অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বাসিন্দা কেভিন সেলি বার্ড। নিজের বাড়ির পেছনে ছোট্ট একটি বাগান রয়েছে তার। ডিসেম্বরের এক সকালে গাছের পরিচর্যা করতে যেয়ে একটি কবুতর দেখতে পান তিনি।
কবুতরটিকে দেখে দুর্বল মনে হয় কেভিনের। তিনি এক টুকরা বিস্কুট ভেঙে তাকে খেতে দেন। কিছুটা শক্তি ফেরার পরেও সে চলে না যেয়ে কেভিনের বাগানেই থাকতে শুরু করে।
কেভিন যে এলাকায় থাকেন সেখানে কবুতর খুব একটা দেখা যায় না। বাগানের কবুতরটি পায়ে বাঁধা সুতা দেখে কেভিন বুঝতে পারেন এটি অন্য কোনো এলাকা থেকে এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেয়ার পর কেভিন জানতে পারেন, কবুতরটির নাম জো। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামে তার নাম রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানতে পারেন, ১৩ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে জো!
২৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগন প্রদেশে কবুতরদের ওড়ার একটি প্রতিযোগিতা ছিল। সেখান থেকেই হারিয়ে যায় জো।
গণমাধ্যমকে কেভিন জানান, জোয়ের পরিচয় নিশ্চিত করেছে আমেরিকান রেসিং পিজন ইউনিয়ন। আলাবামার মন্টেগোমারির এক ব্যক্তির নামে তার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
২৬ ডিসেম্বর নিজের বাগানে জোয়ের দেখা পান কেভিন।
কেভিন জানান, চেষ্টা করেও মালিকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানান কেভিন। এরপরে যা ঘটতে শুরু করে সেটি নিষ্ঠুরতাই মনে করতে পারেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার কেভিনকে ডেকে পাঠায় মেলবোর্নের কোয়ারেন্টিন কর্তৃপক্ষ। তারা জোকে ধরার পরামর্শ দেয় এবং জানায় রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকায় জোকে মেরে ফেলতে হতে পারে।
এতে অস্বীকৃতি জানান কেভিন। এখন কর্তৃপক্ষ ভাবছে পেশাদার কাউকে দিয়ে জোকে ধরা যায় কি না।
প্রাণী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা কৃষি বিভাগ বলছে, ‘কবুতরটির অস্ট্রেলিয়ায় থাকার কোনো অনুমতি নেই। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পাখিদের হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় কবুতর পালন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্রাড টার্নার বলেন, ‘আমেরিকা থেকে আসা কবুতরটি রোগ ছড়াতে পারে এমন ভয় খুব স্বাভাবিক!’
জোর বেঁচে থাকার অধিকার নেই এমন মতের সঙ্গেও একমত বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০১৫ সালে হলিউড অভিনেতা জনি ডেপের দুটি কুকুরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। পরে অনুমতি ছাড়াই দেশটিতে আনা কুকুর দুটিকে বিশেষ প্লেনে করে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন জনি ডেপ ও তার সাবেক স্ত্রী আম্বার হার্ড।
কেভিন ভয়েস অফ অস্ট্রেলিয়া নিউজকে জানান, প্রতিদিন বাগানে একটি হাঁসের পাশে বসে থাকে জো। প্রথম দিন থেকেই তাকে কবুতরের খাদ্য দিচ্ছেন।
কেভিন বলেন, ‘আমি যেহেতু খাবার আর পানি দিচ্ছি জোকে, সে ধরে নিয়েছে এটিই তার বাড়ি।‘
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডানায় ভর করে নয়। কোনো নৌযানে চড়েই প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে জো।
এর আগে ১৯৩১ সালে একটি কবুতর ১১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফান্সে থেকে ভিয়েতনামে পৌঁছেছিল বলে জানিয়েছে পিজনপিডিয়া ডট কম।