বিশ্বের অন্যতম দামি ফল জাপানিজ মাস্কমেলন, যা আদতে বিশেষ জাতের বাঙ্গি। জাপানের উন্নতমানের এই বাঙ্গি ভিন দেশের মাটিতে ফলানোর চেষ্টা চলছিল অনেকদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত সাফল্য মিলেছে মালয়েশিয়ায়। তবে সেজন্য অভিনব সব পদ্ধতি যোগ করতে হয়েছে ফল উৎপাদন প্রক্রিয়ায়।
প্রতিটি ফলে বিশেষ মালিশ আর সেগুলোকে নিয়মিত গান ‘শোনানো’ হয়েছে মালয়েশিয়ার একটি জাপানি বাঙ্গির খামারে।
মালয়েশিয়ার মাটিতে উৎপাদিত বাঙ্গিতে একই গুণমান ও পুষ্টি উপাদান অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করেছে মালিশ আর গান শোনানোর পদ্ধতি, দাবি কৃষকদের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকের বেশি সময় ধরে পরীক্ষা চালানোর পর সাফল্যের মুখ দেখেছে মালয়েশিয়ার কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মোনো প্রিমিয়াম মেলন।
প্রতিষ্ঠানটির কৃষকরা বাগানের প্রতিটি বাঙ্গিকে গাছে থাকা অবস্থায় নিয়মিত নরম কাপড় দিয়ে মুছতেন ও ডলতেন বা বলা যায়- মালিশ করতেন; ঠিক যেভাবে আরামের জন্য কিংবা শরীর ও মনের ক্লান্তি কাটাতে ‘বডি ম্যাসাজ’ করান অনেক মানুষ।
‘তামা-ফুকি’ নামে পরিচিত এ পদ্ধতিতে ফলের স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ে বলে জানান কৃষকরা।
অন্যদিকে প্রতিটি ফলের বৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে স্পিকারের মাধ্যমে তাদের আশপাশে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দেয়া হতো নিয়ম করে।
মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় অবস্থিত মোনো প্রিমিয়াম মেলন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেহ শেং সিয়াং বলেন, ‘আমাদের বাগানের প্রতিটি জাপানিজ মাস্কমেলনকে একেকটি শৈল্পিক নিদর্শন বললেও ভুল হবে না।’
কারণ গত শতাব্দী থেকেই জাপানের কৃষকরা বিশেষ জাতের এই বাঙ্গি উৎপাদনের পুরো পদ্ধতিকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। দারুণ স্বাদ ও পুষ্টির পাশাপাশি নিখুঁত আকৃতির জন্য বিখ্যাত এই ফল জাপানের বিলাসবহুল পণ্যের তালিকায় অন্যতম, যা বিক্রি হয় কেবল দামি ব্র্যান্ড শপে।
জাপানের আরামদায়ক নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে উৎপাদিত এ ফলের গুণমান অক্ষুণ্ন রাখতে মালয়েশিয়ার উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে কৃষকদের।
সেহ জানান, জাপানে উৎপাদিত ১০টির বেশি প্রজাতির বাঙ্গি মালয়েশিয়ায় উৎপাদনের চেষ্টা করেছেন তারা। অসংখ্য প্রচেষ্টার পর মালয়েশিয়ার আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো উপযুক্ত ধরনটি খুঁজে পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত জাপানিজ মাস্কমেলনের শতভাগ পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করেছি আমরা। এ জন্য ঘড়ির কাঁটা ধরে এতে পানি ও সার দেয়া হয়েছে কঠোর নিয়ম মেনে।’
জাপান থেকেই বিশেষ প্রজাতির এই বাঙ্গির বীজ কিনে আনা হয়েছে। এরপর জাপানে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয় মালয়েশিয়ার কৃষকদের। সেখানে তারা বাঙ্গি চাষের সব পদ্ধতি শিখে এসে মালয়েশিয়ায় শুরু করেন ফলটির উৎপাদন।
কিন্তু সাফল্যের দেখা পেতে নিজেদের মেধা ও মস্তিষ্ককেও কাজে লাগাতে হয়েছে তাদের। অবিকল জাপানিজ মাস্কমেলন মালয়েশিয়ায় উৎপাদন তারা করতে পেরেছে অসংখ্য ভুলত্রুটির পর।
পুরো প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল বাঙ্গির গাছে পুষ্টি সরবরাহের সঠিক অনুপাত খুঁজে বের করা।
সব বাধা পেরিয়ে লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে মোনো। বাছাইকৃত ২০০টি বাঙ্গি বিক্রিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটির দাম ৪০ ডলারের বেশি, মালয়েশিয়ার মুদ্রায় ১৬৮ রিঙ্গিত।
জাপানে এ ধরনের একেকটি ফলের দাম অবশ্য এর তিন থেকে পাঁচ গুণেরও বেশি। আর নিলামে তোলা হলে একেকটি ফলের দাম ২২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ারও নজির রয়েছে দেশটিতে।