বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মলমূত্রে বাঁচতে পারে পরিবেশ

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:১০

চিমোম্বো বলেন, ‘এই পদ্ধতি খুবই পরিচ্ছন্ন ও কার্যকরী। প্ল্যান্টটি বসানোর সময় আমরা ভেবেছিলাম, রান্নাঘরে হয়তো দুর্গন্ধ আসবে। কিন্তু এই গ্যাস একেবারেই গন্ধহীন। রান্না করতেও আগের চেয়ে কম সময় লাগে।’

আফ্রিকার দেশ মালাউইর মুলাঞ্জি কারাগারের বন্দি ফেলিক্স চিমোম্বো। তিনি ঘুম থেকে ওঠেন প্রতিদিন ভোরে। কয়েকজন সহবন্দিকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৭টার মধ্যে প্রায় ২০০ বন্দির খাবার তৈরি করতে হয় তাকে। এর জন্য রান্নাঘরে দিনে প্রায় দুই ঘনমিটার কাঠ পোড়াতে হতো তাদের। যার গন্ধ ও ধোঁয়া থাকত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে।

ফেলিক্স চিমোম্বো ও তার সহবন্দিদের জন্য এক অদ্ভূত বিকল্প হাজির হয়েছে কয়েক মাস আগে। রান্নার জন্য তাদের আর খুব বেশি কাঠ পোড়াতে হয় না। ফলে ধোঁয়া ও গন্ধও হয় না। গত বছরের ডিসেম্বরে কারাগারটিতে একটি জৈবগ্যাস ডাইজেস্টার বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরিবেশবান্ধব এই জ্বালানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কারাবন্দিদের মলমূত্র!

প্লাস্টিকের একটি ডাইজেস্টারে বন্দিদের মলমূত্র পাঠানো হয়। সেখানে মানববর্জ্য ভেঙে মিথেন গ্যাসে পরিণত করে ব্যাকটেরিয়া। ওই গ্যাস আলাদা পাইপে যায় রান্নাঘরে। এই উদ্যোগের পর কারাগারটির বন্দিদের জীবন কিছুটা সহজ হয়ে উঠেছে। ডাইজেস্টারের গ্যাসেই রান্নার কাজ হওয়ায় জ্বালানি কাঠের জন্য আর গাছ কাটতে যেতে হচ্ছে না তাদের।

চিমোম্বো বলেন, ‘এই পদ্ধতি খুবই পরিচ্ছন্ন ও কার্যকরী। প্ল্যান্টটি বসানোর সময় আমরা ভেবেছিলাম, রান্নাঘরে হয়তো দুর্গন্ধ আসবে। কিন্তু এই গ্যাস একেবারেই গন্ধহীন। রান্না করতেও আগের চেয়ে কম সময় লাগে।’

জৈবগ্যাস প্ল্যান্টটি বসানোয় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পারপজের কর্মকর্তা এসথার মিউসো বলেন, ‘প্ল্যান্টটি বসানোর পর থেকে প্রায়ই সুয়ারেজ লাইন আটকে যাওয়ার ঘটনা কমে এসেছে। এর ফলে আগের চেয়ে কিছু আরামেও থাকতেন পারছেন বন্দিরা।’

কারাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্টটি বসানোয় প্রতি মাসে জ্বালানি কাঠের চাহিদা ৬০ ঘনমিটার থেকে কমে ২৯ ঘনমিটার হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ ডলার সমমূল্যের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কাঠের খরচ কমেছে।

তারা জানান, করোনা মহামারিতে অনেককে মুক্তি দেয়ায় কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমেছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানির পুরোটাই জৈবগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরোদমে চালু হলে প্ল্যান্টটি দিনে ২৩০ ঘনমিটার বর্জ্য বায়োগ্যাসে রূপান্তর করতে পারবে। কারা কর্মকর্তারা আশা করছেন, এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কাঠের পেছনে খরচ অন্তত ৮০ শতাংশ কমে আসবে।বায়োগ্যাস ডাইজেস্টারটি থেকে আসা সার ব্যবহার করা হচ্ছে কারাগারের সবজি বাগানে। এতে বেড়েছে উৎপাদন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দিদের পুষ্টিচাহিদা মেটাতেও ভূমিকা রাখছে প্ল্যান্টটি। এতে বিশেষভাবে উপকার পাচ্ছেন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত বন্দিরা।মানব মলমূত্রে চলা জৈবগ্যাস ডাইজেস্টার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। মালাউইর মতো দেশে এটি বনভূমি রক্ষায়ও ভূমিকা রাখতে পারে। আফ্রিকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশটিতে প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এর জন্য নির্বিচারে গাছ কাটায় গত ৩০ বছরে দেশটির বনভূমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন থেকে কমে ২ দশমিক ২৪ মিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে।

মুলাঞ্জে কারাগারের এই উদ্যোগ ছোট হলেও এটি মালাওয়ির বাকি বনভূমি রক্ষায় পথ দেখাতে পারে। দেশটির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালক তায়োঙ্গা বালে বলেন, ‘আমরা যে মলমূত্র ত্যাগ করি, সেটি জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হতে পারে। অথচ এর বড় অংশই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে দূষণ ঘটায়।’তিনি বলেন, ‘জৈবগ্যাস ও সৌরশক্তির মতো প্রাকৃতিক জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।’

এ বিভাগের আরো খবর