‘অত্যাচার’ থেকে রক্ষা পেতে ‘বিষ প্রয়োগ’ বা ‘অন্য কোনো উপায়ে’ বিড়াল মেরে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমর আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এই শিক্ষক তোপখানা রোডের গ্রিন ইস্টার্ন নামের একটা আবাসিক ভবনে থাকেন। ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের সংগঠন গ্রিন ইস্টার্ন ফ্ল্যাট মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক তিনি।
গত ১৩ জানুয়ারি সমিতির পক্ষে তার সই করা এক নোটিশে ফ্ল্যাট মালিকদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, হাউজের ভেতরে সিঁড়ির মাদুরের মধ্যে বিড়াল প্রতিনিয়ত মল ত্যাগ করছে। এতে মাদুর নষ্ট হচ্ছে এবং সিঁড়ি ও দেয়ালের গায়ে মল লেগে ভবনের রং ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বিড়াল ময়লার বালতি, ভবনের দেয়ালে লাফ দিয়ে ময়লা ফেলে সিঁড়ি ও দেয়াল প্রায় সময়ই নোংরা করছে।’
ভবনের মধ্যে বিড়াল লালন-পালন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে নোটিশে বলা হয়, ‘বিড়ালের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাউজ কর্তৃপক্ষ মালিকানাবিহীন বিড়াল বিষ প্রয়োগ বা অন্য কোনো উপায়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করবে। যদি অসাবধানতাবশত কারও গৃহপালিত বিড়াল মারা যায়, সেজন্য হাউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ওমর আহমেদ শুক্রবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে, ফ্ল্যাটের বিড়ালের জন্য আশপাশের বিড়ালও এই ভবনে আসে। মারামারি করে। পরিবেশ নোংরা করে। এ জন্য এই নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
বিষ প্রয়োগ করে বিড়াল হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট মালিকদের সতর্ক করতেই এটা বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু না।’
তার ওই নোটিশের সমালোচনা করে কুকুর-বিড়ালসহ অবহেলিত প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রবিনহুড, দ্য অ্যানিমাল রেসকিউয়ার’-এর প্রতিষ্ঠাতা আফজাল খান বলেন, ‘আইন অনুসারে এটা অপরাধ, বিষয়টি অমানবিকও। যারা এ ধরনের নোটিশ দিয়েছেন, তারা বোধহয় বিষয়টি জানেন না।’
দুটি মা কুকুর ও তাদের ১৪টি ছানাকে বস্তায় পুরে মাটিচাপা দিয়ে হত্যার দায়ে ২০১৮ সালের মে মাসে ১৯২০ সালের ‘প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনের’ ৭ ধারা অনুসারে ঢাকা মহানগর আদালতের হাকিম আহসান হাবীব ছিদ্দিক মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা করেছিলেন।
আগের আইনটি রদ করে ২০১৯ সালে নতুন করে ‘প্রাণিকল্যাণ আইন’ নামে নতুন একটি আইন প্রণীত হয়। নতুন আইনে মালিকবিহীন কোনো প্রাণী হত্যা করলে ছয় মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়।
গত বছরের মাঝামাঝি রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি বক্তব্য ঘিরে বেশ আলোচনা হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখিসহ পাল্টাপাল্টি মানববন্ধনও করেন পক্ষ-বিপক্ষের ব্যক্তিরা।
এক পক্ষের দাবি ছিল, রাস্তায় কুকুরের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ, সময়–অসময়ে কুকুর মানুষকে তাড়া করে। শহর মানুষের জন্য, কুকুরদের জন্য নয়।
অন্য পক্ষের দাবি, শহর থেকে কুকুর তাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা শুধু অমানবিকই নয়, বেআইনিও। সড়কে, দেয়ালে পথকুকুরদের (বেওয়ারিশ কুকুর) ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ‘প্রাণবিক ঢাকা’ গড়ে তোলার দাবিও জানিয়েছিলেন তারা।