কুমিরের আক্রমণ থেকে বোনকে বাঁচাতে সরীসৃপটির সঙ্গেই লড়াই করেছেন এক ব্রিটিশ তরুণী। মানুষখেকো কুমিরটিকে ঘুষির পর ঘুষি মেরে বোনকে উদ্ধার করেছেন তিনি।
তবে তরুণীর চেষ্টার পরও ঝুঁকিতে আছে তার বোন। হাসপাতালে কোমায় আছেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কুমিরের আক্রমণের শিকার দুই তরুণী ২৮ বছর বয়সী মেলিসা ও জর্জিয়া লরি যমজ। যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ার থেকে মেক্সিকোতে যান তারা।
কুমিরের হামলাস্থল মেক্সিকোর দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে পুয়ের্তো এস্কন্দিদোর ১০ মাইল দূরের একটি হ্রদ। সেখানে যমজ বোনকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক ট্যুর গাইড।
হ্রদে সাঁতার কাটতে নেমে কুমিরের আক্রমণের শিকার হন মেলিসা। দূর থেকে তাকে মুখ উল্টো করে পানিতে ভাসতে দেখেই অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে বলে বুঝতে পেরেছিলেন জর্জিয়া।
দক্ষ ডুবুরি জর্জিয়া দ্রুত পৌঁছে দেখেন যে মেলিসাকে একটি কুমির টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে সময় বোনকে ছাড়াতে কুমিরটির মাথায় ঘুষি মারতে শুরু করেন জর্জিয়া।
একপর্যায়ে কুমিরের মুখ থেকে বোনকে ছুটিয়ে নৌকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হন জর্জিয়া। এরপর দুইজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
চিকিৎসাধীন জর্জিয়া আঘাত পেয়েছেন হাতে। অন্যদিকে গুরুতর আহত মেলিসা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি চলে গেছেন কোমায়।
তাদের বাবা শন লরি জানিয়েছেন, ডুবুরি হিসেবে জর্জিয়ার অভিজ্ঞতার কারণেই তারা বেঁচে ফিরতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘হ্রদের গভীরে বায়োলুমিনসেন্ট পানিতে সাঁতার কাটছিল মেলিসা ও জর্জিয়া। হঠাৎ মেলিসার চিৎকারের শব্দ শোনে জর্জিয়া। পানির নিচে তাকে খুঁজে না পেয়ে উপরে ভেসে উঠলে সেখানে মেলিসাকে উল্টো হয়ে ভাসতে দেখে জর্জিয়া।
‘বোনকে নিয়ে নৌকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় কুমিরটি আবারও আক্রমণ চালায় তাদের ওপর। সে সময় আবারও সেটিকে মেরে তাড়ায় জর্জিয়া।’
এভাবে তিনবার কুমিরের সঙ্গে মারামারি করে মেলিসাকে বাঁচিয়েছেন তিনি।
মেক্সিকোতে প্রাণীকল্যাণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কর্মরত মেলিসা ও জর্জিয়া ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন। রোমাঞ্চপ্রেমী দুই বোন ছুটির জন্য বেছে নেন পুয়ের্তো এস্কন্দিদোরকে।
যুক্তরাজ্য থেকে যমজের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, যে হোস্টেলে থাকতেন দুই বোন, সেখান থেকেই তাদের একজন ট্যুর গাইড ঠিক করে দেয়া হয়।
বিভিন্ন সময় পর্যটকদের নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কারণে ওই ট্যুর গাইডের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব জানা ছিল না মেলিসা বা জর্জিয়ার।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মেক্সিকোতে দুই বোনের কাছে এখনই যেতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তাদের সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।