কিছুদিন থেকে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্ক্রল করলেই চোখে পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন রং ও চরিত্রের গরুর ছবি। বিশেষ করে বাঘ, তরমুজ কিংবা মৎস্যকন্যার আদলে গরু দেখে কৌতূহলের সীমা থাকছে না।
কী নেই সে তালিকায়। আছে বাঘ গরু, সিংহ গরু, ভিক্টোরিয়া গরু, মেরিলিন মনরো, সূর্যমুখী, গ্র্যাজুয়েট, তরমুজ, মৎস্যকন্যা, পেঁচা, ফুল, পাখি, স্পাইডারম্যান, জেব্রা, সোফা, টমেটোসহ অসংখ্য চরিত্রের গরু।
এই যে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে গরু হাজির হয়েছে, এগুলো আসলে মুভিং আর্ট প্রদর্শনী।
অস্ট্রেলিয়ার শেপারটন শহরে শুরু হয় গরু দিয়ে মুভিং আর্টের এ প্রদর্শনী। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হয় দেশটির নানা প্রান্তে। নির্দিষ্ট থিমের ওপর করা হয় প্রদর্শনী কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন।
যেভাবে শুরু গরু দিয়ে মুভিং আর্ট
২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার শেপারটন সিটি কাউন্সিল থেকে একটি থ্রিডি আর্ট প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শেপারটন কমিউনিটি এই প্রদর্শনীর উদ্যোগে যুক্ত ছিল। সে সময় বিশাল ক্যানভাসে রং-তুলিতে আঁকা হয় নানা ধরনের গরু। পরে সেগুলো জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়।
এটাই ছিল মূলত শেপারটনের প্রথম মুভিং আর্ট প্রদর্শনী। এরপর বড় পরিসরে মুভিং আর্ট করার পরিকল্পনা করে শেপারটন কমিউনিটি। গঠন করা হয় শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটি নামের একটি সংগঠন।
মুভিং আর্ট ধীরে ধীরে হয়েছে জনপ্রিয়। আর ২০১৮ সালে এসে শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্র্যাভেল প্ল্যাটফর্ম ট্রিপঅ্যাডভাইজার থেকে পুরস্কারও জিতে নিয়েছে।
কেন গরু, কেন শেপারটন
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ভিক্টোরিয়ার বৃহত্তর গলবর্ন প্লাবনভূমি থাকা অঞ্চল শেপারটন। এ অঞ্চলে রয়েছে বিশাল বিশাল সব চারণভূমি।
১৮৫০ দশকে এলাকাটি রেল শিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠলেও পরে সে সুনাম আর থাকেনি। রেল থেকে এলাকাটি এখন পরিচিতি কৃষি ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে।
মুভিং আর্ট করার জন্য শেপারটনকে বেছে নেয়ার পেছনের কারণটিও ছিল দেশটির ডেইরি শিল্পকে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে এলাকাটিকে যেন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করানো যায় সে নিয়েও কাজ করতে থাকে শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটি।
পুরো অস্ট্রেলিয়ায় যতটা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি হয় তার বেশিরভাগই হয় শেপারটন থেকে।
গরুর মাধ্যমে মুভিং আর্ট করে সেই শিল্পকে আরও উৎসাহিত করাও এই আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে জন্যই প্রতিটি থিমেই থাকে গরু।
সবগুলো গাভী
শেপারটনে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ দিতে এই উদ্যোগের শুরু। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে হাজির হলেও প্রদর্শনীতে যেসব গরু দেখা যায় তার সবগুলোই গাভী।
কেনা যায়, ভাড়াও করা যায়
শুধু প্রদর্শনীই নয়, চাইলে যে কেউ প্রদর্শনী থেকে নিজেদের পছন্দের গরু কিনে নিতে পারবেন। এমনকি চাইলে কোনো বিশেষ ইভেন্টে এসব ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের গরু ভাড়াও করা যায়।
এসব গরু ভাড়ার ক্ষেত্রে মুভিং আর্ট কমিউনিটির সঙ্গে অন্তত দুই মাস আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৮০ ডলার ও সাপ্তাহিক ২২৫ ডলার গুনতে হবে।
অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা অলাভজনক সংগঠনের জন্য গরু ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ের কথাও জানায় শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটি।
ভাড়া ছাড়াও স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম করে থাকে শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটি। তারা নানা ধরনের অনুষ্ঠান সাজিয়ে দেয় এসব গরু দিয়ে।
এসব গরু দিয়ে ক্রিসমাস, বিয়ে, জন্মদিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, সৈকতে পার্টিসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান সাজিয়েছে।
আবার অনেকেই বাসাবাড়ির জন্য গরুর সোফা কিনেছেন, কেউ বা বাচ্চাদের জন্য কিনেছেন স্পাইডার, টাইগার গরুও।
কারা ডিজাইন করেন
কেউ চাইলে নতুন কোনো থিমের ওপর গরুর ডিজাইন করে শেপারটন মুভিং আর্ট কমিউনিটির কাছে জমা দিতে পারবেন। যদি কমিউনিটির সে ডিজাইন ও থিম পছন্দ হয় তাহলে সেটি নিয়ে কাজ করেন তারা।
অবশ্য কমিউনিটি পেশাদার শিল্পীদের কাছ থেকেই ডিজাইন আহ্বান করে। ডিজাইন করে দিলে সেটি কমিউনিটির কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন হয়। এরপরই শর্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হয় আর্টওয়ার্ক।
যেভাবে তৈরি হয় মুভিং আর্ট
এসব গরু তৈরিতে নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে যে থিমের ওপর ভিত্তি করে গরু তৈরি করা হবে তার কাঠামো তৈরি করেন ডিজাইনাররা। সেটা হয় লোহা দিয়ে। এরপর তাতে ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সাজের গরু। পরে রং করে তা উপস্থাপন করা হয়।
এসব গরুর বেশিরভাগই অবশ্য কংক্রিটের তৈরি করা। একটা পাটাতনে বসানো থাকে এসব আর্টওয়ার্ক। যদি কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য আছে পরিবহনব্যবস্থাও।
এখন কোথায় এত গরু
শুধু যে শেপারটন শহরেই ভিন্ন ভিন্ন গরুগুলোর প্রদর্শনী হয়, তা নয়। এই মুভিং আর্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শহরে করা হয়। যে শহর যে জন্য বিখ্যাত, প্রদর্শনীতে তেমন থিম রাখার চেষ্টা করে আয়োজকরা।
৫ মে সর্বশেষ শেপারটন সেন্টারের সামনে এই প্রদর্শনী করা হয় ৯০টি গরু নিয়ে। সেখানে বাগান, রাস্তার পাশে এবং শেপারটন সেন্টারের সামনে এসব গরু বসিয়ে দিয়েছে আয়োজকরা।
এর উদ্দেশ্য থাকে পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্যদের সেসব আর্টওয়ার্ক সম্পর্কে জানানো।
শেপারটনের মুভিং আর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ওয়েবসাইট থেকে।