রানি। নামে যেমন সুন্দর, রানি দেখতেও সুন্দর। খুবই শান্ত প্রকৃতির রানির সাথে ছবি তুললাম।
‘গিনেস বুকে রানির নাম উঠলে এই ছবিটাও স্মৃতি হয়ে থাকবে। রানি হয়তো একদিন থাকবে না। কিন্তু এই ছবি থেকে যাবে। এটা আমাদের সাভারবাসীর জন্য যেমন গর্ব, তেমনি সারা দেশের জন্যও।’
আফরা হোসাইন জয়ীতা নামে এক শিশু এসেছিল রানিকে দেখতে। ছবি তোলার পাশাপাশি গরুটির সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় খেলা করে সে।
শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক তানভির হাসান বলেন, ‘আমরা গিনেস বুকে রানিকে ছোট গরু হিসেবে রেকর্ডের জন্য মেইল পাঠিয়েছি। রানির ছবি, ফুটেজসহ সব তথ্য পাঠানো হয়েছে।
‘অনেক দিন ধরে আমরা রানিকে অবজার্ভ করছিলাম বাড়ে কি না। রানির বয়স এখন দুই বছর। দুই দাঁত হয়ে গেছে। এরপরই ভেটেরিনারি ডাক্তার কনফার্ম করেছেন, এটা পরিপূর্ণ। দুই দাঁত হয়ে গেলে বাড়ার আর সুযোগ থাকে না। এটা আর বাড়বে না।’
তিনি জানান, তারা গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক মেইল পাঠান। সেখান থেকে ফিরতি মেইল দেয়া হয়েছে। তারা গিনেস বুকের ফরম পূরণ করে দিয়েছেন। তিন মাসের মধ্যেই তাদের দল আসবে বলে জানিয়েছে।
খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সুফিয়ান বলেন, ‘শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কর্ণধার হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। আমার আনন্দের সীমা নেই। বিশ্বের ভেতর যদি গুগল সার্চ করলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায় এর চেয়ে আর বেশি আনন্দের কী হতে পারে?
‘আমরা গুগল সার্চ করে যেটা জেনেছি, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যে গরুটা আছে তার ওজন ৪০ কেজি। এটা ভারতের কেরালায় রয়েছে। ওইটার সঙ্গে যদি আমাদেরটার কম্পেয়ার করি উচ্চতা, লম্বা এবং ওজন, সবদিক দিয়েই আমাদেরটা কম। সেটা মাথায় রেখেই আমরা গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা অলরেডি আমাদের পজিটিভ রিপ্লাই দিয়েছেন। যেহেতু ওনাদের এটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। তাই ওনারা ৯০ কার্যদিবসের মধ্যেই এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
‘তবে আমি এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তা চাইব। কারণ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখানো শুধু আমার প্রতিষ্ঠানের নয়, সরকারেরও গর্ব।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘গরুটি যখন থেকে এই খামারে আনা হয়েছে তখন থেকে আমাদের তত্ত্বাবধানে আছে। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ীই ওনারা গরুটিকে দেখভাল করেছেন।
‘ওনারা যখন গরুটি সংগ্রহ করেছিল তখন মূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে গরুটির বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।’