১৭২ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা একটি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও রেনফরেস্টে। এমনই এক ঘোষণা দিয়েছে পাখি সংরক্ষণে একটি সংগঠন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পাখি সংরক্ষণে চ্যারিটি সংগঠন ‘ওরিয়েন্টাল বার্ড ক্লাব’ গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
‘ব্ল্যাক ব্রাউড বাবলার’ নামের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম মালাকোচিনকলা পার্সপিসিলাতা; এটিকে বিশেষজ্ঞরা ইন্দোনেশিয়ান পাখি বিজ্ঞানের সবচেয়ে রহস্যময় পাখি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
ওয়েন্টাল বার্ড ক্লাবের দাবি, সম্প্রতি এই প্রজাতির পাখি দেখতে পেয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ কালিমান্তান রাজ্যের স্থানীয় দুই বাসিন্দা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মুহাম্মাদ সুরান্তো ও মুহাম্মাদ রিজকি ফাউজান নামে দুই স্থানীয় বাসিন্দা তাদের আবাসস্থলের অদূরে বন্য সামগ্রী জড়ো করছিলেন। হঠাৎ একটি অপরিচিত পাখির প্রজাতি দেখে থমকে যান তারা। পাখিটি ধরার পর কয়েকটি ছবি তোলেন, এরপর ছেড়ে দেন।
ছবিগুলো নিয়ে দুইজন পাখি গবেষণায় জড়িত স্থানীয় দুটি সংগঠন ‘বিডব্লিউ গ্যালিটাস’ ও ‘বার্ডপ্যাকার’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পাখিটি প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘ব্ল্যাক ব্রাউড বাবলার’ হতে পারে বলে ধারণা করে সংগঠন দুটি। এরপর ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের পাখিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পাখিটি বিলুপ্ত সেই ‘ব্ল্যাক ব্রাউড বাবলার’।
পাখিটি ধরে ছবি তোলা রিজকি ফাউজান বলেন, ‘এটা জেনে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল, আমরা এমন একটি পাখির প্রজাতি পেয়েছিলাম, যেটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
‘আমরা যখন পেয়েছিলাম তখন ভাবিনি যে, এটা আদৌ বিশেষ কিছু হতে পারে। আমরা ভেবেছিলাম, এটা কেবল আগে কখনও দেখিনি এমন একটি পাখির প্রজাতি হতে পারে।’
সুরেলা ‘ব্ল্যাক ব্রাউড বাবলার’ পাখিটি বর্ণনা পাওয়া যায় ১৮৫০ সালে রচিত বিখ্যাত ফরাসি প্রাণিবিদ ও পাখিবিদ চার্লস লুসিয়ান বোনাপার্ট রচিত প্রাণীর নমুনা নথিতে। এটি তিনি লিখেছিলেন ১৮৪০ এর দশকে ইস্ট ইন্ডিজ অঞ্চলে জার্মান ভূতাত্ত্বিক ও প্রকৃতিবিদ কার্ল এ.এল.এম শোয়ানারের সফরের ওপর ভিত্তি করে।
এরপর পাখিটি নিয়ে কোনো নমুনা বা সন্ধানের খবর পাওয়া যায়নি। পাখিটির উৎসস্থলের বিষয়টি এখন পর্যন্ত রহস্যঘেরা। এমনকি যে দ্বীপে এই পাখিটির সন্ধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল নমুনা পুস্তকে, সেই দ্বীপটির অবস্থান নিয়েও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।
তবে দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার জাভা অঞ্চলেই হতে পারে জোর ধারণা পাখিবিজ্ঞানীদের। ১৮৯৫ সালে সুইস পাখিবিদ জোহান বাটিকোফার জানিয়েছিলেন, অন্বেষণ অভিযানের সময় জার্মান প্রকৃতিবিদ শোয়ানার বোর্নিওতেই ছিলেন।
পাখিটির পুনরায় দেখা পাওয়া নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটির মূল লেখক ইন্দোনেশিয়ান পাখি সংরক্ষণ সংগঠন বার্ডপেকারের পানজি গুস্তি আকবর। তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রোমাঞ্চকর এই আবিষ্কারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ব্ল্যাক ব্রাউড বাবলার এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব বোর্নিও থেকে। এর ফলে এই পাখিটির উৎপত্তি নিয়ে শতাব্দী দীর্ঘ বিভ্রান্তির অবসান হলো।’