চীনের রহস্যময় নারী ফ্যাং ফ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন এ কালের ‘মাতা হারি’ হিসেবে। বলা হচ্ছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ডাচ নৃত্যশিল্পী যেভাবে জার্মানির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, ফ্যাং ফ্যাংও ঠিক সেভাবেই চীনে পাচার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবেদনশীল তথ্য।
তবে মাতা হারির মতো তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি, পরিচয় ফাঁস হওয়ার আলামত পাওয়া মাত্র তিনি উধাও হয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ধারণা করা হচ্ছে চীনে ফিরে গেছেন ফ্যাং ফ্যাং।
তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক পোস্ট।
এতে বলা হয়েছে, ফ্যাং ফ্যাং যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। তিনি অন্তত দুজন মেয়রের সঙ্গে যৌনসম্পর্কেও জড়িয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরুর তোড়জোড়ের সময়েই ২০১৫ সালে উধাও হন ফ্যাং ফ্যাং।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে একজন অভিবাসী শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ফ্যাং ফ্যাং। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কার্যক্রমে সক্রিয় হন। পরে সেখান থেকেই স্থানীয় রাজনৈতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) গোয়েন্দারা বলছেন, অন্তত দুজন মেয়রের সঙ্গে তিন বছর ধরে ফ্যাংয়ের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে ওহিও মেয়রের সঙ্গে গাড়ির ভেতরে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও তাদের হাতে এসেছে।
এফবিআই পরিচয় প্রকাশ করেনি এমন আরেকজন মেয়র ওইয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে ফ্যাংকে নিজের প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
২০১৪ সালে নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিনিধি এরিক সোয়ালওয়েলের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। একই বছর অঙ্গরাজ্যটির ডেমোক্র্যাট নেতা রো খান্নার প্রচারের কাজও করেন ফ্যাং। টুলসি গ্যাবার্ড নামের আরেক রাজনীতিকের জন্যও তহবিল সংগ্রহের কাজ করেন তিনি।
তবে তিন রাজনীতিকই দাবি করেছেন, ফ্যাংয়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের অভিযোগ, চীনের গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছিলেন ফ্যাং। তবে খুব গোপনীয় কোনো তথ্য তিনি চুরি করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদের নিয়োগে প্রভাব খাটিয়েছেন ফ্যাং। এরা চীনের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।
এফবিআই বলছে, ফ্যাং রাজনীতিকদের অভ্যাস, সময়সূচি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মকাণ্ড, এমনকি তাদের সম্পর্কে যেসব গুজব প্রচলিত আছে সেগুলো সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।
তবে তিনি কখনোই নিজের সম্পর্কে বা পরিবারের সম্পর্কে তেমন কিছু জানাননি।
চীনা দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত একজন গুপ্তচরের ওপরে নজরদারি করতে গিয়ে ফ্যাংয়ের ব্যাপারে জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা।
এরপরেই রাজনীতিকদের তার ব্যাপারে সতর্ক করতে শুরু করে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা পিছু নিয়েছেন টের পেয়ে ২০১৫ সালে উধাও হন ফ্যাং।