রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সময় বিশাল আকৃতির একটি ভালুক নিয়ে হাজির হয়েছেন নেতা। শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নবীন রিপাবলিকান নেতা জন কক্স গত মঙ্গলবার এমন কাণ্ড করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচন সামনে রেখে জনসমাবেশে ভালুক নিয়ে তার অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা।
‘ট্যাগ’ নামের ৫০০ কেজি ওজনের ভালুকটি তার পোষা নয়। এটি বুনোও নয়।
মানুষের তত্ত্বাবধানেই ভালুকটির জন্ম। প্রশিক্ষিত ট্যাগকে দেখা গেছে একাধিক চলচ্চিত্র আর টেলিভিশন সিরিজেও। তাই আপাতদৃষ্টিতে মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয় এটি।
আসন্ন নির্বাচনে কক্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান গভর্নর গেভিন নিউসম।
বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি হলিউডের অবস্থান নিজ রাজ্যে বলেই হয়তো সবসময় নিউসমকে দেখা যায় হলিউড অভিনেতাদের মতোই সাজানো-গোছানো অবস্থায়।
এ বিষয়টিকেই পুঁজি করে জনতার ভোট পেতে নিজের প্রচারণার থিম ঠিক করেছেন কক্স। তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছেন ফরাসি ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল-সুজান বারবটের লেখা রূপকথার গল্প ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ থেকে।
১৭৪০ সালে প্রথম প্রকাশিত এ গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে অ্যানিমেটেড সিনেমাও।
জন কক্সের ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য’ বিস্টের গল্পে ‘বিউটি’ হলেন প্রতিদ্বন্দ্বী সুদর্শন গেভিন নিউসম। আর ‘বিস্ট’ হলেন কক্স নিজে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রেমেন্টোর সমাবেশে কক্স বলেন, “সুদর্শন রাজনীতিকরা ক্যালিফোর্নিয়ার কোনো উন্নয়নে, কোনো কাজে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এ রাজ্যের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন দরকার। আর সে জন্য লাগবে বড় ঝাঁকুনি। ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’-এর ‘বিস্ট’ হয়ে এই ঝাঁকুনি আমি দেবো। কর কমাব, ক্যালিফোর্নিয়াকে আরও বাসযোগ্য করে তুলব।”
এই বক্তব্য দেয়ার সময়েই কক্সের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল কোডিয়াক ভাল্লুকটি। এ সময় তাকে খাবার চিবোতেও দেখা যায়।
বেশ কিছু প্রাণী অধিকার সংগঠন রাজনৈতিক প্রচারণার উদ্দেশে ভালুকের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভালুকের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় কোডিয়াক প্রজাতির ট্যাগকে সমাবেশে ব্যবহার লজ্জাজনক বলে টুইটারে বিবৃতি দিয়েছে পেটা।
করোনাভাইরাস মহামারি সামলাতে ব্যর্থতার অভিযোগে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিউসমের প্রত্যাহার চান রিপাবলিকান নেতারা।
রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, আগের নির্বাচনে অংশ নেয়া ভোটারদের ১২ শতাংশের সমর্থন পেলে গভর্নর পরিবর্তনে গণভোট সম্ভব। এ নিয়ম মেনেই চলতি বছরের শেষে গণভোট হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ায়।
এ রকম একটি নির্বাচনে জিতেই ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হয়েছিলেন হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। রিপাবলিকান পার্টির হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর রাজ্য শাসন করেন তিনি। এরপর গত ১০ বছরে আর কোনো রিপাবলিকান নেতা ক্যালিফোর্নিয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি।
জনমত জরিপ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের ভোটে নিউসমের পরাজয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ গত দুই দশকে রাজ্যটিতে বড় সমর্থন তৈরি করেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি।