যে বয়সে শিশুদের মুখে শোনা যায় আধো আধো বোল, সেই ১১ মাস বয়সেই জান্নাতুল মাওয়া মুখস্থ করে ফেলে মায়ের কাছ থেকে শোনা সব ঘুমপাড়ানি গল্প।
জান্নাতুলের জন্ম ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর। থাকে রংপুর মহানগরের কটকি পাড়ায়।
দুই বছর বয়সেই সে রববীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীর পুরুষ কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে অবাক করে দেয়। এখন তার বয়স প্রায় পাঁচ বছর। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পুরো ভাষণ, ১৬০টি কবিতা, গান মুখস্থ বলতে পারে।
কোরআন শরিফের ১০টি সুরাসহ আয়াতুল কুরসি সে বলে ফেলে অনায়াসে। শুধু তাই নয়, আঁকাআঁকিতেও সবার বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে জান্নাতুল।
জান্নাতুল নিউজবাংলাকে জানায়, দেশবরেণ্য ৩০ থেকে ৩৫ কবি-সাহিত্যিক ও ছড়াকারের ১৬০টি কবিতা ও ছড়া সে যেকোনো সময় শুনিয়ে দিতে পারে।
কে শিখিয়েছে তাকে এত কিছু?
এত অল্প বয়সে এত কবিতা-ছড়া কে শিখিয়েছে এমন প্রশ্নে জান্নাতুল চট করে উত্তর দেয়, ‘মা।’
‘মা যখন আমাকে এগুলো শোনাত তখনই আমি শুনে শুনে শিখেছি। এখন কবিতা, গান সব বলতে পারি। আমার খুব ভালো লাগে এগুলো বলতে।’
জান্নাতুলের মা মুনিরা আখতার রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
মুনিরা আখতার গল্পে গল্পে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তখন জান্নাতুলের বয়স ১০/১১ মাস। একটু একটু করে কথা বলতে পারে। আমি তখন ওকে ঘুমপাড়ানি গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম।
‘ঠিক দুদিন পর ওই গল্পগুলো আমি বলার আগেই ও বলে দিত। এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগল। ভাবলাম, এতটুকু বাচ্চা এখনো ভালো করে কথাই বলতে পারে না, সে এখনই এটা বলে দিতে পারছে? সেই থেকেই প্রচেষ্টা।’
মুনিরা আরও বলেন, ‘নতুন কিছু নেয়ার ক্ষেত্রে মাওয়ার কোনো বিরক্তি ছিল না। আমি যা-ই দিচ্ছি, সেটি সে চমৎকারভাবে নিচ্ছে। বিকেলে খেলতে খেলতে ও কবিতা মুখস্থ করত, কবিতা আবৃত্তি করত।’
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবরে এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘বীর পুরুষ’ কবিতাটি মুখস্থ করে আবৃত্তি করে। ওর মধ্যে ভীতি কম কাজ করছে। সংশয় কম কাজ করছে। আমি এই বিষয়গুলো কাজে লাগিয়েছি।’
মুনিরা চাকরিজীবী হলেও খুব ছোটবেলা থেকেই কলেজে নিয়ে যেতেন তিনি। কখনো কখনো শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে দিতেন।
লকডাউন যেন ‘শাপে বর’
লকডাউনে কলেজ বন্ধ থাকায় প্রথম ৬ মাসে সে ১০০টি কবিতা মুখস্থ করে ফেলে। এরপর ধীরে ধীরে এখন ১৬০টির বেশি কবিতা মুখস্থ। বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে অংশ নেয়। এখন বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত আবৃত্তিশিল্পী পাঁচ বছরের জান্নাতুল।
জান্নাতুলের মা বলেন, ‘ওর ভেতরে অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করেছি। ও নতুন কিছু দেখলেই সেটা শেখার জন্য খুব বেশি আগ্রহী হয়ে থাকত। এতটুকু বয়সে বাংলা ব্যাকরণের সমাস, সন্ধি, উচ্চারণ, বাংলা বানানের কিছু নিয়মকানুন শিখেছে। আমি কখনো কখনো আঞ্চলিক ভাষা বললেই সে বলে ওঠে ‘মা, তুমি ভুল করেছ’।
স্কুল বন্ধ থাকায় এখনো কোনো স্কুলে ভর্তি করা হয়নি জান্নাতুলকে।
মা মুনিরা মেয়েকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়তে চান বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।